ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০২ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৯ ১৪৩১

রোজা কখন, কীভাবে ফরজ হলো

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:২৩, ১১ জুন ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রোজা কখন, কীভাবে ফরজ হলো

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন : দেখতে দেখতে চলে গেলে চতুর্থ রোজা। আজ (শনিবার) পঞ্চম রোজা অর্থাৎ রহমতের পঞ্চম দিন।

   

আমরা মুসলমানগণ মাহে রমজানে রোজা রাখি, এবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে সিয়াম সাধনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করি, কিন্তু অনেকেই জানি না মাহে রমজানের এই রোজা কখন, কেন, কিভাবে ফরজ করা হয়েছে। আজকে এ বিষয়ে যতদূর সম্ভব আমরা জানার চেষ্টা করবো।

 

রোজা ফরজ হবার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা গেছে, ইসলামের অনেক ফরজ ও ওয়াজিব কাজ কোনো না কোন আল্লাহর প্রিয় বান্দা তথা নবী-রাসূল কিংবা তাঁদের পরিবারের আলোচিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে। তাঁদের স্মরণার্থে উম্মতদের জন্য অপরিহার্য্য করা হয়েছে।

 

যেমন হজের সময় সাফা ও মারওয়ার মাঝখানে হাজিদের ‘সাঈ’ (দৌড়ানো) করার যে বিধান তা হযরত ইবরাহিমের (আ.) সহধর্মীনি হযরত হাজেরার (রা.) স্মৃতির স্মরণার্থে। তিনি তাঁর কলিজার টুকরো হযরত ইসমাঈলের (আ.) জন্য পানি খুঁজতে গিয়ে সাফা ও মারওয়ার মাঝখানে সাতবার দৌঁড়েছেন।

 

হযরত হাজেরার (রা.) এই কাজ আল্লাহর কাছে বেশি পছন্দ হয়েছে। শেষ পর্যন্ত হযরত হাজেরার (রা.) এ কাজকে স্থায়ী করে দেন মহান রাব্বুল আলামীন। তাঁর এ কাজকে স্মরণীয় করে রাখতে সাফা ও মারওয়ার মাঝখানে হাজিদের সাতবার প্রদক্ষিণ করা ওয়াজিব করে দেওয়া হয়েছে।

 

হযরত হাজেরার (রা.) মতোই আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর একটি স্মৃতি স্মরণীয় করে রাখতে মাহে রমজানের রোজা মুসলমানদের ওপর ফরজ করা হয়েছে।

 

রমজানের এমন দিনে বেশ কিছুদিন রাহমাতুল্লিল আলামীন হযরত মোহাম্মদ (সা.) হেরা পর্বতের গুহায় অতিবাহিত করেছিলেন। তখন হুজুর (সা.) দিনের বেলায় পানাহার করতেন না, আর রাতে আল্লাহ পাকের জিকিরে মশগুল থাকতেন। প্রিয় নবীর এই এবাদত বন্দেগী আল্লাহর কাছে এত পছন্দনীয় হয়, দিনগুলি স্মরণীয় করে রাখতে এবং রাসূলেরিএই কাজকে উম্মতে মোহাম্মদীর মাঝে স্থায়ী করতে রোজা ফরজ করে দেওয়া হয়।

 

রোজা রাখা প্রিয়নবী (সা.) এর পছন্দের এবাদত ছিল। যখন রমজানের রোজা ফরজ হয়নি তখনও তিনি আশুরার দিন রোজা রাখতেন এবং সাহাবিদের (রা.) রোজা রাখার আদেশ করতেন। পরে যখন রমজানের রোজা ফরজ করে দেওয়া হয় তখন তিনি ও তাঁর সাহাবারা আশূরার রোজা রাখা ছেড়ে দেন।

 

এ প্রসঙ্গে সাহাবি হযরত ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) আশূরার দিন রোজা পালন করেছেন এবং এ সিয়ামের জন্য আদেশও দিয়েছেন। পরে যখন রমজানের সিয়াম ফরজ হলো তখন তা ছেড়ে দেওয়া হয় ...। (বুখারী-তৃতীয় খন্ড)

 

আরেক হাদিসে বর্ণনা রয়েছে, হযরত মা আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জাহেলী যুগে কুরাইশগণ আশূরার দিন রোজা রাখতো, রাসূলুল্লাহও (সা.) এই রোজা রাখার নির্দেশ দেন। অবশেষে রমজানের রোজা ফরজ করা হলে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, যার ইচ্ছা আশূরার রোজা রাখবে এবং যার ইচ্ছা সে রোজা (আশূরার) রাখবে না। (বুখারী- ৩য় খন্ড)

 

মহানবী (সা.) এর আগে তার পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণও রোজা রাখতেন। তবে তাদের রোজার ধরণ আমাদের চেয়ে ভিন্ন ছিল। যেমন হযরত আদম (আ.) প্রত্যেক মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ রোজা রাখতেন। (কানযুল ওম্মাল ৮ম খন্ড ২৫৮ পৃষ্ঠা, হাদিস- ২৪১৮৮)

 

একইভাবে হযরত নূহ (আ.) দুই ঈদ ছাড়া সবসময় রোজা রাখতেন। (ইবনে মাজাহ, ২য় খন্ড, ৩৩৩পৃষ্ঠা, হাদিস-১৭১৪)

 

হযরত দাউদ (আ.) একদিন পরপর রোজা রাখতেন। (মুসলিম, ৫৮৪ পৃষ্ঠা,  হাদিস ১১৮৯)

 

হযরত সোলায়মান (আ.) মাসের শুরুত তিন দিন, মাসের মধ্যভাগে তিন দিন, মাসের শেষ ভাগে তিন দিন (মাসে ৯দিন) রোজা রাখতেন। (কানযুল ওম্মাল, ৮ম খন্ড, ৩০৪ পৃষ্ঠা, হাদিস ২৪৬২৪)  

 

হযরত ঈসা (আ.) সবসময় রোজা রাখতেন, কখনও রোজা ছাড়তেন না।

(মুসলিম, ৫৮৪ পৃষ্ঠা, হাদিস ১১৮৯)

 

তাওহিদ ও রিসালাতকে বিশ্বাস করা এবং দ্বীনের সব জরুরি বিষয়ের ওপর ঈমান আনার পর যেভাবে প্রত্যেক মুসলমানের ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ, ঠিক তেমনিভাব রমজান শরীফের রোজাও প্রত্যেক বিবেকসম্পন্ন ও প্রাপ্ত বয়স্ক (নর-নারী) মুসলমানের ওপর ফরজ।

 

রোজা কখন ফরজ করা হয়েছে এ প্রসঙ্গে দুররে মুখতারগ্রন্থে বর্ণনা আছে, দ্বিতীয় হিজরিতে শাবান মাসের ১০ তারিখে রমজানের রোজা ফরজ করা হয়েছে। (দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৩৩০ পৃষ্ঠা)

 

ইসলামে রোজার গুরুত্ব কতখানি তা বলে শেষ করা যাবে না। আল্লাহকে পাওয়ার বড় মাধ্যম এই রমজানের রোজা। রোজা রাখার মাধ্যমে আল্লাহর দিদার (সাক্ষাত) লাভ হবে।

 

তাই আসুন, আমরা নিজেরা তো রোজা রাখবই, সম্ভব হলে নিজের ছেলে মেয়েদেরও প্রাপ্ত বয়স্ক হবার আগ থেকেই রোজা রাখতে অভ্যস্ত করে তুলি। যাতে সাবালক হলে তারা কষ্ট ছাড়াই রোজা রাখতে পারে।

 

এ ব্যাপারে সন্মানিত ফকীহগণের অভিমত এমন, সন্তানের বয়স যখন দশ বছর হয়ে যায় এবং তার মধ্যে রোজা রাখার শক্তি হয়, তখন তাকে দিয়ে রোজা রাখাবেন, আর যখন রোজা রাখার পূর্ণ শক্তি হয় তখন যদি সে রোজা না রাখে তবে মারধর করে রাখাবেন। তবে যদি রোজা রেখে ভেঙ্গে ফেলে, তাহলে কাযার নির্দেশ দেবেন না, কিন্তু নামাজ শুরু করে ভেঙ্গে ফেললে তা পুনরায় পড়াবেন। (রুদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৩৮৫ পৃষ্ঠা)

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ জুন ২০১৬/নঈমুদ্দীন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়