আয়কর রিটার্ন না দিলে যে সেবাগুলো মিলবে না
বিশেষ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম
আয়কর হচ্ছে ব্যক্তি বা সত্তার আয় বা লভ্যাংশের উপর প্রদেয় কর। চলতি অর্থ বছরে আয়কর রিটার্ন না দিলে সরকারি ৩৮ ধরনের সেবা মিলবে না বলে জানানো হয়েছে।
প্রতি অর্থবছরে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হয়। চলতি অর্থবছরের গত ১ জুলাই থেকে ব্যক্তি শ্রেণির করদাতারা বার্ষিক আয়কর রিটার্ন দিচ্ছেন। ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ৫ মাস আয়কর রিটার্ন দেওয়া যাবে। প্রতি বছর বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের রিটার্ন দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন আনা হয়। এবারও কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। যেমন ৩৮ ধরনের সেবায় রিটার্ন বাধ্যতামূলক, বিনিয়োগজনিত কর রেয়াত হ্রাস, রিটার্ন জমায় দণ্ড শিথিল করা, আবার বকেয়া থাকলে পরিষেবা-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা ইত্যাদি। আবার প্রত্যাশা থাকা সত্ত্বেও করমুক্ত আয়সীমা বাড়েনি। চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের বাজেটে আয়কর সংক্রান্ত যে সব পরিবর্তন আনা হয়েছে:
করমুক্ত আয়সীমা বাড়েনি
করমুক্ত আয়সীমা আগের মতোই বার্ষিক তিন লাখ টাকা রয়েছে। ফলে যাদের করযোগ্য আয় তিন লাখ টাকার বেশি থাকবে তাদের কর দিতেই হবে। মনে রাখতে হবে, সাধারণ করদাতাদের জন্য করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ টাকা। এ ছাড়া নারী, ৬৫ বছরের বেশি বয়সী প্রবীণ করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা। আর প্রতিবন্ধী করদাতাদের সাড়ে চার লাখ টাকা, গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতাদের বার্ষিক আয়ের পৌনে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত। প্রতিবন্ধী সন্তানের মা-বাবা বা আইনি অভিভাবকেরা তাদের আয়ে করমুক্তসীমায় আরও ৫০ হাজার টাকা ছাড় পাবেন। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের করমুক্ত আয়সীমা করা হয়েছে সাড়ে তিন লাখ টাকা।
রিটার্ন জমা না দিলে সেবা মিলবে না
প্রস্তাবিত বাজেটে ৩৮ ধরনের সেবা পেতে হলে রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। তা না হলে যেসব প্রতিষ্ঠান এই সেবা দেবে, তাদের ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হবে। যেমন পাঁচ লাখ টাকার বেশি ব্যাংকঋণ পাওয়া, পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কেনা, ক্রেডিট ব্যবহার, অনলাইনে বেচাকেনার ব্যবসা, রাইড শেয়ারিংয়ে মোটরগাড়ি দেওয়া, এমনকি সন্তানকে ইংরেজি সংস্করণে (ইংলিশ ভার্সন) পড়াশোনা করালেও রিটার্ন জমা দিতে হবে। তাই ভবিষ্যতে এসব সেবা পেতে এবার রিটার্ন দিতেই হবে। এ ছাড়া গাড়ির মালিক, অভিজাত ক্লাবের সদস্য, কোম্পানির পরিচালক, বণিক সংগঠনের সদস্য, পৌর থেকে জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত প্রার্থী হলেও রিটার্ন দিতে হবে।
বিনিয়োগের আগে যা চিন্তা করতে হবে
গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত একজন ব্যক্তি তার আয়ের কত অংশ বিনিয়োগ করেছেন, তা হিসাব করে রাখতে হবে। এবার কর রেয়াত পাওয়ার ক্ষেত্রে বিনিয়োগ সুবিধা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, বার্ষিক আয়ের ২০ শতাংশ বিনিয়োগ করতে পারবেন। আর ধনী-গরিব সবাই ১৫ শতাংশ কর রেয়াত পাবেন। রিটার্ন তৈরির সময় বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।
অতীতের জরিমানা মওকুফ
যিনি কয়েক বছর আগে জরুরি কাজে কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) নিয়েছেন কিন্তু প্রতিবছর রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক হলেও কোনো বারই রিটার্ন দেননি, এবার এমন টিআইএনধারীর জন্য বিরাট সুযোগ এসেছে। যারা অতীতে টিআইএন নিয়ে রিটার্ন দেননি, তারা এবার রিটার্ন দিলে কোনো জরিমানা গুনতে হবে না। সবাইকে সাধারণ ক্ষমার আওতায় আনা হয়েছে।
/হাসনাত/