ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৯ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

কে আপনার বন্ধু, চেনেন? 

দেলোয়ার হোসেন রনি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:০৬, ২৮ নভেম্বর ২০২১   আপডেট: ১৭:০৮, ২৮ নভেম্বর ২০২১
কে আপনার বন্ধু, চেনেন? 

বন্ধন থেকে বন্ধুত্ব। মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক। আত্মার শক্তিশালী টান। জীবনে ব্যর্থতা-সফলতা অনেকটাই নির্ভর করে একজন খাঁটি বন্ধুর ওপর। ভালো বন্ধু আজীবনের সম্পদ। অনেকেই স্বচ্ছ নদীর পানির পাশে থেকেও ময়লা ডোবায় গা ভাসান। প্রকৃত বন্ধু চিনতে ভুল করেন। এই ভুলটাই একসময় জীবনের কাল হয়ে দাঁড়ায়।  

জীবনে ভালো আর মন্দ দু’ধরনের বন্ধু থাকবে এটাই স্বাভাবিক। অনেকেই বন্ধুত্বের মর্ম বোঝেন না, বুঝতে চান না, আবার অনেকে বুঝতে পারেন না। এমন বন্ধু মানুষের কল্যাণের চেয়ে অকল্যাণ বেশি করে থাকেন। এজন্য বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ।

আরো পড়ুন:

খাটি ‘বন্ধুত্ব’কে আয়নার সাথে তুলনা করা যায়। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজে হাসলে যেমন আয়নাটিও হাসে, কাঁদলে যেমন আয়নাটিও কাঁদে বন্ধুত্ব তেমনই হওয়া উচিৎ। আবার বলা যায় ‘বন্ধুত্ব’ হলো হাত আর চোখের মতো। হাত ব্যথা পেলে চোখ দিয়ে পানি ঝরে পড়ে। আবার চোখ দিয়ে পানি ঝরে পড়লে, তখন সেই ব্যথায় ব্যথাতুর হাতটি চোখের পানি মুছে দিতে ব্যস্ত হয়ে যায়। সুতরাং ব্যথা আর চোখের পানির সম্পর্ক যেমন ঘনিষ্ঠ, তেমনি বন্ধুত্বের বন্ধনও হওয়া উচিৎ একই সুতোয় গাঁথা।

বন্ধু নির্বাচনে অবশ্যই সচেতন হওয়া জরুরি। হুট করে ‘উড়ে এসে জুড়ে বসা’ কাউকে নিজের জীবনের সেরা বন্ধু বানিয়ে নিলেন! ব্যাস, মনের অজান্তেই জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটা করে নিলেন। প্রবাদে আছে, ‘সৎ  সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ’ অর্থাৎ ভালো বন্ধুর সাথে মিশলে আপনি ভালো কিছু শিখতে পারবেন। আপনি যদি কোনো নিচু মানসিকতা সম্পন্ন মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেন, আপনার ভেতরের ভালো মানসিকতাকে সে হত্যা করে আপনাকে ভিন্নরূপে আবির্ভাব করতে চাইবে। এমন লোকদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা ঠিক না, যে লোকগুলো নিরীহ মানুষকে সামান্য কারণে আঘাত করে দাপট দেখায় কিংবা নিজের স্বার্থের কারণে বন্ধুত্বের অসম্মান করেন, কোনো বিষয়ের সঠিক তথ্য না জেনে বন্ধুত্বের মধ্যে ফাঁটল ধরাতে চান।

যে বন্ধুর পরামর্শে আপনি মানসিক বা সামাজিক কোনো বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, এরা কখনোই বন্ধু হতে পারে না। এরা আপনার অদৃশ্য শত্রু।  আপনার যে বন্ধুটি কথা দিয়ে কথা রাখতে পারে না এবং কথা রাখতে না পারায় তার মধ্যে কোনো অনুশোচনাবোধও কাজ করে না, মিথ্যা বলে ধরা পড়ার পরও তারা কখনো লজ্জিত হয় না। এমন বন্ধু বিরক্তি ছাড়া আর কিছুই উপহার দিতে পারবে না। স্বার্থে আঘাত হলে অথবা আত্মচাহিদা মেটাতে না পারলে এই জাতীয় বন্ধুরা যেকোনো সময় আপনাকেও আঘাত করতে পারে। যে বন্ধু বিপদের দিনে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়, বিপদ কেটে গেলে আবার কাছে ঘেঁষতে থাকে, এরা হচ্ছে ‘দুধের মাছি’। সুসময়ের বন্ধুরা কখনো প্রকৃত বন্ধু হতে পারে না। কথায় আছে, ‘কাজের বেলায় কাজী, কাজ ফুরালে পাজি’।

আবার অনেক সময় দেখবেন, আপনার বন্ধু নিজের ইচ্ছাকেই সবসময় প্রাধান্য দেয়। আপনার ইচ্ছার কোনো মূল্য নেই। তাকে সবসময় আপনি আগে স্মরণ করেন। সে কখনো আগে থেকে আপনার খোঁজ-খবর নেয় না। অথবা আপনার মান-অভিমান নিয়ে তার কোনো মাথা ব্যাথা নেই। সে তার মতোই থাকে। তাহলে বুঝবেন আপনার ব্যাপারে তার খুব একটা মনোযোগ নেই। কাজেই এমন লোকের সাথে সম্পর্ক রাখা উচিৎ হবে না। এমন বিবেক বর্জিত মানসিকতার বন্ধু আপনার জীবনকে সবসময় অন্ধকারাচ্ছন্ন করে রাখবে।

আপনার সুখে-দুঃখে যদি সমানভাবে আপনার বন্ধু একাত্ম হতে না পারে এবং সবসময় নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকে, তাহলে বুঝবেন আপনার প্রতি তার সহমর্মিতার যথেষ্ট অভাব আছে। বন্ধু বা ভালোবাসার মানুষ নির্বাচনের আগে আপনাকে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। যারা সম্পর্কের মূল্য বোঝবে না, বন্ধুত্বের অর্থ বুঝবে না, তাদের আপনি যদি নিজের জীবনের সাথে জড়িয়ে নেন, তবে সেটা হবে আপনার জীবনের সেরা ভুল। তাই জীবনে বন্ধুত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ, জেনেশুনে তো তিলে তিলে গড়ে তোলা জীবন অনিশ্চিয়তায় ফেলে দিতে পারেন না! 


লেখক: শিক্ষার্থী, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।

/মাহি/

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়