নিরক্ষর মানুষের তালিকায় শীর্ষে ভারত
আনু মোস্তফা || রাইজিংবিডি.কম
ভারতে নিরক্ষর মানুষ
আনু মোস্তফা
ঢাকা, ১ ফেব্রুয়ারি : জনসংখ্যায় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ ভারত। জনাধিক্যের বিচারে চীনের পরেই এর অবস্থান। গত এক দশকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতের অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য হলেও সাক্ষরতার ক্ষেত্রে ভারতের পিছিয়ে পড়া দেশটির সামগ্রিক অগ্রগতিতে বড় ধরনের ক্ষতের সৃষ্টি করেছে।
জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নিরক্ষর মানুষের দেশও ভারত। এই সংখ্যা ইউরোপের মোট জনসংখ্যার প্রায় সমান। ২০১৩-১৪ বছরের এডুকেশন ফর অল গ্লোবাল মনিটরিং শিরোনামের প্রতিবেদনটি থেকে জানা গেছে, ভারতে প্রাপ্তবয়স্ক প্রায় ২৯ কোটি মানুষ এখনো নিরক্ষর। বিশ্বের নিরক্ষর মানুষের ৩৭ শতাংশই ভারতে বসবাস করেন। উন্নয়নশীল ভারতের জন্য নিরক্ষর মানুষের এই জনমিতি বড় উদ্বেগের।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ১৯৯১ সালে ভারতে সাক্ষরতার হার ছিল ৪৭ শতাংশ। ১৯৯৬ সালে দেশটিতে সাক্ষরতার হার বেড়ে দাঁড়ায় ৬৩ শতাংশে। কিন্তু ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এতটাই অনিয়ন্ত্রিত যে সাক্ষরতার হার বাড়লেও দেশটির নিরক্ষর মানুষের সংখ্যায় তেমন কোনো হেরফের হয়নি।
জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের নারীরা এতটাই বৈষম্যের শিকার যে ২০৮০ সালের আগে দেশটির সব নারীদের অক্ষরজ্ঞান হয়ে ওঠার কোনো সম্ভাবনা নেই। প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে, ভারতের নারীরা যেদিন সবাই শিক্ষিত হয়ে উঠবেন, সেদিন দেশটিতে শিশুমৃত্যুর হারেও উন্নতি হবে। শিশুমৃত্যুর হারে এখনো ভারত বিশ্বের কয়েকটি শীর্ষ দেশের তালিকায় রয়েছে। এমনকি উপমহাদেশে বাংলাদেশের অনেক নিচে অবস্থান করছে তারা।
ভারতে এত নিরক্ষর মানুষ কেন? জাতিসংঘের প্রতিবেদনে তাও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এর অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে শিশু শিক্ষার মানের অবনতিকে। শিক্ষার পরিকাঠামো থেকে দক্ষ শিক্ষকের ঘাটতির কারণে ভারতের গ্রামীণ স্কুলগুলোতে পড়ালেখা হয় না। ভারতের এই চিত্রটি খুবই প্রকট। ভারতের ধনী রাজ্যগুলোর তুলনায় অপেক্ষাকৃত গরিব রাজ্যগুলোর শিক্ষার চিত্রটি আরো উদ্বেগের।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, দারিদ্র্যের কারণে ভারতের ২৮টি রাজ্যের মধ্যে উত্তর প্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশে শিশুদের স্কুল ত্যাগের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এই দুটি রাজ্যে পঞ্চম শ্রেণিতে ওঠার আগেই অর্ধেক শিশু স্কুল ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। সামন্ত প্রথার সমাজব্যবস্থায় ভারতের উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, ঝাড়খন্ড, বিহার, ছত্তিশগড় প্রভৃতি রাজ্যে শিশু শিক্ষার পরিস্থিতির সঙ্গে আফ্রিকার অনেক দেশের পরিস্থিতির তুলনা করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশের কাতারে আসতে ভারত নানামুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করলেও শিক্ষার ক্ষেত্রে দেশটির সাফল্য এখনো অনেক সমকাতারের দেশের পেছনে। এ জন্য জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি দেশটির শিশু শিক্ষার মান বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। দারিদ্র্য কমানোর কাজটিও করতে হবে ভারতকে যদি তারা এই বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে চায়।
উল্লেখ্য, বর্তমানে ভারতের জনসংখ্যা ১২৭ কোটির ওপরে। চীনের জনসংখ্যা ১৩৩ কোটি।
রাইজিংবিডি / এএম
রাইজিংবিডি.কম