ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৯ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ম্যারা-ভাপা পিঠা দিয়ে শীতবরণ 

সিয়াম মাহমুদ  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:২১, ১৬ জানুয়ারি ২০২৩  
ম্যারা-ভাপা পিঠা দিয়ে শীতবরণ 

শীতকাল মানে পিঠার সময়। শীতকাল এসেছে আর আপনি কোনো পিঠাই খাননি, তাহলে আপনার শীতের সময়টাই বৃথা। আর গ্রামাঞ্চলে তো শীত বলতে পিঠার উৎসবকেই বোঝায়। 

পিঠা বাংলার চিরায়ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি অংশ। শীতকালের শুরুতেই মাঠের পাকা ধান বাড়িতে এনে সে ধান রোদে শুকিয়ে নতুন আতপ চালের গুড়া থেকে পিঠা বানানো বাঙালির শত বছরের সংস্কৃতি। শীতকালের শুরুতে আমাদের দেশের কৃষকেরা তাদের ঘরে নতুন ধান তুলে থাকে। আর এ খুশিতেই শীতকে তারা পিঠা উৎসবের মধ্যে দিয়ে বরণ করে নেয়। 

শীতকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় পিঠা হলো ম্যারা ও ভাপা পিঠা। গ্রামীণ অঞ্চলে ম্যারা-ভাপা পিঠা দিয়েই যেন শীতকালকে বরণ করে নেওয়া হয়। ভাপা ও ম্যারা পিঠা ছাড়া যেন গ্রামীণ শীতটাই জমে না। তাছাড়া তৈরির উপাদান সহজলভ্য হওয়ায় গ্রামে এ পিঠা বানানো হয়ে থাকে বেশি। 

ম্যারা পিঠা 

ময়দা বা চালের গুঁড়া, লবণ, চিনি, নারকেল দিয়ে বানানো এ পিঠা বেশ জনপ্রিয়। এ পিঠা সিলেট ও বৃহত্তর ময়মনসিংহ এবং পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে বেশ জনপ্রিয়। ম্যারা পিঠা সাধারণত শুঁটকি ভর্তা, গুড় বা মাংস দিয়ে পরিবেশন করা হয়। অনেক সময় কড়াইয়ে তেলে বা তেলছাড়া ভেজে কিংবা আগুনে পুড়িয়ে খাওয়া হয়। তবে, গুড় দিয়ে বানানো মিষ্টি ম্যারা পিঠা পরিবেশন করতে তেমন কিছু যুক্ত করতে হয় না। 

ভাপা পিঠা

ভাপা পিঠা বাংলাদেশ ও ভারতের একটি ঐতিহ্যবাহী পিঠা। এটি প্রধানত চালের গুঁড়া দিয়ে জলীয় বাষ্পের আঁচে তৈরি করা হয়। মিষ্টি করার জন্য দেয়া হয় গুড়। স্বাদ বৃদ্ধির জন্য নারকেলের শাঁস দেয়া হয়। ঐতিহ্যগতভাবে এটি গ্রামীণ নাশতা হিসেবে প্রচলিত। তাছাড়া চালের গুঁড়ার সঙ্গে সদ্য জমি থেকে তোলা সতেজ ধনিয়া পাতা যুক্ত করেও এ পিঠা তৈরি করা হয়। যেটি কচি লাউয়ের তরকারির সঙ্গে খাওয়া যায়। এ খাবারটি অনেকেই পছন্দ করে খেয়ে থাকেন। 

শীতকালে আসলে পিঠা না খেলে যেন চলেই না। তাই অনেকেই শহর ছেড়ে ছুটে চলে নিজের মাতৃ নীড়ে। ঈদের মতো নাড়ির টানে শীতকালেও অনেকেই বাড়ি ফিরেন পরিবারের সঙ্গে শীতের পিঠা উৎসবে সামিল হতে। তাছাড়া পৌষ মাসে (ডিসেম্বর-জানুয়ারি) যখন পিঠা উৎসব চলে, এসময়টিতে শিশুদের স্কুল-কলেজও ছুটি থাকে। ফলে অনেকে সন্তান নিয়ে আনন্দে মেতে উঠতে বাড়ি ছুটেন। পরিবারের সবাই একত্রিত হয়ে গ্রামীণ পরিবেশে পিঠা খাওয়ায় মেতে ওঠা জীবনকে আরও অর্থবহ করে তুলে। 

নতুন চাল, খেজুরের রসের নতুন গুড়ে টইটম্বুর পিঠা বাঙালির শীত উদযাপনকে করে তোলে রঙিন। শীতের সকালে ঘুম থেকে উঠে মায়ের চুলোর কাছে গিয়ে আগুন পোহানোর স্মৃতি আবহমান বাংলার গ্রামীণ ঐতিহ্য। ভোরের কুয়াশা ভেদ করে সকালের সূর্যের দেখা মিলতেই নতুন পিঠার ঘ্রাণে সুবাসিত হয়ে যায় চারদিক। বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে চলে পিঠা উৎসব। সকালের শীতকে উপেক্ষা করে গায়ে চাদর মুড়ি দিয়ে চুলোর কাছে বসে পিঠা খাওয়ার মজাই আলাদা। এসময় প্রকৃতি যেন এক নতুন রুপে ফিরে। 

তাছাড়া ভাপা ও ম্যারা পিঠা ছাড়াও শীতকালে নকশি পিঠা, পাক্কন পিঠা, ফুল পিঠা, তেলের পিঠা, চিতই পিঠা, পিঠাপুলি, দুধ চিতই, পাটিসাপটা, নারিকেল পুলি পিঠা উল্লেখযোগ্য। 

পৌষসংক্রান্তি, নবান্নসহ শীতকাল ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক উৎসব ও রীতি-নীতি পালনের ক্ষেত্রেও পিঠার ব্যবহার হয়ে থাকে। যেমন-ধর্মীয় উৎসব, বিয়ে, গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান, নাইওর বা ফিরানি, অষ্টমঙ্গলা, মুখে ভাত, সুন্নত-এ খাতনা, সাতোশা, নববর্ষ, সাকরাইন, অতিথি আগমন ইত্যাদি।

আজকাল শহরের অভিজাত রেস্তোরাঁতেও গ্রামবাংলার পিঠাপুলি জায়গা করে নিয়েছে। তাছাড়া শহরের প্রতিটি গলিতে, রাস্তার মোড়ে মোড়ে এখন পিঠা বিক্রি হয়। এসময় অনেক ভাসমান পিঠার দোকান তৈরি হয়। প্রায় সব দোকানেই ভাপা ও খোলা পিঠাই বেশি বিক্রি হয়। বানাতে সহজ হওয়ায় এটিকেই বেছে নিয়েছে বিক্রেতারা। পাশাপাশি শহরের পিঠাপ্রেমী নাগরিকরাও তা সাদরে গ্রহণ করেছে। সন্ধ্যা নেমে এলে শহরের প্রতিটি পিঠার দোকানেই ভিড় বাড়তে থাকে। এভাবেই পিঠার স্বাদে নিয়ন আলোর শহরের শীতকে বরণ করে নেয় পিঠাপ্রেমীরা। 

লেখক: শিক্ষার্থী, গণমাধ্যমকর্মী।

/ফিরোজ/

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়