ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৯ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

৫ বছর ধরে নৌকা চালিয়ে সংসার চালান রাশেদা

রুবেল মজুমদার, কুমিল্লা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৩১, ৪ আগস্ট ২০২৩   আপডেট: ২২:০৬, ৪ আগস্ট ২০২৩
৫ বছর ধরে নৌকা চালিয়ে সংসার চালান রাশেদা

পাঁচ বছর ধরে গোমতী নদীতে নৌকা চালিয়ে জীবন জীবিকা নির্বাহী করছেন ৪০ বছর বয়সী রাশেদা বেগম। স্বামী অসুস্থ ও তিন ছেলের পড়ালেখার খরচ মেটাতে নৌকার বৈঠা ধরতে হয়েছে তাকে। শুধু তাই নয়, সারাদিন নৌকা চালানো শেষে রাতে বিভিন্ন মানুষের বাড়িতে কাজ করেন তিনি।

কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার ভারত সীমান্ত ঘেষা আমড়াতলী ইউনিয়নের গোমতী নদী তীরবর্তী রত্নবতী ঘাটে নৌকা চালানো এই নারী মো. হারুন মিয়ার স্ত্রী।  

আরো পড়ুন:

রাশেদা বেগমের স্বামীও গোমতী নদীতে ১০ বছর ধরে নৌকা চালিয়ে সংসার চালাতেন। পাঁচ বছর ধরে তিনি অসুস্থতার কারণে ঘরবন্দী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হারুন-রাশেদা দম্পতির চার ছেলে ও দুই মেয়ে। বড় ছেলে বিয়ে করে এখন বাবা-মার আর কোনো খোঁজ নেন না। এই দম্পতি নিজেদের দুই মেয়েকে বিয়ে দিতে বিক্রি করেছেন বসত ভিটাও। এখন স্বামীকে নিয়ে রাশেদা বেগম গোমতী নদীর তীরের একটি ভাঙা ঘরে থাকেন। অভাব অনটনের সংসারে অভাব মেটাতে তাই স্বামীর করা কাজ নৌকা দিয়ে যাত্রী পারাপার শুরু করেন তিনি। বর্তমানে রাশেদা বেগম অসুস্থ স্বামীর ভরণপোষণ এবং  তিন ছেলের পড়ালেখা করাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন।

একটু ভালোভাবে স্বামী-সন্তান নিয়ে বেঁচে থাকার তাগিদে তাই প্রতিদিন ভোর বেলায় বৈঠা হাতে নিয়ে রাশেদা বেগমকে যেতে হয় রত্নবতী গ্রামের নৌকা ঘাটে। গোমতীতে বেড়াতে আসা ভ্রমণ পিপাসুদের নিয়ে তিনি পার হন নদীর এপার থেকে ওপার। ভ্রমণ পিপাসুরা তার নৌকায় উঠে ভারত সীমান্ত ঘেষা নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করেন। এছাড়া নৌকা পারাপারে তিনি যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নেন ১০ টাকা করে। সারা দিনে পরিশ্রম শেষে সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে রাশেদা বেগম একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই এর জন্য রাতে কাজ করেন মানুষের বাড়িতে বাড়িতে।

শুক্রবার (৪ আগস্ট) বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গোমতী নদীর তীরে টিনের ভাঙা বেড়া ও পলিথিন দিয়ে তৈরি ঘরে কোনো মতে স্বামীকে নিয়ে থাকেন রাশেদা বেগম । ঘর না বলে এটিকে বলা চলে মৃত্যু ফাঁদ। মরিচা ধরে ঝরঝরে হয়ে গেছে গোটা ঘরের টিনের চালা। টিনে তৈরি হয়েছে হাজারো ফুটো। আর তাতেই সামান্য বৃষ্টিতে ভিজে যায় ঘরের বিছানাসহ সবকিছু। ঘরের কাঠামোর অবস্থা এতটাই জরাজীর্ণ যে, যেকোন সময় ঘরটি ভেঙে পড়তে পারে। এই ঘরের পাশের ফাঁকা স্থানে বসেই রান্না করতে দেখা যায় রাশেদা বেগমের অসুস্থ স্বামী হারুনকে। 

হারুন রাইজিংবিডির প্রতিবেদককে বলেন, ‘একটু বৃষ্টি হলেই বিছানাপত্র গুটিয়ে সারা রাত বসে থাকতে হয়। ঘর বৃষ্টির পানিতে ভিজে যায়। ভাঙা বেড়ার ফাঁক দিয়ে প্রায়ই কুকুর বেড়াল ঘরে ঢোকে। একটু বাতাস হলেই ঘরের চাল দুলতে থাকে। আমরা সারাক্ষণ ঘরের নিচে চাপা পড়ার ভয়ে থাকি। আমরা শেষ বয়সে নিরাপদ একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই চাই।’

রাশেদা বলেন বলেন, ‘যতদিন শক্তি সামর্থ্য আছে ততদিন কাজ করে যাবো। ছেলেগুলোকে মানুষ করতে হবে। আমার স্বামী অসুস্থ, তার জন্যই কষ্ট করে যাচ্ছি। নৌকাটা অনেক পুরাতন, নতুন একটা নৌকা পেলে আমাদের জন্য ভালো হবে। এছাড়া যদি সরকারি কোনো সহযোগিতা পাই বাকি জীবনটা একটু সুখে কাটাতে পারবো।’  

রত্নবতী গ্রামের এমরান মিয়া বলেন, নিজের সংসারের খরচ বহন করতে কঠোর কষ্ট করে যাচ্ছেন রাশেদা। 

একই গ্রামের মাসুম নামের অপর এক বাসিন্দা বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে এখান থেকে আমরা নৌকায় উঠি। নৌকায় মানুষ পারাপার করে উনি (রাশেদা বেগম) যে পরিমাণ টাকা পান তাতে তার পক্ষে সংসার চলতে খুবই কষ্ট হয়। সমাজের বিত্তবানরা যদি একটু তাদের পাশে দাঁড়ান তাহলে এই পরিবারটির অনেক উপকার হবে।

কুমিল্লা মহিলা অধিদপ্তরের মহিলা বিষয়ক উপ-পরিচালক জেসমিন আরা বেগম বলেন, ‘নারী হয়ে তিনি (রাশেদা বেগম) যেভাবে নৌকা চালিয়ে জীবিকা অর্জন করছেন তা সত্যি প্রশংসার দাবিদার। তিনি যদি সহযোগিতা চান আমরা মহিলা পরিষদ থেকে যতটুকু সহযোগিতা করা দরকার তাকে সার্বিকভাবে তা করব।’

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়