ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ত্রাণের জন্য ঘর ছাড়ছেন হতদরিদ্র মানুষ!

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ২ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ত্রাণের জন্য ঘর ছাড়ছেন হতদরিদ্র মানুষ!

ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনের সামনে শ্রমজীবী মানুষের ভিড়

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে কাজ হারিয়ে খুলনার হতদরিদ্র মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন।

এসব মানুষ বেকার সময় পার করছেন। অনেকের ঘরের সঞ্চিত খাবার শেষ হয়ে গেছে। নেই গচ্ছিত টাকা। দিন কাটছে অর্ধাহারে-অনাহারে।

এ কারণে আর ঘরে থাকতে চাইছেন না তারা। ইতিমধ্যেই ঘর ছাড়তে শুরু করেছে অনেকেই।

এদিকে, ত্রাণের দাবিতে বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তর, ইউপি কার্যালয়, সংসদ সদস্যের বাসভবন ও অফিসের সামনে হতদরিদ্র শ্রমজীবী নারী-পুরুষ ভিড় করছেন। কেউ কেউ ত্রাণ পেলেও অনেকেই আশ্বাস নিয়েই ফিরে যেতে হচ্ছে।

বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, খুলনা মহানগরীর ৩১টি ওয়ার্ডে ছোট-বড় মিলিয়ে বস্তির সংখ্যা ৭২৬টি। এসব বস্তিতে প্রায় দুই লাখ মানুষের বসবাস। এরমধ্যে লক্ষাধিক রয়েছেন রিকশা, ভ্যান ও ইজিবাইকচালক।

নগরীর ২ নম্বর কাস্টমস ঘাটের বাসিন্দা রিকশাচালক আনোয়ার মিয়া আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমার চারজনের সংসার। করোনার কারণে মানুষ রাস্তায় বের হচ্ছেন না। ঠিকমতো রিকশাও চালাতে পারছি না। গত এক সপ্তাহ ধরে বেকার আছি। ঘরে খাবার নেই। বুধবার সকাল ৬টা থেকে ১২টা পর্যন্ত একশ টাকাও আয় হয়নি। যা হইছে, তা দিয়ে চাল কিনি, না ডাল কিনি। চারজনের এক বেলারই খাবার তো জুটছে না। এভাবে আর কয়দিন চললে, করোনায় মরা লাগবে না, না খায়েই মরে যাব।’

নগরীর বসুপাড়া এলাকায় ষাটোর্ধ্ব অপর এক রিকশাচালক রমজান আলী বলেন, ‘মার্কেট বন্ধ। মুদির দোকানপাট খোলা থাকলেও তা প্রায় ক্রেতাশূন্য। কোনো গাড়ি চলছে না। মানুষ বাইরে বের হচ্ছেন না। কোনো ভাড়া নেই। অথচ চাল-ডাল-শাক-সবজি-মাছ সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। কেউ কোনো সাহায্যও করছেন না। সংসার চালাতে পারছি না।’

তিনি আরো বলেন, ‘চাল-ডাল দেওয়ার কোনো খোঁজ নেই। শুধু সচেতন হইতে বলে। এ কথা শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে গেছে। আমরা যারা না খেয়ে আছি। কেউ এসে দু’বেলা খোঁজ নিলো না। কি খেলাম, না খেলাম। শুধু মুখ বাঁধতে কয়। খাবার না থাকলে শুধু মুখ বেঁধে কী হবে?’

এই একই রকম অবস্থা খুলনার প্রান্তিক জনপদের শ্রমজীবী মানুষদেরও।

এদিকে, গত তিন দিনেও ডুমুরিয়া উপজেলার হতদরিদ্র বহু মানুষ সরকারি-বেসরকারি কোনো সাহায্য পাননি। এ কারণে বুধবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে আরাজি ডুমুরিয়া গ্রামের হতদরিদ্র রিজিয়া বেগম, পাতা বিশ্বাস, অঞ্জলি দাস, পঞ্চ দাস, কৈশালী দাস, গুটুদিয়া গ্রামের জেসমিন আক্তার, রূপা খাতুনসহ প্রায় শতাধিক হতদরিদ্র ক্ষুব্ধ নারী-পুরুষ ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনের সামনে জড়ো হন। এ সময় তারা ত্রাণ দেওয়ার জন্য দাবি জানাতে থাকেন।

কিন্তু, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাদের সামনে আসেননি। তবে, খবর পেয়ে স্থানীয় উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান গাজী আব্দুল হালিম ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সঞ্জিব কুমার দাস ইউএনও’র বাসভবনের সামনে এসে তাদের সঙ্গে কথা বলে ত্রাণ দেওয়ার আশ্বাস দেন। এছাড়া, নাম ঠিকানাসহ তাদের তালিকা লিপিবদ্ধ করেন।

আরাজি ডুমুরিয়া গ্রামের হতদরিদ্র রিজিয়া বেগম বলেন, ‘গত দু’দিন না খেয়ে ঘরের মধ্যে থেকেছি। এই সময়ও কোনো সাহায্য পাইনি। সন্তানরা আর খিদের কষ্ট সহ্য করতে পারছে না। বাধ্য হয়ে ইউএনও অফিসে গেছি। সেখানে তাকে না পেয়ে তার বাসার সামনে আইছি। এখানে এসেও কোনো ত্রাণতো দূরের কথা, সাহায্যও পাইনি।’

রিজিয়ার মতো একই রকম ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন, ইউএনও’র বাসভবনের সামনে জড়ো হওয়া ক্ষুব্ধ হতদরিদ্র মানুষ।

এ বিষয়ে ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. শাহনাজ বেগম মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আমরা যে ত্রাণ পেয়েছি, তা জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিতরণ করে দিয়েছি। আবার ত্রাণ আসলে যারা পায়নি তাদের যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে দেওয়া হবে।’

খুলনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আজিজুল হক জোয়ার্দার জানান, করোনাভাইরাসের কারণে খুলনা মহানগরীসহ জেলার বেকার থাকা হতদরিদ্র ও খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের জন্য সরকার নতুন করে ২০০ মেট্রিকটন চাল ও ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এর আগে গত ২৫ মার্চ ২৭২মেট্রিক টন চাল ও ৮লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। নতুন পাওয়া ত্রাণ শিগগিরি হতদরিদ্র ও খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের জন্য বিতরণ করা হবে।

 

খুলনা/বুলাকী

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়