ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

থমকে গেছে আঞ্জুয়ারার স্বপ্ন

মোসলেম উদ্দিন  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০০, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৩:২৭, ২৪ এপ্রিল ২০২১
থমকে গেছে আঞ্জুয়ারার স্বপ্ন

দিনাজপুরের হিলি সীমান্তের চুড়িপট্টি মহল্লার পরিশ্রমী নারী আঞ্জুয়ারা বেগম। সংসার সামলানোর পাশাপাশি বাড়িতে ছাগল পালন করেন তিনি। বছর পাঁচেক আগে সখের বশে জমানো কিছু অর্থ দিয়ে ২টি ছাগল কিনেছিলেন তিনি। সেই দুই ছাগল থেকে আঞ্জুয়ারা বেগমের ৩২টি ছাগল হয়েছে। এর মধ‌্যে দুটি ছাগল তিনি বিক্রি করেছেন। সেই অর্থ দিয়ে সংসারের কাজে লাগিয়েছেন তিনি।

কিন্তু বর্তমানে এই ত্রিশটি ছাগল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন আঞ্জুয়ারা বেগম। একদিকে, ছাগল পালনের জন‌্য তার বাড়িতে যথেষ্ট জায়গা নেই। মাত্র ৩ শতকের ওপর ২টি ঘর আর বারান্দা তার। এই ছোট্ট বাড়ির মধ‌্যেই স্বামী আর তিন সন্তানসহ এই ত্রিশ ছাগল নিয়ে বসবাস করতে হয় তাকে।

অন‌্যদিকে, আঞ্জুয়ারার স্বামী মাবুদ আলী হিলি বাজারে আড়তে বস্তা সেলায়ের কাজ করেন। দিনে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকার উপার্জন করেন তিনি। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে ৫ জনের সংসার, তার ওপর ছাগল পালনের বাড়তি খরচ। স্বামীর স্বল্প আয় দিয়ে কোনো রকমে সংসার চলা সংসারে তাই এই ত্রিশ ছাগল পালন করা তার কাছে এখন বাড়তি চাপ। তাই সংসারে দুইবেলা দুই মুটো খাবারের ব‌্যবস্থার পর ত্রিশটি ছাগল পালন করতে হিমশিম খেতে হয় তাকে।

এরপরও হাল ছেড়ে দেননি অভাবী আঞ্জুয়ারা। তার স্বপ্ন একদিন তার একটা ছাগলের খামার হবে আর সেখানে তিনি অনেক ছাগল পালন করবেন। অল্প কিছু অর্থের অভাবে আঞ্জুয়ারা বেগমের সেই স্বপ্ন থমকে গেছে।

স্বপ্নবাজ এই নারী বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে মাত্র ৫ হাজার ৬’শ টাকার ২টি ছাগল কিনেছিলাম। সেই থেকে এখন ৩০টি দেশি দু-আশঁলা ছাগল হয়েছে আমার। স্বল্প জায়গা আর অর্থ সংকটের কারণে ছাগলগুলোর ভাল যত্ন নিতে পারি না।  ভালভাবে পালন করতে পারলে এই ছাগল দিয়ে সংসারের আয় উন্নতি করতে পারতাম। নিজে স্বাবলম্বী হতে পারতাম। কিন্তু স্বামীর অল্প রোজগার আর স্বল্প জায়গায় এগুলো পালন করতে আমার খুব কষ্ট হয়। প্রতিদিন ৯ কেজি ভুসি, এক আটি খড় আর কাঁঠালের পাতা লাগে ছাগলের জন‌্য। এতে অনেক টাকা খরচ হয়। এরপরও আমি  হাল ছাড়িনি, পরিশ্রম করে যাচ্ছি।’

আঞ্জুয়ারা বেগম আরও বলেন, ‘অনেক অভাবের মধ্যে থাকলেও ছাগল বিক্রি করতে ইচ্ছে করে না। অনেক কষ্ট হয়, তবুও তাদের ছাড়তে পারি না। স্বামীর অল্প রোজগারে সবাইকে নিয়ে কোনো রকম চলছি। সবচেয়ে বড় সমস্য বাড়ির পাশে রাস্তা, ছাগলগুলো সব সময় রাস্তায় চলাফেরা করে। যানবাহন দেখে ভয় লাগে, কখন যে কি হয়? আমার যদি জায়গা থাকতো তাহলে একটা খামার তৈরি করতাম। নিজে স্বাবলম্বী হতাম। সংসারের উন্নতি করতে পারতাম’ 

আঞ্জুয়ারার স্বামী মাবুদ আলি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমি বাজারে আড়তে বস্তা সেলায়ের কাজ করি। তাতে যা পাই তাই নিয়ে কোনো রকম চলি। আমার স্ত্রী ছাগল পালন করতে ভালবাসে। সে খুব পরিশ্রমী। সংসার সামলিয়ে সে ছাগলগুলোর যত্ন নেয়। মাত্র পাঁচ বছরে  তার ৩২টা ছাগল হয়েছে। আমিও চাই তার একটা ছাগলের খামার হোক।  কিন্তু অর্থের অভাবে তাকে সেইভাবে সহযোগিতা করতে পারি না।  এটা আমার জন‌্য খুব কষ্টের।’

এলাকার বাসিন্দা আরেক নারী কুলসুম বেওয়া বলেন, ‘বাড়িতে অল্প খরচে সহজেই যে ছাগল পালন করে লাভবান হওয়া যায়—তা আঞ্জুয়ারার দেখে শিখেছি। তার দেখাদেখি আমিও গতবছর একটা ছাগল কিনেছি। এবছর আমার ছাগল একটা বাচ্চা দিয়েছে। আশা করছি আমিও ভালভাবে ছাগল পালন করতে পারবো।’ 

হাকিমপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সেলিম হোসেন শেখ রাইজিংবিডিকে জানান, হাকিমপুরে প্রায় ৪০টি ছাগলের খামার রয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মীরা প্রতিটি খামার নিয়মিত পরিদর্শন করেন। ছাগলের রোগ সম্পর্কে খামারিদের ধারণা এবং সেবা নিয়মিত দেন তারা। হিলির চুড়িপট্টি এলাকার আঞ্জুয়ারা বেগমের ৩০টি দো-আশঁলা ছাগল আছে। এই ছাগলগুলোর জন‌্য উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে নিয়মিত খোঁজ খবর নেওয়া হয়। এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শও দেওয়া হয়। আঞ্জুয়ারা বেগমের সাফল‌্য দেখে এলাকার বেকার নারী ও যুবকরা ছাগল পালনে এগিয়ে আসতে পারেন। তাদেরও উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে পরামর্শ ও প্রয়োজনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

হিলি (দিনাজপুর)/বুলাকী

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়