ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০২ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৯ ১৪৩১

মৌলভীবাজারের পরিবহন শ্রমিকদের প্রায় ২ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলা

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৩৮, ২ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ১৬:০১, ২ অক্টোবর ২০২০
মৌলভীবাজারের পরিবহন শ্রমিকদের প্রায় ২ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলা

(বাঁয়ে) সভাপতি পাবেল মিয়া ও (ডানে) সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক সেলিম

মৌলভীবাজার জেলা অটোটেম্পু, অটোরিকশা, মিশুক ও সিএনজি পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে চাঁদা আদায় বাবদ সংগঠনের প্রায় দুই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।

এই অভিযোগে সিলেট শ্রম আদালতে একটি মামলাও দায়ের হয়েছে।  মামলার বাদী বিভাগীয় শ্রম দপ্তর শ্রীমঙ্গলের উপ পরিচালক মো. নাহিদুল ইসলাম।

বিষয়টি নিশ্চিত করে নাহিদুল ইসলাম জানান, আমরা ২১ সেপ্টেম্বর এই মামলাটি দায়ের করেছি।

মৌলভীবাজার জেলা অটো টেম্পু, অটোরিক্সা, মিশুক ও সিএনজি পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের (রেজি. নং- চট্ট-২৩৫৯) সভাপতি পাবেল মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক সেলিম ৭টি উপজেলার ১৭ হাজার পরিবহনের শ্রমিক থেকে চাঁদা আদায় করে ১ কোটি ৮৬ লাখ ১৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে জানান তিনি।

অভিযোগের বিবরণে জানা যায়, শ্রমিক ইউনিয়নের ২০১৮ সালের বার্ষিক রিটার্ন দাখিলের জন্য ২০১৯ সালের ২ জুলাই একটি পত্র দেয় বিভাগীয় শ্রম দপ্তর।  পত্র পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে বার্ষিক রিটার্ন  শ্রম দপ্তরে দাখিল করতে বলা হয়।  পরে একই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরিত প্যাডে ২০১৮ সালের রিটার্ন দাখিল করেন।  এই আয় ব্যয়ের হিসেব যাচাইয়ের জন্য ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর প্রয়োজনীয় রেকর্ড পত্র সহ শ্রম দপ্তরে উপস্থিত হওয়ার জন্য ডাকা হয়।  পরে আবারও ২ ডিসেম্বর দপ্তরের আরেকটি স্মারকে অভিযুক্তদের উপস্থিত হওয়ার জন্য তাদেরকে বলা হলে অভিযুক্তরা উপস্থিত হননি।

পরে ২০১৮ সালের দাখিলকৃত বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব যাচাইয়ে সরেজমিন তদন্তের জন্য দপ্তরের দুই জন সহকারী পরিচালক মো. সোহেল আজিম ও ইউসুফ আহমদ চৌধুরী চলতি বছরের ১২ জানুয়ারী সরেজমিনে সভাপতি পাবেল মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক সেলিমের উপস্থিতিতে মাঠ পর্যায়ে তদন্ত করেন।  ১৪  জানুয়ারি তারা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

সেই তদন্তে হিসেবে ২০১৮ সালে আয় দেখানো হয় ৫১ লাখ ৩২ হাজার ১৫০ টাকা এবং ব্যয় দেখানো হয় ৫১ লাখ ২০ হাজার ১৫০ টাকা।  তদন্তকালে আয় এবং খরচের পক্ষে পর্যাপ্ত প্রমাণ তারা হাজির করতে পারেননি।

তদন্ত কমটি তদন্তকালে মৌলভীবাজার জেলার ৭ টি উপজেলায় কম-বেশি ৯০টি রোডে কমিটির মাধ্যমে ইউনিয়নের ১৭ হাজার সদস্যের কাছ থেকে প্রতিদিন রশিদ বইর মাধ্যমে ২০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়।  আদায়কৃত ২০ টাকা থেকে ইউনিয়নের জেলা কমিটি ৩ টাকা পায়।  সে অনুযায়ী প্রতিদিন জেলা কমিটির আয় প্রায় ৫১ হাজার টাকা এবং বছরে ১ কোটি ৮৬ লাখ ১৫ হাজার টাকা।  অথচ ২০১৮ সালের রিটার্নে ওই পরিমাণ অর্থ দেখানো হয়নি। 

এছাড়া ইউনিয়নের দাখিলকৃত রিটার্নে সদস্য চাঁদা হতে বছরে ৫১ লাখ ৩২ হাজার ১৫০ টাকা আয় হয়েছে উল্লেখ করা হলেও টাকা ব্যয়ের উপযুক্ত কোন ভাউচার দেখানো হয়নি।  ব্যয়ের স্বপক্ষে কোন রেকর্ডপত্রও নেই।  ১৭ সদস্য কমিটি কাগজে কলমে থাকলেও ২০১৮ সালের রিটার্নে শুধুমাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত।

তদন্তকালে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়া কার্যকরী কমিটির অন্য কাউকে পাওয়া যায়নি।  তাদের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে সব পরিচালিত হয়েছে। 

এই অভিযোগের ব্যাপারে সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক সেলিম বলেন, যিনি মামলার বাদী তার মামলা করার কোন এখতিয়ার নেই।  তিনি প্রভাবশালীদের চাপে এই মামলা করেছেন বলে আমাকে ব্যাক্তিগতভাবে জানিয়েছেন।  আমাদের বিরুদ্ধে শ্রমিকের কোনো অভিযোগ নাই। 

এ বিষয়ে বিভাগীয় শ্রম দপ্তর শ্রীমঙ্গলের উপ পরিচালক মো. নাহিদুল ইসলাম জানান, টাকা আত্মসাতের প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে আমরা মামলা করেছি।

সাইফুল্লাহ হাসান/টিপু

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়