ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০২ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৯ ১৪৩১

দিনাজপুরে লিচুর ফলন কম, দাম বেশি 

মোসলেম উদ্দিন, দিনাজপুর  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৪৭, ২৪ মে ২০২১   আপডেট: ১৯:৫২, ২৪ মে ২০২১
দিনাজপুরে লিচুর ফলন কম, দাম বেশি 

দিনাজপুরের বাজারে উঠতে শুরু করেছে সুস্বাদু ও রসালো বিভিন্ন জাতের লিচু। তবে গত বছরের মতো ফলন না হওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে লিচু চাষিদের। আবার বেশিদামে লিচু কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। বৈরি আবহাওয়ার কারণে এবার লিচুর ফলন কম হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি অধিদপ্তর। 

জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ বাগানে লিচুর ফলন কম। গত বছর যে সব বাগানে লিচুতে গাছ নুয়ে পড়েছিল, সেই বাগানে প্রায় অর্ধেক পরিমাণ লিচু গাছে ঝুলছে। আবার অনেক গাছে একটিও লিচু আসেনি। বাগান ছাড়াও অনেকের বসতভিটার গাছে লিচু ধরে। এবার এ সব গাছে তেমন লিচু নেই। কয়েকজন লিচু চাষি জানান, যে সব বাগান থেকে তারা অন্য বছর ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করতো, এ বছর সেই বাগান থেকে ৫০ হাজার টাকারও লিচু পাবে না।  

হাকিমপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা বাগানে গিয়ে লিচু কিনছে। গত বছরের চেয়ে এবার দাম বেশি। দাম বেশি দিলেও অনেক ব্যবসায়ী চাহিদামতো লিচু পাচ্ছে না। বাজারে উঠেছে মাদ্রাজি, চায়না থ্রি লিচু। তবে বোম্বে লিচু আরও সপ্তাহখানেক পর উঠবে।

চায়না থ্রি জাতের ১ হাজার লিচু ৫ হাজার টাকায় কিনে ব্যবসায়ীরা তা  বিক্রি করছেন ৬ হাজার টাকায়। অর্থাৎ ১০০টি লিচুর দাম ৬০০ টাকা। মাদ্রাজি লিচু ১০০টা ১২০ থেকে ১৩০ টাকা দরে কিনে বিক্রি করছেন ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায়। 

পরিবারের জন্য লিচু কিনতে আসা রেজাউল করিম রাইজিংবিডিকে বলেন, মৌসুমী ফল কিনতে হবে। বাড়িতে মা-বাবা বাচ্চারা খাবে। তবে গত বছরের চেয়ে এবার দাম অনেক বেশি। গতবার যে লিচু ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকা দরে ১০০টা কিনেছিলেন। আজ তা কিনতে হলো ১৬০ টাকায়। 

আর একজন ক্রেতা রবিউল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, চায়না থ্রি ১০০টা লিচু কিনেছেন ৬০০ টাকায়। গতবার এ লিচু কিনেছিলেন ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা দরে। দাম বেশি হলেও পছন্দ মতো লিচু পাননি।

হিলি চারমাথায় লিচু ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, বিরামপুর, নবাবগঞ্জ উপজেলায় লিচুর দাম বেশি। তাই তারা দিনাজপুর সদরের মাসুমপুর বাজার থেকে লিচু কিনে আনেন। সেখানে একটু দাম কম। মাদ্রাজি লিচু ১২০ টাকা কিনে তা ১৬০ থেকে ১৮০ দরে বিক্রি করছেন।  

স্থানীয় রমিজ উদ্দিন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমার বাড়িতে একটা বোম্বে জাতের লিচু গাছ আছে। প্রতি বছর কয়েক হাজার লিচু ধরে। এই বার একটি লিচু আসেনি।’  

নবাবগঞ্জের লিচু চাষি হাসেম উদ্দিন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমার ছোট-বড় ৫টি বাগান আছে। প্রতি বছর প্রায় ৫ থেকে ৬ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করি। কিন্তু এ বছর মনে হয় না ৫০ হাজার টাকার লিচু বিক্রি করতে পারবো। এই বছরটাই মাটি।’ 

নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, উপজেলায় ২৭৫ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হয়েছে। তবে আবহাওয়ার কারণে এবার উপজেলার লিচু চাষিরা আশানুরূপ ফলন পায়নি।

বিরামপুর উপজেলা কৃষি অফিসার নিক্সন চন্দ্র সরকার রাইজিংবিডিকে জানান, উপজেলায় মোট ১০০ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হয়েছে। তবে টানা কয়েক দিনের ভারি বর্ষণে প্রতিটি লিচু গাছের গোড়ায় পানি জমে যায়। এই কারণে মুকুল আসার সময় গাছে মুকুল না এসে নতুন পাতা বের হয়। মূলত আবহাওয়ার কারণে চলতি মৌসুমে লিচুর ফলন কম। 

দিনাজপুর জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তৌহিদ ইকবাল রাইজিংবিডিকে জানান, এ বছর জেলার ১৩টি উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হয়েছে। তবে গত বারের চেয়ে এবার লিচুর ফলন অনেকটাই কম।

/বকুল

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়