স্ত্রীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে মারার চেষ্টার অভিযোগ

ঘরে উচ্চসুরে বাজছিল সাউন্ডবক্স আর ওইদিকে যৌতুক লোভী স্বামী যৌতুক না পেয়ে স্ত্রীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ উঠেছে।

রংপুর মেডিক‌্যাল কলেজ হাসপাতালে (রমেকে) বার্ন ইউনিটে মুমূর্ষু অবস্থায় কাতরাচ্ছেন ওই গৃহবধূ।

এ ঘটনায় বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাতে মেয়ে জামাই মাওলানা শরিফ মাহমুদের বিরুদ্ধে শ্রীপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী গৃহবধূর বাবা।

বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শ্রীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইমাম হোসেন।

নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর বাড়ি গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলায়। স্বামীকে নিয়ে শ্রীপুর উপজেলার বয়রাসালায় ভাড়া বাসায় থাকতেন।

গৃহবধূর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, পারিবারিকভাবে ২০১৯ সালের ১২ জুন গাইবান্ধা সদর উপজেলার বল্লমঝাড় এলাকায় মাওলানা শরিফ মাহমুদের সঙ্গে বিয়ে হয় ওই তরুণীর। বিয়ের পর স্ত্রীকে নিয়ে শ্রীপুরে যান শরিফ। সেখানে স্থানীয় ইয়াকুব আলী জামে মসজিদে ইমামতি শুরু করেন তিনি। কিন্তু আর্থিক দৈন্যদশা ও পরকীয়ায় জড়িয়ে শরিফ কিছুদিন ধরে স্ত্রীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে আসছিলেন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে স্ত্রীর কাছে এক লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন শরিফ। এ সময় টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে পরকীয়ার ঘটনা বলায় স্ত্রীকে তিনি মারধর শুরু করেন। এরপর ওইদিন রাত ৩টার দিকে উচ্চস্বরে সাউন্ডবক্সে ওয়াজ বাজিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তরুণীর চিৎকারে পাশের রুমের এক নারী এসে প্রতিবেশীদের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করেন। ঘটনার রাতে মোবাইলে খবর পেয়ে গাইবান্ধা থেকে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে মেয়েকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিক‌্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান বাবা। বর্তমানে তিনি হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন।

নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর বাবা বলেন, ‘টেকার জন্যে ছোলটাক আগুনত ফেলে মারবের চাচ্ছিল। বহুত টেকা দিছি এই দুই বছরে। তাও ছোলটেক মারডাং (মারতো)করতো সে।’

ভুক্তভোগী গৃহবধূ বলেন, ‘অন্য মেয়েদের সঙ্গে কথা বলতো। সেগুলো আমি সহ্য করতে পারিনাই। অনেক মারধর করছে ওই রাতে। সেদিন খাটে শুইতেও দেয়নি। পরে মেঝেতে ঘুমাই। হুট করে ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার গায়ে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে আর ওয়াজ বাজছে।’

রংপুর মেডিক‌্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের প্রধান ডা. এম এ হামিদ পলাশ জানান, তার নাভির নিচ থেকে পা পর্যন্ত দশ শতাংশ পুড়ে গেছে। এছাড়া বুকের কিছু অংশ পুড়েছে। তবে বর্তমানে তিনি শঙ্কামুক্ত রয়েছেন। তার চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সুস্থ হতে সময় লাগবে।

ওসি জানান, স্বামী শরিফ মাহমুদের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী গৃহবধূর বাবা লিখিত অভিযোগ করেছেন। এ ব্যাপারে তদন্তের পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান পুলিশের ওই কর্মকর্তা।