ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

বিজয়ের ৫০, এখনও অরক্ষিত অধিকাংশ বধ্যভূমি

রুমন চক্রবর্তী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৫৪, ১৩ ডিসেম্বর ২০২১  
বিজয়ের ৫০, এখনও অরক্ষিত অধিকাংশ বধ্যভূমি

নীলগঞ্জ ব্রিজ বধ্যভূমি

বিজয়ের ৫০ বছর উদযাপন করছে বাংলাদেশ। এখনও কিশোরগঞ্জের অধিকাংশ বধ্যভূমি অরক্ষিত অবস্থায়, অবহেলায় রয়েছে। সংরক্ষণ না-করার কারণে বধ্যভূমিগুলোতে শহীদের আত্মা যেন গুমরে কাঁদছে। তবুও যেন দেখার কেউ নেই!

জেলাবাসী এখনো জানেন না, কিশোরগঞ্জে কোথায় কয়টি বধ্যভূমি রয়েছে। প্রতি বছর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস, বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবসে শহীদদের স্বজনেরা জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে, অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকা বধ্যভূমিগুলোতে ভিড় করেন। নীরবে চোখের জল ফেলেন স্বজনহারা মানুষ। এসব বধ্যভূমির মাটিতে মিশে আছে দেড় সহস্রাধিক শহীদের মৃতদেহ।

আরো পড়ুন:

জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, জেলার ১৩টি উপজেলায় ২৭টি বধ্যভূমি চিহ্নিত হয়েছে। কয়েকটি বধ্যভূমি ঘিরে কাজ চলমান। শোলমারা বধ্যভূমি নতুন করে সংস্কারের কাজ চলছে। কিন্তু স্বাধীনতার পাঁচদশক পরও সরকারিভাবে জেলার অধিকাংশ বধ্যভূমি সংরক্ষণ করা হয়নি। শহীদদের নামের তালিকা সংবলিত নামফলকও অনেক জায়গায় নেই। শহীদ পরিবারগুলো এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।  

২০০১ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সারাদেশের বধ্যভূমি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে মোতাবেক জেলা পরিষদ, গণপূর্ত ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকেও কাজ শুরু হয়। কিন্তু জমিসংক্রান্ত প্রশাসনিক বিভিন্ন জটিলতায় স্থান নির্ধারণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ কাজ থমকে আছে বলে জানা গেছে। আবার বেশির ভাগ বধ্যভূমি-গণহত্যার স্থান নদীর তীর ও ব্রিজের নিচে হওয়ায় সেগুলো নিয়েও সমস্যা তৈরি হয়েছে।

মনিপুরঘাট ব্রিজ বধ্যভূমি

নীলগঞ্জ ব্রিজ বধ্যভূমি তেমনই একটি স্থান। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের সময় জেলেপাড়া থেকে আটজনকে ধরে এনে হাত বেঁধে গুলি করে হত্যা করা হয়। সেই শহীদ পরিবারের একজন রবিচন্দ্র বর্মন (৪৯)। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, আমার বাবা ও দাদাকে এই স্থানে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। কিন্তু এখানে কোনো স্মৃতিস্তম্ভ বা স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়নি। শহীদদের নামফলকও নেই। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারে এ জন্য তিনি সেখানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবি জানান। 

এমন অসংখ্য বধ্যভূমি জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। তার মধ্যে ধুলদিয়া রেলওয়ে সেতু বধ্যভূমি, বড়পুল বধ্যভূমি, সিদ্ধেশ্বরী কালীবাড়ি ঘাট বধ্যভূমি, বত্রিশ মনিপুরঘাট ব্রিজ বধ্যভূমি, যশোদল টেক্সটাইলসংলগ্ন নদীর পাড়, ভৈরবের অদূরে পানাউল্লাহর চর বধ্যভূমি, ভৈরব ব্রিজ বধ্যভূমি, ইটনা হাওর বধ্যভূমি, হোসেনপুর কুড়িঘাটা নদীর পাড় বধ্যভূমি এবং বড়ইতলা বধ্যভূমি উল্লেখযোগ্য। 

বড়ইতলা এলাকার মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন ক্ষোভ ও আক্ষেপ করে রাইজিংবিডিকে জানান, মুক্তিযুদ্ধে হানাদার বাহিনী কিশোরগঞ্জ জেলায় হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে হত্যা করে বিভিন্ন স্থানে গণকবর ও নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সে জায়গাগুলো সরকারিভাবে সংরক্ষণের তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমনকি বড়ইতলা স্থানটিতে যে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে, সেখানেও শহীদদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। তাই প্রশাসনের নিকট আমার দাবি- দ্রুত বধ্যভূমিগুলোতে শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে স্মৃতিস্তম্ভ ও নামফলক তৈরি করা হোক।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম রাইজিংবিডিকে জানান, পর্যায়ক্রমে বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কয়েকটি বধ্যভূমির সংস্কার ও নতুন নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। শহীদদের নামের তালিকা সেখানে থাকবে। 

কিশোরগঞ্জ/তারা

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়