ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

আতঙ্কিত হয়ে রাতের আঁধারে মেহেরপুর ছাড়ে পাকহানাদার 

মহাসিন আলী, মেহেরপুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০০, ৬ ডিসেম্বর ২০২২   আপডেট: ১০:০৩, ৬ ডিসেম্বর ২০২২
আতঙ্কিত হয়ে রাতের আঁধারে মেহেরপুর ছাড়ে পাকহানাদার 

জেলা পরিষদের সামনে অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের নাম সম্বলিত স্মৃতিসৌধ

মেহেরপুর মুক্ত দিবস আজ। মুক্তিবাহিনীর প্রবল প্রতিরোধের মুখে দাঁড়াতে না পেরে ৫ ডিসেম্বর রাতে হানাদার বাহিনী মেহেরপুর ছেড়ে পালিয়ে যায়। পর দিন ৬ ডিসেম্বর সকালে আনন্দ আর উল্লাস করতে করতে সর্ব স্তরের মানুষ রাস্তায় নেমে আসে ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে স্বাধীনতার সুতিকাগার মুজিবনগর তথা মেহেরপুরের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তৎকালীন এসডিও তৌফিক এলাহি চৌধুরীর সক্রিয় ভূমিকায় আনসার-মুজাহিদদের নিয়ে মুক্তিবাহিনী গড়ে তোলা হয়। ভারতের শিকারপুরে প্রশিক্ষণ শেষে এ বাহিনী মেহেরপুর প্রবেশ করে। মেহেরপুরকে মুক্ত করার জন্য চারদিক থেকে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় মুক্তিবাহিনী। পাক বাহিনী আগেই এ খবর জানতে পেরে ৫ ডিসেম্বর রাতে মেহেরপুর ছেড়ে পালিয়ে যায়। হানাদারবাহিনী চলে যাবার সময় মেহেরপুর ওয়াপদা, দ্বিনদত্ত ব্রিজ সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো ধ্বংস করে দেয়। পাকবাহিনী চুয়াডাঙ্গার দিকে পালিয়ে গেলে মেহেরপুরের মুক্তিযোদ্ধারা জয়বাংলা বলতে বলতে শহরে প্রবেশ করে। মুক্ত হয় মেহেরপুর। 

প্রাপ্ত তথ্যমতে, মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে নিয়ে বিভিন্ন সেলে আটকে অকথ্য নির্যাতন চালাতো। মেহেরপুর সরকারি কলেজ, সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও নাটুদা হাইস্কুলে পাকবাহিনী নিরীহ মানুষকে ধরে নিয়ে বেয়নেট দিয়ে খুচিয়ে ও গুলি করে হত্যা করতো। 

১৮ এপ্রিল হানাদার বাহিনী মেহেরপুরে আসে এবং এক সপ্তাহের মধ্যে মেহেরপুর সরকারি কলেজ, কবি নজরুল শিক্ষা মঞ্জিলসহ তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাদের শক্তিশালী দুর্গ গড়ে তোলে। দীর্ঘ প্রায় ৭ মাস ধরে পাকসেনারা রাজাকার ও পিস কমিটির সহায়তায় সাধারণ মানুষসহ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের উপর নির্মম অত্যাচার নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাট চালাতে থাকে। পাকসেনারা আমঝুপি, ওয়াপদা মোড়, পিরোজপুর, কাজিপুর, ভাটপাড়া, কোলাসহ বিভিন্ন গ্রামে নৃশংস গণহত্যা চালায়। যেখানেই গণহত্যা হয়েছে সেখানেই বধ্যভূমি রয়েছে। তার মধ্যে মেহেরপুর সরকারি কলেজের উত্তরে বিস্তৃত মাঠ, টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভিতর ও ভাটপাড়ার বধ্যভূমি অন্যতম। 

মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলাম ও বদরুল আলম জানান, যুদ্ধকালে হানাদার বাহিনী সাধারণ মানুষদের ধরে শহরের টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও সরকারি কলেজের পিছন এবং তাহের ক্লিনিক পাড়াসহ বিভিন্ন সেলে নিয়ে গিয়ে অকথ্য নির্যাতন চালাতো। ৫ ডিসেম্বর রাতে হানাদাররা চলে যাবার সময় মেহেরপুরের ওয়াপদা, সদর উপজেলার দ্বীনদত্ত ব্রিজসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংস করে দেয়।

বীর মুক্তিযোদ্ধা জিল্লুর রহমান ও উমেদীন আলী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজ না থাকলেও তার আদর্শ রেখে গেছেন। তার আদর্শ মেনে চললে আজ বাংলাদেশ সোনার দেশ হতো কিন্তু আজ এই দেশ সোনার দেশ নেই। এখনো অনেক গণকবর সংরক্ষণ করা হয়নি। সেই সব গণকবরগুলো চিহ্নিত করে সংরক্ষণ করার পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বৈষম্য দূর করার দাবি জানান তারা।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক বলেন, ৭১ এর ডিসেম্বরে যে উল্লাস ছিলো সেই উল্লাস আজ আর নেই। নতুন প্রজন্মকে সেই ইতিহাস জানাতে না পারলে এক সময় তারা এই ইতিহাস ভুলে যাবে। 

/টিপু/ 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়