ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

সাইকেল চালিয়ে ২০০ কিমি পাড়ি দিয়ে মসজিদে নামাজ পড়লেন বৃদ্ধ আবুল হোসেন

মাগুরা প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১৩, ১৩ জানুয়ারি ২০২৩   আপডেট: ১৬:৫৮, ১৩ জানুয়ারি ২০২৩
সাইকেল চালিয়ে ২০০ কিমি পাড়ি দিয়ে মসজিদে নামাজ পড়লেন বৃদ্ধ আবুল হোসেন

জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী আবুল হোসেন শেখের বয়স ৭৫ পেরিয়েছে। ফেসবুকে ভিডিও দেখে বাড়ি থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে দৃষ্টিনন্দন একটি মসজিদ দেখে মুগ্ধ হন তিনি। এরপর সেই মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। ইতোমধ্যে স্থানীয়রা চাঁদা তুলে সেই মসজিদ দেখতে যাওয়ার উদ্যোগ নেন। খবর পেয়ে আবুল হোসেন শেখ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু নির্ধারিত চাঁদা দিতে না পারায় আয়োজকরা তাকে সঙ্গে নেননি। এতে মন খারাপ হলেও ভেঙে পড়েননি আবুল হোসেন। বরং এরপর তিনি যা করেছেন তাতে ধন্য ধন্য রব পড়ে গেছে চারদিকে। খবরের পাতায় উঠে এসেছে তার নাম। সেই খবর শুনে দেশ-গ্রামের প্রত্যেকেই বিস্মিত হয়ে জানতে চাইছেন- এই বয়সে আবুল হোসেন কীভাবে এ কাজ সম্ভব করলেন!

হ্যাঁ, মন দৃঢ় হলে, অদম্য ইচ্ছেশক্তি থাকলে বয়স কোনো বাধা নয় এ কথা আরেকবার প্রমাণ করেছেন আবুল হোসেন। তিনি প্রায় ২০০ কি.মি. পথ সাইকেল চালিয়ে সেই মসজিদ দেখে এসেছেন। 

মসজিদটি সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় অবস্থিত। নাম আল আমান বাহেলা খাতুন জামে মসজিদ। মসজিদটির নির্মাণশৈলী দৃষ্টিনন্দন হওয়ায় বিভিন্ন জেলা থেকে অনেকেই দেখতে আসেন।

আবুল হোসেন শেখের বাড়ি মাগুরা সদর উপজেলার আঠারোখাদা গ্রামের গোরস্তান মসজিদ পাড়ায়। এই প্রবীণ বলেন, সাইকেল চালায়ে যাতি কোনো সমস্যা হয় না। যেখানে ইচ্ছে থামলাম, আবার চালানো শুরু করলাম। অনেক কিছু দেখতে দেখতে গেলাম।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সম্প্রতি আল আমান বাহেলা খাতুন জামে মসজিদের একটি ভিডিও ফেসবুকে দেখেন আবুল হোসেন। এরপর থেকেই তার মনে ইচ্ছে জাগে সুন্দর এই মসজিদে একদিন তিনি জুমার নামাজ আদায় করবেন। ইতোমধ্যে স্থানীয়রা বাস ভাড়া করে ওই মসজিদ দেখতে যাওয়ার উদ্যোগ নেন। যাতায়াতের জন্য জনপ্রতি চাঁদা ধরা হয় ৮০০ টাকা। আবুল হোসেন শেখ তাদের সঙ্গে যেতে চান। এ জন্য তিনি ৫০০ টাকাও দেন। কিন্তু ৩০০ টাকা কম থাকায় আয়োজকেরা রাজি হননি। এরপর তিনি নিজের সাইকেল নিয়েই সিরাজগঞ্জের পথে রওনা হন। 

সোমবার (২ জানুয়ারি) ফজরের নামাজ আদায়ের পর বাড়ির কাউকে গন্তব্যের কথা না-জানিয়ে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন আবুল হোসেন শেখ। সঙ্গে ছিল কাপড়ের একটি ব্যাগ, ২ হাজার ২০০ টাকা এবং একটি মুঠোফোন। তিনি বলেন, প্রথম রাত তিনি কাটান রাজবাড়ীর ধাপাড়া এলাকায় একটি মসজিদে। পরদিন সকালে সেখান থেকে সকালের নাশতা শেষে আবার রওনা দেন। মঙ্গলবার দিন শেষে রাত কাটান পাবনা জেলার নাজিরগঞ্জ এলাকায় একটি মসজিদে। পরদিন বুধবার দুপুরের পর তিনি পৌঁছান কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে। 

আবুল হোসেন শেখ জানান, তার উদ্দেশ্য জানতে পেরে পথে অনেক অচেনা লোকজন তাকে আপ্যায়ন করেছেন। ফলে কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার এলাকার ওই দলটি বাস নিয়ে পৌঁছান বেলকুচিতে। তখন তাদের সঙ্গে আল আমান বাহেলা খাতুন জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন তিনি। ইতোমধ্যে তার নিজ এলাকায় খবরটি চাউর হয়ে যায়। তখন পরিবারের সদস্যদের চাপাচাপিতে এলাকার ওই দলের সঙ্গে বাসে বাড়ি ফেরেন তিনি।  

৯ সন্তানের জনক আবুল হোসেন শেখ একসময় কৃষিকাজ করতেন। ভ্যান চালিয়েছেন কিছুদিন। এখন শরীর কঠিন কাজে সাড়া দেয় না। চার মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। পাঁচ ছেলের কেউ ভ্যান চালান, কেউ ছোটখাটো ব্যবসা করেন, কেউ নির্মাণশ্রমিক। 

পরিবারের সদস্যরা জানান, এবারই প্রথম না। এর আগেও সাইকেল ও ভ্যান চালিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেরিয়েছেন তিনি। যমুনা সেতু যখন চালু হয়, সে সময়ে ভ্যান চালিয়ে গিয়েছিলেন দেখতে। তাও তিনবার। এ ছাড়া সাইকেল চালিয়ে গাজীপুরের টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমায় এসেছেন দুবার।

আবুল হোসেন শেখের ছেলে মো. ডাবলু বলেন, আব্বা স্বাধীনচেতা, সহজ-সরল মানুষ। আগে থেকেই তিনি ঘুরতে পছন্দ করেন। বয়স হলেও এখনো তার মনোবল প্রবল।

শাহীন/তারা 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়