দেশে ফিরছেন তারেক রহমান, বগুড়ায় উচ্ছ্বাস
এনাম আহমেদ, বগুড়া || রাইজিংবিডি.কম
তারেক রহমানের আগমনকে সামনে রেখে বগুড়ায় নানা কর্মসূচি পালন করছেন বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা
দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগ পর দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি তাকে ঘিরে প্রত্যাশার শেষ নেই সাধারণ মানুষেরও। তাদের বিশ্বাস— তারেক রহমানের হাত ধরেই রাজনীতিতে আমূল পরিবর্তন আসবে, পরিবর্তন ঘটবে রাষ্ট্র ব্যবস্থার, বদলে যাবে সাধারণ মানুষের ভাগ্য। তারেক রহমানের দেশে ফেরার খবরে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। তবে, বগুড়ায় সে আনন্দ যেন আকাশ ছুঁয়েছে।
তারেক রহমানের বাবা বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এবং মা প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তাই সন্তান হিসেবে তিনিও বেছে নিয়েছেন সংগ্রামী রাজনৈতিক জীবনকে। তাকে একের পর এক মামলা, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হয়েছে। ভাইয়ের মৃত্যু কিংবা মায়ের অসুস্থতায় পাশে না থাকার বেদনাকে সঙ্গী করেই দীর্ঘ প্রায় ১২ বছর ভার্চুয়ালি নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপিকে। হাজার মাইল দূরে থেকেও বেগবান করেছিলেন জুলাই আন্দোলনকেও।
গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর বারবার দেশে ফেরার চেষ্টা করেও নানা জটিলতায় আসতে পারেননি তিনি। তবে, দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটতে যাচ্ছে আগামী ২৫ ডিসেম্বর। তাই, বগুড়ার নেতাকর্মীরা আরো উজ্জীবিত। তারেক রহমানের আগমনকে ঘিরে চলছে নানা রাজনৈতিক কর্মসূচি। তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে ২৫ ডিসেম্বর বগুড়া থেকে অন্তত অর্ধলক্ষ নেতাকর্মী ঢাকায় যাবেন বলে জানিয়েছেন জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতারা।
সংস্কার হচ্ছে তারেক রহমানের বগুড়ার বাড়ি
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা রয়েছে তারেক রহমানের। নিজ নির্বাচনি এলাকায় আগমনকে সামনে রেখে সংস্কার করা হয়েছে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার নশিপুর ইউনিয়নের বাগবাড়ী গ্রামে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পৈতৃক বাড়ি এবং সেই বাড়িতে প্রবেশের সড়কও। বগুড়া শহরের যে বাড়িতে থেকে তারেক রহমান উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর নেতাদের সঙ্গে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতেন, দীর্ঘদিন অবহেলা-অযত্নে পড়ে থাকা সেই বাড়িও সংস্কার করা হচ্ছে।
বগুড়া শহরের সূত্রাপুর এলাকার রিয়াজ কাজী লেনে তারেক রহমানের অর্থায়নে নির্মিত ‘গ্রীন এস্টেট’ নামের সেই বাড়ি সংস্কার করা হচ্ছে। তারেক রহমান বগুড়ায় এলে ওই বাড়িতেই অবস্থান করতেন। তিনি লন্ডন চলে যাওয়ার পর বাড়িটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছিল।
সাবেক সংসদ সদস্য লালু তার বাসার পাশে ৫ শতাংশ জমি তারেক রহমানকে মৌখিকভাবে দেন। পরে সেখানে বাড়ি নির্মাণ করেন তারেক রহমান। বিশেষ নিরাপত্তা অনুযায়ী বাড়ির নকশা করা হয়। মূলত এই বাড়িকে ঠিকানা হিসেবে নিয়েছিলেন তিনি। ২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেনের সময় তারেক রহমান গ্রেপ্তার হন। পরে কারামুক্ত হয়ে লন্ডন চলে যান। এরপর থেকে ওই বাড়িটি অযত্নে পড়ে থাকত।
বগুড়া শহরের আব্দুল কাদের নামে এক পথচারী বলেন, আমাদের দেশের একজন নায়ক তারেক রহমান। তিনি দেশে ফিরছেন, এটা শোনার পর খুব ভালো লাগছে। এটা ঈদের দিনের চেয়েও আমাদের কাছে বেশি আনন্দের। তিনি বগুড়া-৬ আসন থেকে ভোট করবেন। আমরা আনন্দমুখর পরিবেশে ভোট দিতে যাব।
বগুড়া শহরের সিএনজি অটোরিকশার চালক হারুনুর রশিদ বলেন, আমরা চাই, তিনি দেশে ফিরে জনগণের কল্যাণে কাজ করবেন। তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে আমাদের পাশে দাঁড়াবেন।
বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বাগবাড়ী এলাকার বাসিন্দারা বলেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরার খবর তাদের তাদের কাছে অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। তারেক রহমানের হাত ধরেই দেশের উন্নয়ন ঘটবে। জনগণের জীবনযাত্রার উন্নয়ন হবে। ১৭ বছর বাগবাড়ীতে কোনো উন্নয়ন হয়নি। তার হাত ধরেই এই উন্নয়ন হবে।
বগুড়ার বিভিন্ন পর্যায়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, এই জেলার অধিকাংশ জায়গায় তারেক রহমান তার ছাপ রেখে গেছেন। তার সম্পর্ক বগুড়ার মাটি ও মানুষের সাথে। তাই, উচ্ছ্বসিত বগুড়ার সাধারণ মানুষ। তারা তারেক রহমানের ফেরার জন্য অপেক্ষা করছেন।
বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা বলেন, প্রায় দেড় যুগ বগুড়ার মানুষ অবহেলিত ছিল, বঞ্চিত ছিল। বগুড়ার যেটুকু দৃশ্যমান উন্নয়ন, তা তারেক রহমানের হাত ধরেই বাস্তবায়িত হয়েছে। কাজেই আমাদের আনন্দ উচ্ছ্বাসটা একটু বেশিই। কারণ, তার হাত ধরেই বগুড়ার মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হবে, বগুড়ার মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে। ২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে বগুড়া থেকে অর্ধলক্ষাধিক নেতাকর্মী ঢাকায় যাবেন।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা এবং কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু বলেন, দেশে অনেক দিন পর একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এতে বিএনপি অংশ নিচ্ছে। ইতোমধ্যে আসনগুলোতে আমাদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তারেক রহমান বগুড়া-৬ আসন থেকে এবং খালেদা জিয়া বগুড়া-৭ আসন থেকে নির্বাচন করার কথা, দলের পক্ষ থেকে এটা ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আমরা সে আলোকেই কাজ করছি। আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারি মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন। তারেক রহমান যেহেতু বগুড়া-৬ আসনে নির্বাচন করবেন। আমরা আশা করছি, তিনি ২৮ তারিখে বগুড়ায় এসে মনোনয়ন দাখিল করবেন। সেজন্য তার অর্থায়নে নির্মিত বগুড়া শহরে যে বাড়িটি রয়েছে, যেখানে তিনি থাকতেন, সেটি সংস্কার হচ্ছে। তিনি যেন থাকতে পারেন, সেভাবে প্রস্তুত করা হচ্ছে বাড়িটি।
হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু আরো বলেন, তিন বছর আগে থেকেই তারেক রহমান রাষ্ট্র মেরামত নিয়ে পরিকল্পনা করছেন। এজন্য তার নিজের গবেষণা, আলোচনা চলমান রয়েছে। রাষ্ট্র মেরামতের কথা তিনি প্রতিনিয়তই নতুনভাবে, নতুন আঙ্গিকে বিভিন্ন মহলে বলে যাচ্ছেন। আমরা আশা করি, মানুষ যদি আমাদের পক্ষে রায় দেয়, তিনি তা বাস্তবায়ন করতে পারবেন।
ঢাকা/রফিক