জবি শিক্ষককে হেনস্তা: সতর্ক করেই দায় সেরেছে প্রশাসন 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহ মো. নিস্তার জাহান কবিরকে প্রকাশ্য হেনস্তা ও হুমকির ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী সাঈদুল ইসলাম সাঈদকে সতর্ক করেই দায় সেরেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ নিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া।

গত সোমবার (২৯ এপ্রিল) জবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গত বছরের ২৮ আগস্ট সোমবার বিকাল ৩ টা ২০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কর্যের সামনে শিক্ষকদের বাস ছাড়ার পূর্বে আপনি (সাঈদুল ইসলাম সাঈদ) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শাহ মো. নিসতার জাহান কবীরের সঙ্গে চরম ধৃষ্টতামূলক আচরণ করেন। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির মতামত অনুসারে আপনাকে ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড না করার এবং করলে কঠিনতম শাস্তি প্রদান করা হবে মর্মে সর্তক করা হলো।’

এর আগে, ডিবেটিং সোসাইটির নির্বাচনের জন্য সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে সাঈদ তার পছন্দের দুজনকে ভোটার করার জন্য অধ্যাপক শাহ নিস্তারকে অনুরোধ করেন। এ সময় অধ্যাপক নিস্তার বলেন, প্রতিনিধি মনোনয়নের জন্য আলাদা শিক্ষক রয়েছেন। তারা বাছাই করে নির্ধারণ করেন। তবে সাঈদ অধ্যাপক নিস্তারকে নিজের পছন্দের লোককে ভোটার করার জন্য চাপ দিতে থাকেন। পরে তিনি অস্বীকৃতি জানালে প্রকাশ্যে ‘দেখে নেয়ার হুমকি’ দেন।

এ ঘটনায় গত বছর ৩১ আগস্ট তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক ড. অশোক কুমার সাহা, সদস্য হিসেবে সাবেক সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার হেদায়েতুল্লা তুর্কিকে মনোনীত করা হয়।

এভাবে প্রকাশ্যে একজন শিক্ষককে হেনস্তা ও হুমকির ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল। এ ঘটনায় অভিযুক্ত সাঈদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের দাবি জানিয়েছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। এছাড়া তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপাচার্য বরাবর আলাদা লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছিলেন। পরে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মানববন্ধনের ডাক দিলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আশ্বাসে মানববন্ধন স্থগিত করেন বিভাগের শিক্ষার্থী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক বলেন, একজন শিক্ষককে প্রকাশ্যে হেনস্তা ও হুমকি দেওয়া বড় অপরাধ। একজন শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে কোনোভাবে এ ধরনের আচরণ কাম্য নই। এ ঘটনায় অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দীর্ঘদিন ধরে 'গুরু পাপে লঘু দণ্ড' দেয়ার নীতি অনুসরণ করে আসছে। এভাবে পার পেয়ে যাওয়ায় অপরাধ প্রবণতা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তদন্তের কমিটির আহ্বায়ক মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. অশোক কুমার সাহা বলেন, তদন্ত কমিটি প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানি নিয়ে একটি লিখিত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সেই অনুযায়ী কিছু সুপারিশমালা দেওয়া হয়েছে। এখন প্রশাসন এটাকে কিভাবে নিষ্পত্তি করবে, সেটা তাদের উপর নির্ভর করছে। এখন বাকী দায়িত্ব প্রশাসনের ওপর, তদন্ত কমিটির না। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন তাদের পছন্দ না হলে তদন্ত আবার করতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমি তখন দায়িত্বে ছিলাম না। তাই এটি কোন ঘটনার প্রেক্ষিতে শোকজ করা হয়েছে, আমার জানা নেই।