ঢাকা     রোববার   ১৬ জুন ২০২৪ ||  আষাঢ় ২ ১৪৩১

পিএইচডি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বাকৃবি অধ্যাপকের হেনস্তার অভিযোগ

বাকৃবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৫১, ২৩ মে ২০২৪  
পিএইচডি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বাকৃবি অধ্যাপকের হেনস্তার অভিযোগ

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পিএইচডি ডরমিটরি ভবন সংস্কারের তদারকি কমিটির সদস্য ও ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. পূর্বা ইসলাম তিন পিএইচডি শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে হেনস্তার অভিযোগ করেছেন।

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, ছাত্র বিষয়ক বিভাগ, প্রক্টর অফিস এবং শিক্ষক সমিতির সভাপতি বরাবর এ ঘটনার বিচার চেয়ে লিখিত অভিযোগ দেন ওই ভুক্তভোগী অধ্যাপক। সেখানে ডরমিটরি ভবন সংস্কারের কাজ তদারকি করার সময় আকস্মিকভাবে বাঁধা দিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তা করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়।

অভিযুক্তরা হলেন, পিএইচডি ডরমিটরি স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অমিত কুমার বসুনিয়া, পিএইচডি শিক্ষার্থী শুভশ্রী সরকার এবং রেহানা সুলতানা।

অভিযোগপত্র সূত্রে জানা গেছে, পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া পিএইচডি ডরমিটরি ভবনের সংস্কার ও উন্নয়ন কাজ চলছে। কাজের তালিকা অনুযায়ী, নতুন করে ভবনটির দ্বিতীয় তলা নির্মাণ ও নিচতলা সংস্কার কাজ হওয়ার কথা। ইতোমধ্যেই দ্বিতীয় তলার কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। পিএইচডি ডরমিটরি ভবনের সংস্কার ও উন্নয়ন কাজের তদারকি কমিটির সদস্য হিসেবে বুধবার (২২মে) বেলা ১১ টার দিকে ওই অধ্যাপক দায়িত্ব পালন করতে ওই ভবনে যান। ওইসময় তার সঙ্গে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ বিভাগ) মোহা. তৌহিদুল ইসলাম ও সিনিয়র-সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ বিভাগ) ফারুক আহমেদও ছিলেন।

এসময় পিএইচডি শিক্ষার্থী অমিত কুমার বসুনিয়া, শুভশ্রী সরকার এবং রেহানা খাতুন সেখানে উপস্থিত হয়ে আক্রমণাত্মকভাবে কথা বলতে শুরু করেন এবং তদারকি কাজে বাঁধা দেন। তারা অধ্যাপকদের বারবার অভিযুক্ত করে বলতে থাকেন যে, তদারকি কমিটি কাজ শেষ না করায় নিচ তলা থেকে দ্বিতীয় তলায় তাদের আবাসন স্থানান্তর করা হচ্ছে না। 

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, দ্রুত কাজ শেষ করে সমস্যার আশ্বাস দিলেও তারা নানা আপত্তিকর কথাবার্তা বলেন। এসময় পিএইচডি শিক্ষার্থী রেহানা ভুক্তভোগী অধ্যাপককে শারীরিকভাবে হেনস্তা করেন। পরে বিকেলে গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের আলোচনা সভায় তিনি গেলে সেখানেও ওই শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হয়ে আক্রমণাত্মক আচরণ করেন।

ঘটনার ব্যাপারে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ বিভাগ) মোহা. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, বুধবার আমরা যখন ডরমিটরিতে যাই, তখন উপস্থিত পিএইচডি শিক্ষার্থীরা আমাদের সঙ্গে অসম্মানজনক আচরণ করেন। বিশেষ করে অমিত কুমার নামের ছেলেটির আচরণে আমি হতবাক হই। অধ্যাপক পূর্বা এবং আমি একাধিকবার তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা উল্টো আমাদেরকে দোষারোপ করে যাচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে আমরা কাজ রেখে চলে আসতে বাধ্য হই।

এ বিষয়ে পিএইচডি ডরমিটরি স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অমিত কুমার বসুনিয়া বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, সবই অসত্য ও বানোয়াট। অধ্যাপক পূর্বা আমারও শিক্ষক। একজন শিক্ষকের সঙ্গে কিভাবে কথা বলতে হয়, এটুকু আমি জানি। এখানে হয়তো কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।

অধ্যাপক পূর্বাকে শারীরিকভাবে হেনস্থা করার অভিযোগের ব্যাপারে পিএইচডি শিক্ষার্থী রেহানা সুলতানা বলেন, এ ব্যাপারে কথা বলতে আমি বাধ্য নই। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন একজন অধ্যাপক। এ বিষয়ে আবার আমাকেই জিজ্ঞাসা করার মাধ্যমে ওই শিক্ষককে অসম্মান করা হয়। একজন অধ্যাপক যখন অভিযোগ দিয়েছেন, তখন তা জেনে বুঝেই দিয়েছেন। আমি যেহেতু উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের একজন শিক্ষকের পিএইচডি ছাত্রী। তাই আমার সঙ্গে কথা বলতে হলে ওই বিভাগ বা পিএইচডি ডরমিটরির সুপার অধ্যাপক ড. আবু হাদী নূর আলী খানের মাধ্যমে কথা বলতে হবে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, আমরা লিখিত অভিযোগপত্রের অনুলিপি হাতে পেয়েছি। ঘটনাটি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, ঘটনার বিষয়ে প্রাথমিক দেখাশোনার জন্য আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে দায়িত্ব দিয়েছি। প্রক্টর আপাতত বিষয়টি দেখবেন। পরবর্তীতে আলোচনা সাপেক্ষে ঘটনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, বাকৃবির পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া পিএইচডি ডরমিটরি ভবনের সংস্কার ও উন্নয়ন কাজের মোট আর্থিক বরাদ্দ প্রায় ৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। কাজের তালিকায় দ্বিতীয় তলা নির্মাণ ও নিচতলা সংস্কারের নির্দেশনা থাকলেও  নিচতলার কোনো কাজ করা হয়নি। শুধু দ্বিতীয় তলা নির্মাণে এত খরচের বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা চলছে শিক্ষক-কর্মকর্তা মহলে।

এদিকে সম্পূর্ণ কাজ শেষ হয়েছে এমনটি জানিয়ে নিচতলা থেকে দ্বিতীয় তলায় আবাসন স্থানান্তরের জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠেছেন পিএইচডিরত শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে নিচতলা এবং দ্বিতীয় তলার সম্পূর্ণ কাজ বুঝে নিতে অনড় ওই কাজের মনিটরিং কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. পূর্বা ইসলাম।

/লিখন/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়