ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৯ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ফিলিস্তিনের মুক্তিতে আমাদের করণীয়

জুনায়েদ মাসুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩০, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪   আপডেট: ১৯:৩২, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
ফিলিস্তিনের মুক্তিতে আমাদের করণীয়

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকট নিছক একটি আঞ্চলিক সংঘাত নয়, বরং এটি মানবিকতার বিরুদ্ধে চলমান একটি যুদ্ধ। প্রায় এক শতাব্দী ধরে চলে আসা এ সংঘাতের পটভূমিতে রয়েছে ভূমি দখল, ধর্মীয় বিরোধ ও রাজনৈতিক আধিপত্যের লড়াই। বর্তমান পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনিরা যে নির্মম গণহত্যার শিকার, তা আন্তর্জাতিক মহলে আলোচিত হলেও কার্যকর পদক্ষেপের অভাব আজো চরম হতাশাজনক অবস্থায়।

ফিলিস্তিনে যা ঘটছে, তা শুধু দখলদারিত্ব নয়, বরং একটি পরিকল্পিত গণহত্যা। ইসরায়েল তাদের সামরিক শক্তি ও মিডিয়া প্রভাব ব্যবহার করে নিজেদের পক্ষে বিভ্রান্তিকর ন্যারেটিভ তৈরি করছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের এ ঘটনাগুলোকে তারা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ন্যায্যতা দেওয়ার চেষ্টা করছে।

বিশ্বের অনেক দেশ ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নিলেও তাদের পদক্ষেপগুলোর বেশিরভাগ প্রতীকীই থেকে গেছে। জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। ইসরায়েলের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত প্রভাব বিশ্ব রাজনীতিতে এতটাই গভীর যে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ফিলিস্তিনের মুক্তির জন্য আমাদেরও অনেককিছু করার আছে। এ কাজগুলোকে কয়েকটি পর্যায়ে ভাগ করা যেতে পারে।

স্বল্পমেয়াদী উদ্যোগ
এর মধ্যে, ইসরায়েলি পণ্য বর্জন করা যেতে পারে। এতে তাদের অর্থনীতিতে সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইতোমধ্যে এ ধরনের বর্জন আন্দোলন চলছে, যা আমাদেরও অংশগ্রহণের দাবি রাখে।

এ ছাড়া অনলাইন ও অফলাইনে ফিলিস্তিনের উপর চলমান নির্যাতনের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে হবে। সংবাদ, ছবি ও ভিডিও’র মাধ্যমে মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন করতে হবে। জায়োনিস্টদের বিভ্রান্তিকর প্রচারণার বিপরীতে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে শক্তিশালী ন্যারেটিভ দাঁড় করানোটাও জরুরি।

পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে তথ্য-উপাত্ত সমৃদ্ধ ক্যাম্পেইন চালিয়ে ফিলিস্তিনের সত্যিকারের চিত্র তুলে ধরা প্রয়োজন। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জনমত গঠন করতে হবে। মানববন্ধন, মিছিল, সেমিনার ও প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এ বিষয়ে আলোচনা বাড়ানো যেতে পারে।

অপরদিকে, ফিলিস্তিনিদের জন্য ত্রাণ ও অর্থনৈতিক সাহায্য জোগাড় করতে হবে। যারা সেখানে সরাসরি সাহায্য পৌঁছে দিতে পারেন, তাদের মাধ্যমে খাদ্য, চিকিৎসা, ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।

দীর্ঘমেয়াদী উদ্যোগ
মুসলিম বিশ্বকে জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, শিল্প ও অর্থনীতিতে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে হবে। পাশ্চাত্য নির্ভর শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তে এমন একটি কাঠামো গড়ে তুলতে হবে, যা মুসলিম সভ্যতার ঐতিহ্য ও আধুনিক জ্ঞানের সমন্বয়ে নির্মিত। ইসরায়েলের মতো শক্তিশালী দেশগুলোকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য মুসলিম দেশগুলোকে নিজেদের অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুত করতে হবে।

মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্বে ঐক্যের ঘাটতি রয়েছে। এ বিভাজন দূর করে একটি সম্মিলিত অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। প্রযুক্তির যুগে মুসলিম সমাজকে সাইবার নিরাপত্তা এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। জায়োনিস্ট প্রচারণার বিরুদ্ধে সাইবার শক্তি ব্যবহার করে তথ্য যুদ্ধ চালানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এ ছাড়া জাতিসংঘ, ওআইসি, এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে ইসরায়েলের অন্যায় কাজগুলোর বিরুদ্ধে কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করতে হবে। শুধু ব্যক্তি পর্যায়ে নয়, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসরায়েলি পণ্য ও সার্ভিস বয়কটের জন্য জোরালো উদ্যোগ নিতে হবে। ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করা এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের চাপ সৃষ্টি করতে হবে।

পাশাপাশি ফিলিস্তিনসহ গোটা মুসলিম বিশ্বের সংস্কৃতিকে পুনর্জাগরিত করতে হবে। সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতির মাধ্যমে ন্যায়বিচারের জন্য একটি জাগ্রত জনমত তৈরি করা সম্ভব।

ফিলিস্তিনের মুক্তি তাৎক্ষণিকভাবে অর্জন সম্ভব নয়। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী সংগ্রাম, যেখানে আমাদের প্রয়োজন ধৈর্য, ঐক্য ও সুসংগঠিত পরিকল্পনা। মুসলিম বিশ্বে রাজনৈতিক নেতৃত্বের অভাব ও বিভাজনমূলক মনোভাব এ আন্দোলনের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করছে। তাই ফিলিস্তিনের মুক্তি নিশ্চিত করতে হলে মুসলিম বিশ্বের একতা এবং জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

ফিলিস্তিনের জন্য লড়াইটা শুধু ভূমির নয়, এটি মানবিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লড়াই। ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা গোটা মুসলিম বিশ্বের নৈতিক দায়িত্ব এবং এটি আমাদের ঐতিহ্য, বিশ্বাস, ও মানবতার প্রতি দায়বদ্ধতার অংশ। ব্যক্তি ও সম্মিলিত উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা যদি এ লড়াইকে এগিয়ে নিতে পারি, তাহলে ফিলিস্তিন একদিন স্বাধীন হবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা/মেহেদী

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়