ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৯ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ক্ষমতাবানকে প্রশ্ন করা সাংবাদিকের কাজ: প্রেস সচিব

জবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৫১, ১১ জানুয়ারি ২০২৫   আপডেট: ১৯:৩৯, ১১ জানুয়ারি ২০২৫
ক্ষমতাবানকে প্রশ্ন করা সাংবাদিকের কাজ: প্রেস সচিব

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, “সাংবাদিকের কাজ হলো ক্ষমতাবানকে প্রশ্ন করা। সাংবাদিককে এ কাজ চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে। ছাত্রদল বা শিবির যার বিরুদ্ধেই রিপোর্ট হোক, প্রথমে দেখতে হবে সেটা সত্য কিনা। সত্য হলে তা মেনে নিতে হবে।”

শনিবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি আয়োজিত ‘জুলাই বিপ্লবে গণমাধ্যমের ভূমিকা ও পরবর্তী প্রত্যাশা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

জুলাই আন্দোলনে সাংবাদিকদের ভূমিকা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “জুলাই আন্দোলনে সাংবাদিকরা সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে যে ভূমিকা পালন করেছে, তা ঐতিহাসিক। এ আন্দোলনে দেশের টিভি, অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়াসহ অনেক সিটিজেন সাংবাদিক ভূমিকা রেখেছে। এর বিপরীতে গিয়ে একটা পক্ষ কনসেন্ট তৈরির চেষ্টা করেছে যে, এ আন্দোলনকারীরা বিটিভিতে আক্রমণ করেছে, মেট্রোরেলে হামলা করেছে। এরা-এরা সন্ত্রাসী, দুষ্কৃতকারী, এদেরকে এদেরকে মারো। তারা সন্ত্রাসী, তাদের হত্যা করা জায়েজ।”

“এসব হল মিডিয়ার ভাষা। এখানে যারা সাংবাদিকতা করেন বা করেন না, আপনাদেরও মিডিয়ার এ ভাষা বুঝতে হবে। মিডিয়া তার ভাষা দিয়ে নির্দেশ করে দেয়, ওনি সন্ত্রাসী, ওনি দুর্বৃত্ত।”

জুলাই বিপ্লবে গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে শফিকুল আলম বলেন, “অনেক গণমাধ্যম আন্দোলনকারীদের ‘জাতির শত্রু’ হিসেবে তুলে ধরেছিল। গণমাধ্যমের ভাষা ব্যবহার করে তখন শাসকদের কাছে বার্তা দেওয়া হচ্ছিল, এ আন্দোলনকারীদের দমন করা উচিত। আন্দোলনে ২ হাজার মানুষ মারা গেছে। যদি ফ্যাসিস্ট শক্তি জয়ী হতো, তাহলে ২ লাখ মানুষকে জেলে যেতে হত। তাদের রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হত। আর তখন ন্যারেটিভ হত যে, কিছু ‘দুর্বৃত্ত’ দেশজুড়ে অরাজকতা সৃষ্টি করেছে।”

শফিকুল আলম আরো বলেন, “জুলাই আমাদের মহত্তম সময়। এ সময় আমাদের জন্য পূর্বে আর কোনবার আসেনি। আমাদের সাংবাদিকরা ১৯৭১ এর যুদ্ধ কতটুকু দেখেছেন, আমি জানি না। তখন আমাদের ১ কোটি লোক শরনার্থী হয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। এদের মানবেতর জীবন ও দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে খুব কমই লেখা পাওয়া যায়। এসব নিয়ে আমরা স্টোরি করিনি।”

প্রেস সচিব বলেন, “আমাদের লেখালেখির অভ্যাসটা খুব কম। লেখার অভ্যাস বাড়াতে হবে। কার কতটুকু ভূমিকা লিখে রাখেন। প্রতি মুহূর্তে এ লেখা আমাদের নতুনভাবে আলোকিত করবে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকরা ঠিকই তাদের লেখা চালিয়ে গেছে। পত্রিকায় লিখেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছে। আবু সাঈদের শহীদ হওয়ার ভিডিওটা প্রকাশ হয়েছিল, ওটাও ছিল সিটিজেন জার্নলিজম। যারা আন্দোলনকে গণজোয়ারে পরিণত করতে ভূমিকা রেখেছিল, তাদের ব্যাপারে জানতে হবে। ঠিক একইভাবে যারা আমাদের ওপর আত্রমণ চালিয়েছিল, স্বৈরাচারী সরকারকে ইন্ধন জুগিয়েছিল, তাদের ব্যাপারেও জানতে হবে। আমাদের আবু সাঈদের শহীদের গল্পটা জানতে হবে।”

দেশের মধ্যে শেখ হাসিনা চোরতন্ত্র তৈরি করেছিলেন মন্তব্য করে প্রেস সচিব আরো বলেন, “বড় বড় কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দেওয়া ছিল তার কাজ। সে সময় বিদেশে টাকা পাচারকারীরা এখন সেই টাকায় প্রপাগাণ্ডা ছড়াচ্ছে। তারা প্রতিষ্ঠিত করতে চায় যে, এখানে এখন মৌলবাদী শক্তির উত্থান ঘটেছে, কোনো গণ-অভ্যুত্থান হয়নি। পরাজিত শক্তি আবার আপনাদের জঙ্গি বানাতে চায়। জুলাই-আগস্টে কার কী ভূমিকা ছিল, তা নিয়ে আরও ভালো করে জানার কাজ চলছে।”

তিনি আরও বলেন, “২০০৯ সালের ক্ষমতায় আসার পর প্রথম যে ন্যারেটিভ তৈরি করেছিল তা হলো ‘স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি’। এ পুরো সময়ে আওয়ামী বয়ানই বিদ্যমান ছিল। আন্দোলন করেছে ছাত্রদল, শিবির, বামপন্থীরা। কিন্তু এমনভাবে উপস্থাপন করেছে যে, বৈশ্বিকভাবে সন্ত্রাসী ও তালেবান হিসেবে। যার মানে তাকে মারা জায়েজ।”

এ সময় আরও বক্তব্য দেন, প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমিন, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রইছ উদ্দিন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. আসাদুল ইসলাম, জাস্টিস ফর জুলাই এর আহ্বায়ক সজিবুর রহমান প্রমুখ।

ঢাকা/লিমন/মেহেদী

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়