শাকসু নির্বাচনে ধীরগতি, তৎপর ছাত্র সংগঠনগুলো
শাবিপ্রবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
ডাকসু, রাকসু, জাকসুর নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হলেও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (শাকসু) নির্বাচনের প্রস্তুতি এগোচ্ছে ধীরগতিতে।
দীর্ঘ ২৭ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এ নির্বাচনকে ঘিরে প্রশাসন ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের মধ্যে নানামুখী তৎপরতা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে শাকসু গঠনতন্ত্র পুনঃপ্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে।
জানা গেছে, সব ছাত্র সংগঠন থেকে গঠনতন্ত্রের প্রস্তাবনা চাইলে ছাত্রদল ছাড়া সবাই জমা দিয়েছে। গত ১১ আগস্ট কমিটি সর্বদলীয় বৈঠক আহ্বান করলেও তা বাতিল হয়। পরবর্তীতে ১৮ আগস্ট কেবল ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। শিগগিরই সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের নিয়েও বৈঠক করার কথা রয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে খসড়া গঠনতন্ত্র প্রশাসনের কাছে জমা দেওয়া হবে। পরবর্তীতে সিন্ডিকেটে অনুমোদনের মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হবে।
ছাত্রদল ক্যাম্পাসে দলীয় ব্যানারে রাজনীতি করার সুযোগের শর্তে শাকসু নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী। অন্যদিকে, অন্যান্য সংগঠনগুলো নির্বাচনী প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে। নিজেদের প্যানেল সাজানো ও সম্ভাব্য জোট নিয়ে আলোচনাও চলছে।
শাবিপ্রবি ছাত্রদলের সভাপতি রাহাত জামান বলেন, “আমরা অবশ্যই শাকসুর পক্ষে। কিন্তু বর্তমানে ক্যাম্পাসে মুক্ত রাজনীতির পরিবেশ নেই। সেই পরিবেশ না থাকলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রকৃত ছাত্রনেতাদের চিনতে পারবে না। তাই আমরা প্রথমে ক্যাম্পাসে মুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করে প্রশাসনকে শাকসু নির্বাচন দিতে আহ্বান জানাই।”
শাবিপ্রবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি তারেক মনোয়ার বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরেই প্রশাসনের কাছে শাকসু নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছি। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল দেশের সব ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদ নির্বাচন চালুর করা। কিন্তু শাবিপ্রবি প্রশাসনের কার্যক্রমে আমরা ধীরগতি লক্ষ্য করছি।”
তিনি বলেন, “ক্ষমতার রাজনীতি চর্চার পাশাপাশি ছাত্রকল্যাণমূলক রাজনীতি করার স্বপ্ন দেখা উচিত সব ছাত্র সংগঠনের। তাই আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি, দ্রুত গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হোক, যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রাপ্য অধিকার ফিরে পায়।”
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শাবিপ্রবি শাখার সেক্রেটারি আজাদ শিকদার বলেন, “শাকসু নিয়ে কোনো ধরনের টালবাহানা মেনে নেওয়া হবে না। শাকসুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ক্যালেন্ডারের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, যাতে প্রতি বছর নির্দিষ্ট সময়েই নির্বাচন নিশ্চিত হয়। বর্তমানে শাকসু আয়োজনের ক্ষেত্রে প্রশাসনের ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।”
তিনি বলেন, “আমরা আগামী ১০ দিনের মধ্যে শাকসু বাস্তবায়নে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে চাই। একই সঙ্গে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতিকে গঠনমূলক করতে এবং শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে আমরা প্রশাসনের কাছে কয়েকটি সংস্কার প্রস্তাবনা দিয়েছি। এসব প্রস্তাবনা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বাস্তবায়ন করা উচিত বলে মনে করি।”
শাকসু গঠনতন্ত্র পুনঃপ্রণয়ন কমিটির সভাপতি ড. এছহাক মিয়া বলেন, “আমাদের কাজ চলমান রয়েছে। আমরা ছাত্রদল ব্যতীত প্রায় সবার কাছ থেকে গঠনতন্ত্রের প্রস্তাব পেয়েছি। এখন এগুলো পর্যালোচনা করে খসড়া চূড়ান্ত করে প্রশাসনের কাছে জমা দেওয়া হবে। আমরা আগামী সপ্তাহের মধ্যে জমা দিতে পারবো বলে আশা করছি।”
শাকসুর অগ্রগতি নিয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী বলেন, “ইতোমধ্যে শাকসু গঠনতন্ত্র পুনঃপ্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা কাজ করছেন এবং তারা গঠনতন্ত্রের চূড়ান্ত খসড়া জমা দিলে আমরা সিন্ডিকেটে উত্থাপন করে চূড়ান্ত করব।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা দ্রুত শাকসু আয়োজন করতে চাই। কিন্তু প্রশাসন ছাত্র সংগঠনগুলো থেকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা পাচ্ছে না। দ্রুত শাকসু আয়োজনে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।”
ঢাকা/ইকবাল/মেহেদী