ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

প্রাণ ফিরে পেতে যাচ্ছে রাকসু, রাত পোহালেই ভোট

ফাহমিদুর রহমান ফাহিম, রাবি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০০:০৫, ১৬ অক্টোবর ২০২৫   আপডেট: ০১:৫২, ১৬ অক্টোবর ২০২৫
প্রাণ ফিরে পেতে যাচ্ছে রাকসু, রাত পোহালেই ভোট

ফাইল ফটো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেটের ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের প্রচার শেষ হয়েছে মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাত ১২টায়। প্রায় ২০ দিনের প্রচার শেষে বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে হবে ভোট গ্রহণ, পছন্দের প্রতিনিধি বেছে নেওয়ার অপেক্ষায় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় ছাত্র প্রতিনিধিত্বের শূন্যতা নিয়ে রাবির কেটে গেছে ৩৫ বছর; অবশেষে সেই খরা কাটতে চলেছে। নির্বাচিত রাকসু পেতে যাচ্ছে দেশের উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় এই বিশ্ববিদ্যালয়।

আরো পড়ুন:

ভোট গ্রহণ কেন্দ্র করে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ  করেছে রাকসুর নির্বাচন কমিশন। ভোট ও ফলাফল ঘিরে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে; মোতায়েন করা হয়েছে ২ হাজার পুলিশ, ছয় প্লাটুন বিজিবি ও ১২ প্লাটুন র‍্যাব। ক্যাম্পাসের গেটগুলোতে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। ভোটের দিন বৃহস্পতিবার এবং আগে ও পরের দুই দিন বহিরাগত প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে রাবি প্রশাসন।

৪৩ পদে লড়ছেন ৯১৮ প্রার্থী

রাকসুর ২৩টি পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২৪৭ জন, যার মধ্যে নারী ২৬ জন। সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধির পাঁচটি পদে ৫৮ জন এবং হল সংসদের ১৫টি পদে ১৭টি হলে ৫৯৭ প্রার্থী লড়াই করছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের এই সংখ্যা রাকসু নির্বাচনের ইতিহাসে সর্বাধিক। এর মধ্যে ভিপি পদে ১৮, জিএস পদে ১৩ এবং এজিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৬ জন। বাকি ২০টি পদে ২০০ জন লড়াই করছেন।৯টি ভবনে ১৭টি কেন্দ্রের ৯৯০টি বুথে প্রত্যেক ভোটারের রাকসু ও হল সংসদের মোট ৪৩টি পদে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার সুযোগ থাকছে।

ভোটার ২৮ হাজার ৯০১

এবার রাকসু নির্বাচনে মোট ভোটার ২৮ হাজার ৯০১ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ১১ হাজার ৩০৫ জন এবং ছাত্র ভোটার ১৭ হাজার ৫৯৬ জন।

যেখানে ভোট দেবেন শিক্ষার্থীরা

এবারই প্রথম আবাসিক হলের বাইরে রাকসু ও সিনেটের ছাত্র প্রতিনিধি ও হল সংসদের ভোটগ্রহণ হচ্ছে। ক্যাম্পাসের নির্ধারিত ৯টি ভবনে শিক্ষার্থীরা ভোট দেবেন।

সৈয়দ ইসমাঈল হোসেন সিরাজী একাডেমিক ভবনে ভোট দেবেন জুলাই ৩৬ ও রোকেয়া হলের শিক্ষার্থীরা। এই দুই হলে ভোটার ৪ হাজার ৬৬৫ জন। মমতাজ উদ্দিন কলা ভবন নির্ধারণ করা হয়েছে মন্নুজান হলের জন্য, এই হলে ভোট ২ হাজার ৩৭৮টি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনের তিনটি কেন্দ্রে ভোট দেবেন তাপসী রাবেয়া, বেগম খালেদা জিয়া, রহমতুন্নেসা হলের শিক্ষার্থীরা; এই তিন হলে ভোটার ৪ হাজার ২৮২ জন।

জাবির ইবনে হাইয়ান বিজ্ঞান ভবনে দুটি কেন্দ্রে ভোট দেবেন শহীদ হবিবুর রহমান ও শামসুজ্জোহা হলের ভোটাররা, যাদের  সংখ্যা ৪ হাজার ২৫৫। জামাল নজরুল বিজ্ঞান ভবনের দুটি কক্ষে ভোট দেবেন বিজয় ২৪ ও নবাব আবদুল লতিফ হলের ভোটাররা। এই দুই হলে ভোটার ২ হাজার ৬৪৭ জন।

সত্যেন্দ্রনাথ বসু অ্যাকাডেমিক ভবনে ভোট দেবেন ফজলুল হক ও মতিহার হলের ভোটাররা, যাদের সংখ্যা ২ হাজার ৮৬৪। জগদীশ চন্দ্র ভবনে ভোট দেবেন মাদার বখশ ও সোহরাওয়ার্দী হলের ৩ হাজার ৭৫৫ জন ভোটার।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনে সৈয়দ আমীর আলী ও শাহ মখদুম হলের ৩ হাজার ৪২ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।

ভোটারদের মানতে হবে যেসব নিয়ম

রাকসু নির্বাচন কমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে ভোটকেন্দ্রে প্রার্থীদের করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রত্যেক ভোটারকে পরিচয়পত্র সঙ্গে আনতে হবে। এক কেন্দ্রের ভোটার অন্য কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার পূর্বে ভোটার তালিকায় নাম, ভোটকেন্দ্র ও টেবিল নম্বর যাচাই করে নিতে হবে। ভোট দেওয়ার আগে আঙুলে অমোচনীয় কালি দেওয়া হবে।

তিনটি করণীয় ও চারটি বর্জনীয় বিষয় ভোটারদের মেনে চলতে বলা হয়েছে। এগুলো হলো: শান্তিপূর্ণভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে হবে; আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কমিটি ও নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে; পছন্দের প্রার্থীর নামের পাশে চারকোণা ঘরে সরবরাহকৃত সাইনপেন দিয়ে ক্রস (×) চিহ্ন দিতে হবে; ভোট প্রদান শেষে ভোটকেন্দ্রের ৫০ মিটারের মধ্যে অবস্থান করা যাবে না; ভোটকেন্দ্রে প্রচার-প্রচারণা চালানো যাবে না; ভোটকেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা বা ভীতি প্রদর্শন করা যাবে না; ভোটকেন্দ্রে মোবাইল, ক্যামেরা বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস সঙ্গে আনা যাবে না।

সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ৭ ঘণ্টা চলবে এই ব্যালট যুদ্ধ। তবে ৪টার মধ্যে যারা ভোটকেন্দ্রের আঙিনায় প্রবেশ করবেন, যত সময়ই লাগুক না কেন, তারা ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন। সব কেন্দ্রে একজন ভোটার গড়ে ১০ মিনিট সময়ের মধ্যে কোনো রকম বিঘ্ন ছাড়াই ভোট দিতে সক্ষম হবেন বলে আশা করছে নির্বাচন কমিশন।

ভোট গণনা হবে ছয়টি অপটিক্যাল মার্ক রিকগনিশন (ওএমআর) মেশিনে। বিশ্ববিদয়্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি জায়গায় এলইডি স্ক্রিনে ফলগণনা সরাসরি দেখানো হবে। সবশেষে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে সব কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করা হবে।

ভোট গণনার পুরো প্রক্রিয়া সিসিটিভি ক্যামেরার আওতাভুক্ত থাকবে।

শীর্ষপদে এগিয়ে যারা

এবারের রাকসু ভোটে আংশিক ও পূর্ণাঙ্গ মিলিয়ে অন্তত ১১টি প্যানেল অংশ নিচ্ছে। এর বাইরে স্বতন্ত্র হিসাবে লড়ছেন প্রার্থীদের আরেকটি অংশ। ছাত্রদল, ছাত্রশিবির এবং স্বতন্ত্র কয়েকজন প্রার্থীরা এগিয়ে আছেন বলে জরিপ ও শিক্ষার্থীদের আলোচনায় উঠে এসেছে। এর বাইরে রাকসুর একমাত্র নারী ভিপি প্রার্থী তাসিন খান, আধিপত্যবাদ বিরোধী ঐক্য, ছাত্র-অধিকার পরিষদ ও বামজোট সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরাও আলোচনায় রয়েছেন।

জরিপ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক মানবাধিকার গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি সংস্থা সোচ্চার-টর্চার ওয়াচডগ বাংলাদেশ এক সংবাদ সম্মেলনে রাকসু নিয়ে একটি জরিপের ফল প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে শীর্ষ তিন পদে সবকটিতেই এগিয়ে রয়েছে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল। জরিপে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে যথাক্রমে স্বতন্ত্র ও ছাত্রদল সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেলের প্রার্থীরা রয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ হাজার ২৮৪ আবাসিক ও অনাবাসিক সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে জরিপ পরিচালনা করেছে সোচ্চার। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৭৯ দশমিক ৬ শতাংশ রাকসুতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। ছাত্রীদের মধ্যে এই হার ৬৯ দশমিক ৪ এবং ছাত্রদের মধ্যে ৮৬ দশমিক ৫।

৮৫ দশমিক ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। ৫৫ দশমিক ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন, রাকসু নির্বাচনে ডাকসু ও জাকসু ফলাফলের প্রভাব পড়বে।

হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস

ভোটকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মাঝে দেখা গেছে উৎসবের আমেজ। এবারের রাকসু ভোটে আংশিক ও পূর্ণাঙ্গ মিলিয়ে অন্তত ১১টি প্যানেল অংশ নিচ্ছে। এর বাইরে স্বতন্ত্র হিসেবে লড়ছেন প্রার্থীদের আরেকটি অংশ। নির্বাচনে এবার অনেকটা ভিন্ন পরিস্থিতি। কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারছে না, শীর্ষ তিন পদে কে জয়ী হবেন। তবে ধারণা করা হচ্ছে, রাকসুর শীর্ষ তিন পদসহ অধিকাংশ পদে হবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই ।

সবার নজর ভিপি ও জিএস পদের দিকে। সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ছাত্রশিবির মনোনীত মোস্তাকুর রহমান জাহিদ ও ছাত্রদল সমর্থিত শেখ নূর উদ্দীন আবীরের মধ্যে মূল লড়াই হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ছাত্র অধিকারের মেহেদী মারুফও আছেন আলোচনায়।

সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ছাত্রশিবির মনোনীত ফাহিম রেজার সঙ্গে মূল লাড়াই হতে পারে সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দীন আম্মারের। তবে ছাত্রদলের নাফিউল ইসলাম জীবনও আলোচনায় রয়েছেন। সে ক্ষেত্রে এই পদে হতে পারে ত্রিমুখী লড়াই।

এজিএস পদে ছাত্রদলের জাহীন বিশ্বাস এষার সঙ্গে শিবিরের সালমান সাব্বির তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাসও পাওয়া যাচ্ছে। মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সরেজমিন ক্যাম্পাস ঘুরে রাবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

সর্বোচ্চ ১৫ ঘণ্টার ভেতরে ফলাফল

রাকসুর নির্বাচন কমিশনার জানিয়েছেন, নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এরপর সব কেন্দ্রের ব্যালট পেপার নিয়ে আসা হবে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে। ভিন্ন ভিন্ন বাক্সের ব্যালট বের করে ১০০টি করে আলাদা বান্ডেল করা হবে। প্রতিটি বান্ডেল ওএমআর মেশিনে দিয়ে গণনা করা হবে। বিশেষজ্ঞ প্যানেল আধুনিক এই ফলাফল গণনা পর্যবেক্ষণ করবেন। 

সর্বমোট তিনটি ধাপে চূড়ান্ত ফলাফল তৈরি হবে। একটি হলের ফলাফল তৈরি হলে অন্য হলেরটা শুরু হবে। ১৭টি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণায় ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা লাগতে পারে।

ভোটকেন্দ্রে থাকবে সিসিটিভি, সরাসরি ফলাফল প্রদর্শন ও কেন্দ্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা

নির্বাচন কমিশনার জানিয়েছেন, ১৭টি হলের জন্য ১৭টি কেন্দ্রে ৯৯০টি বুথে ভোটগ্রহণ হবে। ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রের ৪০০ গজের একটি বলয় করে চৌহদ্দি নির্মাণ করা হবে। এর ভেতর কোনো প্রার্থী প্রবেশ করতে এবং প্রচার চালাতে পারবেন না। প্রতিটি কেন্দ্র থাকবে সম্পূর্ণ সিসিটিভির আওতায়।

তিনি জানান, প্রার্থীরা ভোটারদের যে প্রার্থী তালিকা দেবেন, সেটা নির্বাচনি প্রচার শেষ হওয়ার পরে না দেওয়ায় নিরুৎসাহিত করা হলো। ভোটগণনা কক্ষের অবস্থা সাংবাদিকরা তাদের নিজস্ব সংবাদমাধ্যমে সম্প্রচার করতে পারবেন। ভোটগণনার সব প্রক্রিয়া মিলনায়তনের সামনে বড় স্ক্রিনে দেখানো হবে।

তিন স্তরে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার জাল

রাকসু, হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন সামনে রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি)। ভোটের দিন ২ হাজার পুলিশ, ১২ প্লাটুন র‍্যাব, ছয় প্লাটুন বিজিবি, গোয়েন্দা সংস্থা, বিএনসিসি ও স্কাউট সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন বলে জানিয়েছেন আরএমপি কমিশনার আবু সুফিয়ান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান তিনটি প্রবেশমুখে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্টরা পরিচয়পত্র প্রদর্শনের পর তারা প্রবেশ করতে পারবেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, “আমরা চাই সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন হোক। এ জন্য তিন বাহিনীর সঙ্গে আমাদের নিয়মিত সমন্বয় হচ্ছে। হলগুলোতে যাতে কোনো বহিরাগত না থাকে বা কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়, সেজন্য তল্লাশি কার্যক্রম চালানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি।”

ইতিহাসের পাতায় রাকসু

১৯৫৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৩ বছর পর প্রথম ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় ১৯৫৬-৫৭ মেয়াদে। তখন এই সংসদের নাম ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (রাকসু)। ১৯৬২ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বা রাকসু নামে যাত্রা শুরু করে। এরপর নির্বাচনের হয়েছে মাত্র ১৪ বার।

সর্বশেষ ১৯৯০ সালে রাকসু নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন রুহুল কবির রিজভী। তিনি রাবি ছাত্রদলের সভাপতির দায়িত্ব পালনের পর কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র। 

১৯৬২ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ২৮বার নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও হয়েছে মাত্র ১৪ বার।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর রাকসুর সহসভাপতি (ভিপি) হিসেবে নির্বাচিত হন হায়দার আলী, নূরুল ইসলাম ঠান্ডু, ফজলুর রহমান পটল, ফজলে হোসেন বাদশা, রাগিব আহসান মুন্না। ৯০-এর পর থেকে রাকসু নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়। বিভিন্ন সময় ছোটখাটো আন্দোলন, সর্বশেষ ২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচনের পর কিছু দাবি উঠলেও রাকসু আর কার্যকর দেখা যায়নি। ২০২৪ সালে সরকার পতনের পর পরিবর্তীত রাজনৈতিক পরিস্থিতির দাবি এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে নতুন দায়িত্ব পাওয়া শিক্ষকদের ইচ্ছায় প্রায় তিন যুগ পর রাকসু ভোটের ঢাক বেজে ওঠে। আজ তার সমাপণী হওয়ার কথা।

রাকসু ভবনে চলছে সংস্কার

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পেছনে রাকসুর দোতলা ভবন। ১৯৯২ সালের পর থেকে রাকসু অচল থাকায় এতদিন ভবনটির কক্ষ ব্যবহার করে আসছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন। দোতলায় ভিপির কক্ষটি ব্যবহার হচ্ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ইউনিটির কার্যালয় হিসেবে। কয়েকদিন হলো সব সংগঠনকেই ভবন ছাড়তে হয়েছে।

বুধবার সকাল থেকে প্রতিটি কক্ষে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও ঘষামাজার কাজ করছেন শ্রমিকরা। দেয়ালে দেয়ালে পড়ছে নতুন রঙ। শ্রমিকদের রাতেও কাজ করতে দেখা গেছে।

আব্দুল ওয়াহাব নামের একজন ঠিকাদার জানান, তারা মোট পাঁচজন ঠিকাদার কাজ করছেন। মঙ্গলবার রাতে তাদের কাজ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। বুধবার সকাল ৮টা থেকে তারা ৫০ জন শ্রমিক নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যে কাজ শেষ করতে বলেছে প্রশাসন। এই সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হলে রাতেও তারা কাজ করবেন। শুক্রবার সকালের মধ্যে সব কাজ শেষ হবে বলে তারা আশা করছেন।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, “আমরা খুবই আশাবাদী এবং নির্বাচনী পরিবেশও অত্যন্ত সুন্দর। ভালো লাগছে এটা দেখে যে, প্রতিদ্বন্দ্বিতার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেই প্রচার চালাচ্ছে। টুকটাক যে দুই-একটা ব্যত্যয় ঘটছে না তা নয়। তবে বড় কোনো ঘটনা এখনো ঘটেনি।”

তিনি বলেন, “সিন্ডিকেট থেকে যে নির্বাচন কমিশন করে দেওয়া হয়েছে, সেটা অত্যন্ত শক্তিশালী। তারা এখনো পর্যন্ত ধৈর্য রেখে কাজ করছেন। এটা যারা উপলব্ধি করতে পারছেন না, তারা শিগগিরই বুঝতে পারবেন। নির্বাচন কমিশন নানা অপপ্রচার, খারাপ কথা হজম করেছেন শুধু শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে।”

তিনি আরো বলেন, “আচরণবিধির বিষয়টা সবার খেয়াল রাখা উচিত। এখানে সবাই সচেতন নাগরিক, সুতরাং বারবার এই কথাটা বলতেও খারাপ লাগে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে রাকসুর প্রয়োজন কোথায়, সেটা আমদের বুঝতে হবে। আগে শিক্ষার্থীদের নেতাদের গুনে চলতে হতো। কিন্তু রাকসু হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের আর নেতাদের গুনে চলতে হবে না।”

ঢাকা/মেহেদী

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়