ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

পিটিআই: বাংলা-ইংরেজিতে পড়াশোনা, ক্লাস নিচ্ছেন গণিতে

আবু বকর ইয়ামিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২৪, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৫:২৯, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০
পিটিআই: বাংলা-ইংরেজিতে পড়াশোনা, ক্লাস নিচ্ছেন গণিতে

প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট এর ফটক

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে দক্ষ করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তাদের একাডেমিক শিক্ষা ও পেশাগত প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। এজন্য রয়েছে জেলাভিত্তিক প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (পিটিআই)। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের অভাব রয়েছে। যে কারণে স্কুল শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ যথাযথ হচ্ছে না এবং অর্জিত প্রশিক্ষণ স্কুলগুলোতে সঠিকভাবে প্রয়োগ হচ্ছে না।

পিটিআই নিয়োজিত একাধিক প্রশিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,  প্রশিক্ষকরা এক বিষয়ের ওপর অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করে অন্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। বাংলার অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করা একজন প্রশিক্ষক ক্লাস নেন ইংরেজিতে। আবার ইংরেজিতে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করা আরেকজন গণিত বিষয়ের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পিটিআই প্রশিক্ষক জানান, আমি বাংলায় অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করেছি। কিন্তু প্রশিক্ষক হিসেবে আমাকে গণিতের ক্লাস নিতে হয়। আসলে পরিস্থিতির শিকার হয়ে ক্লাস নিতে হয়। এই জায়গায় বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের প্রয়োজন।

মঞ্জুরুল ইসলাম নামের একজন প্রশিক্ষক জানান, বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ থাকলে তিনি তার অর্জিত জ্ঞান ভালোভাবে প্রয়োগ করতে পারেন। এক্ষেত্রে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের বিকল্প নেই।

জানা গেছে, বাংলাদেশে পঞ্চাশের দশক থেকে প্রাথমিক শিক্ষার শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (পিটিআই) পর্যায়ক্রমে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং পিটিআই-তে শিক্ষকদের জন্য ১ বছর মেয়াদি কোর্স চালু করা হয়। এই কোর্সটি সার্টিফিকেট ইন এডুকেশন বলে পরিচিত। এক বছর মেয়াদি সার্টিফিকেট ইন এডুকেশন (সিইনএড) কোর্সটি পরিবর্তন করে ১৮ মাস মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন প্রাইমারি এডুকেশন (ডিপিএড) প্রর্বতন করা হয়েছে। 

বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি সামসুদ্দিন মাসুদ বলেন, বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকদের মাধ্যমিক প্রশিক্ষণ না দেওয়ার কারণে শিক্ষকরা যথাযথভাবে বুঝিয়ে ক্লাস নিতে সক্ষম হচ্ছে না। 

তিনি বলেন, পিটিআইগুলোতে প্রশিক্ষক হিসেবে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ দিলে সহকারী শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের মান বাড়বে। শিক্ষকরা অর্জিত প্রশিক্ষণ ক্লাসে গিয়ে প্রয়োগ করতে সক্ষম হবেন।

জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ এম মনজুর আলম বলেন, পিটিআই ট্রেনিং সেন্টারগুলোতে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক না থাকায় ক্লাস শিক্ষকরা সঠিক প্রশিক্ষণ পাচ্ছে না। এ কারণে বিদ্যালয়ে সঠিক শিক্ষা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে শিশুবান্ধব শিক্ষা নিশ্চিত করতে আমরা শিক্ষকদের মানসম্মত প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে চাই। এ কারণে দেশের সব পিটিআইতে বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এটি বাস্তবায়ন করতে আমরা দ্রুত একটি প্রস্তাবনা তৈরি করবো। অনুমোদন হলে নতুনভাবে নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন প্রক্রিয়া শেষ করে পিটিআইগুলোতে বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রমতে, সারাদেশে মোট ৬৭টি পিটিআই রয়েছে। তবে বগুড়া, চট্টগ্রাম ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২টি করে পিটিআই রয়েছে। এছাড়াও সারাদেশে পিটিআই স্কুল রয়েছে ৬৬টি।

ইয়ামিন/জেডআর

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়