ঢাকা     রোববার   ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৫ ১৪৩১

কেন দক্ষিণী সিনেমার সঙ্গে পেরে উঠছেন না সালমান শাহরুখ অক্ষয়

বিনোদন ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩৭, ৩০ আগস্ট ২০২২   আপডেট: ১৪:৪০, ৩০ আগস্ট ২০২২
কেন দক্ষিণী সিনেমার সঙ্গে পেরে উঠছেন না সালমান শাহরুখ অক্ষয়

এখনো বিশ্ব দরবারে ভারতীয় সিনেমা বলতে অনেকে বলিউড সিনেমাকেই বোঝেন। নিজস্ব স্বকীয়তায় হিন্দি সিনেমা পৌঁছেছে অনন্য উচ্চতায়। অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ, সালমান কিংবা আমির খান হয়েছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন তারকা।

কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে ভারতীয় দক্ষিণী সিনেমার সঙ্গে খুব একটা পেরে উঠছে না বলিউড। বড় বড় প্রোডাকশন হাউজ, তারকাখ্যাতি কিংবা মার্কেটিং পলিসি— সব কিছুই যেন দক্ষিণীদের কাছে ম্লান হয়ে যাচ্ছে। এক সময় যে প্রেক্ষাগৃহগুলো হিন্দি সিনেমাপ্রেমীদের হর্ষধ্বনিতে মুখরিত থাকত, সেখানে এখন দক্ষিণী ভাষার হিন্দি ডাবিং সিনেমার জয়জয়কার। এস এস রাজামৌলি পরিচালিত ‘বাহুবলি’, ‘ট্রিপল আর’, আল্লু অর্জুন অভিনীত ‘পুষ্পা’ ও কন্নড় সুপারস্টার যশ অভিনীত ‘কেজিএফ’ তার প্রকৃত উদাহরণ।

ভারতের দক্ষিণী একটি মিডিয়ার প্রতিবেদনে জানা গেছে, ২০২১ সালের ভারতীয় সিনেমার মোট আয়ের ৬২ শতাংশ এসেছে দক্ষিণী সিনেমা থেকে। দিন দিন এই হার বাড়ছে। চলতি বছর ‘কেজিএফ: চ্যাপটার টু’ হিন্দি বক্স অফিসে আয় করেছে ৪৩৫ কোটি রুপি। এছাড়া ‘ট্রিপল আর’ ও ‘পুষ্পা: দ্য রাইজ’ সিনেমার হিন্দি ডাবিং থেকে আয় যথাক্রমে ২৬৫ ও ১০৬ কোটি রুপি। সেই তুলনায় খুব বেশি সাড়া ফেলতে পারেনি বলিউড সিনেমা। শুধু ‘কাশ্মীর ফাইলস’, ‘ভুলভুলাইয়া টু’, ‘গাঙ্গুবাঈ কাঠিয়াওয়ারি’ সিনেমাগুলো ব্যবসাসফল হয়েছে।

সিনেমা বিশ্লেষকরা মনে করছেন মার্কেটিং পলিসি ও প্রি-প্রোডাকশনের ব্যাপারে দুরদর্শিতায় পরিচয় দিচ্ছেন দক্ষিণের নির্মাতারা। বলিউড সিনেমায় গল্পের তেমন কোনো হেরফের দেখা যাচ্ছে না। অন্যদিকে, করোনা মহামারির পর দর্শক কী ধরনের সিনেমা চাইছেন সেদিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন দক্ষিণের প্রযোজকরা।

এছাড়া সম্প্রতি আমির খান অভিনীত ‘লাল সিং চাড্ডা’, অক্ষয় কুমারেরর ‘সম্রাট পৃথ্বীরাজ’ ‘রক্ষা বন্ধন’ সিনেমাগুলো আশানুরূপ ব্যবসা করতে পারেনি। এক্ষেত্রে অনেকেই বয়কট ট্রেন্ডকে দায়ী করলেও তা মানতে চান না অনেকেই। বিশ্লেষকদের দাবি, গল্প পছন্দ হলে বয়কটের বিষয়টি খুব বেশি গুরুত্ব পায় না। কয়েক বছর আগেও রণবীর সিং ও দীপিকা পাড়ুকোন অভিনীত ‘পদ্মাবত’ সিনেমা নিয়ে অনেক জল ঘোলা হয়েছে। বয়কটের ডাকও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মুক্তির পর বক্স অফিসে বাজিমাত করে সঞ্জয় লীলা বানসালি পরিচালিত এই সিনেমা।

এক জরিপে দেখা গেছে, করোনা মহামারির আগে বলিউডে গড়ে ৭০-৮০ টি সিনেমা মুক্তি পেতো। এ থেকে ৩০০০-৫০০০ কোটি রুপি আয় হতো। কিন্তু মহামারির পর এই অঙ্কে বেশ বড়সড়ো পরিবর্তন এসেছে। গত বছর জানুয়ারি থেকে চলতি বছর ১১ আগস্ট পর্যন্ত মোট ৬১ টি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণী ও ইংরেজি সিনেমাগুলোর হিন্দি ডাবিং ও বলিউড সিনেমা রয়েছে। এ থেকে মোট আয় হয়েছে ৩২০০ কোটি রুপি। এর ৪৮ শতাংশ আয় এসেছে ১৮টি ডাবিং সিনেমা থেকে।

হঠাৎ করে বলিউডের এই দুর্দশার কারণ হিসেবে সিনেমা বিশ্লেষকরা বর্তমান প্রজন্মের দর্শকের পছন্দকে গুরুত্ব না দেওয়া ও বাজে সিনেমা নির্মাণকেই দায়ি করছেন। এছাড়া অতিরিক্ত টিকিটের দাম একটি কারণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সেন্ট্রাল ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার এক গবেষণায় দক্ষিণী সিনেমার সাফল্য ও বলিউডের ব্যর্থতার কয়েকটি কারণ উঠে এসেছে। এগুলো হলো:

টিকিটের দাম বৃদ্ধি:
সিঙ্গেল স্ক্রিনের প্রেক্ষাগৃহ ভেঙে অধিকাংশ মাল্টিপ্লেক্স তৈরি হচ্ছে। এর ফলে টিকিটের দাম প্রায় ৪ গুণ বেড়েছে। এদিক থেকে দক্ষিণী সিনেমা এগিয়ে রয়েছে কারণ ভারতের মোট সিঙ্গেল স্ক্রিন গ্রেক্ষাগৃহের ৬২ শতাংশ দক্ষিণে অবস্থিত। নর্থে ১৬ শতাংশ ও পশ্চিম অংশে ১০ শতাংশ সিঙ্গেল স্ক্রিন প্রেক্ষাগৃহ রয়েছে।

হিন্দি সিনেমার ওপর অতিরিক্ত কর:
টিকিটের দাম বৃদ্ধির আরও একটি কারণ অতিরিক্ত কর। গবেষণায় উঠে এসেছে, হিমাচল প্রদেশ, পাঞ্জাব ও রাজস্থান বাদে ভারতের বাকি রাজ্যগুলোতে বিনোদন কর ১৫ থেকে ৬০ শতাংশ। বলিউডের মূল মার্কেট মুম্বাইয়ে হিন্দি সিনেমার জন্য ৪৫ শতাংশ কর দিতে হয়। উত্তর প্রদেশে এর পরিমাণ ৬০ শতাংশ। কিন্তু আঞ্চলিক সিনেমার ক্ষেত্রে তা ব্যতিক্রম। যেমন: কন্নড় সিনেমার জন্য কর্ণাটকে কোনো কর দিতে হয় না। একইভাবে তামিলনাড়ুতেও তামিল সিনেমার কর শূন্য শতাংশ। অপরদিকে, অন্ধ্র প্রদেশে তেলেগু সিনেমার জন্য ১৫ শতাংশ কর দিতে হয়।

অভ্যাসের পরিবর্তন:
জরিপ অনুযায়ী, বর্তমানে হিন্দি সিনেমার দর্শকদের বেশিরভাগই বাড়িতে বসে সিনেমা দেখতে পছন্দ করেন। এজন্য বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মকে বেছে নিচ্ছেন তারা। এই অভ্যাসের পরিবর্তনও বলিউড সিনেমার লোকসানের একটি কারণ। অন্যদিকে, দক্ষিণে তরুণ প্রজন্ম ছাড়াও প্রবীণ দর্শকরা এখনো প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে সিনেমা দেখেন।

প্রযুক্তি ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের আধিপত্য:
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর জনপ্রিয়তার কারণেও হিন্দি সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করছেন গবেষকরা। বর্তমানে ৭-৯ শতাংশ মানুষের বিনোদনের খোরাক আসছে এই মাধ্যমগুলো থেকে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৩ সালের মধ্যে ভারতে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীর সংখ্যা হবে ৫০ কোটি। এছাড়া স্মার্টটিভি ও ক্রোমকাস্টের মাধ্যমে ঘরে বসে সিনেমা দেখাও অনেকের কাছে প্রিয় হয়ে উঠছে।

বলিউডে নিম্নমানের গল্প নিয়ে সিনেমা:
গত কয়েক বছর ধরে হিন্দি সিনেমার গল্প দর্শক ও বিশ্লেষকদের খুব বেশি সন্তুষ্ট করতে পারেনি। গবেষকদের মতে, ২০২১ সালে জানুয়ারির পর থেকে মুক্তি পাওয়া ৪৩টি সিনেমার আইএমডিবি-এর গড় রেটিং ৫.৯। অন্যদিকে, দক্ষিণী সিনেমার হিন্দি ডাবিং করা সিনেমার রেটিং ৭.৩।

/মারুফ/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়