ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

খোদাপ্রেমের অপূর্ব নিদর্শন তারাবির নামাজ

প্রকাশিত: ১২:৫৫, ২৭ মার্চ ২০২৩  
খোদাপ্রেমের অপূর্ব নিদর্শন তারাবির নামাজ

মাহে রমজানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত তারাবির নামাজ। সারাদিন সিয়াম সাধনায় রত থেকে রাতে এশার নামাজের পর সকল ক্লান্তি উপেক্ষা করে দীর্ঘ বিশ রাকাত তারাবির নামাজ আদায়ে মশগুল হওয়া মহান স্রষ্টার প্রতি গভীর প্রেম ও পূর্ণ আনুগত্যের অপূর্ব নিদর্শন। 

প্রকৃত মুমিন তারাবির কষ্টে আনন্দ উপভোগ করেন এবং কোরআন নাযিলের মাসে তারাবির নামাজে দাঁড়িয়ে হাফেজ সাহেবগণের মধুমাখা কোরআনের তিলাওয়াত শ্রবণে আত্মা সতেজ এবং শীতল করেন। তারাবির নামাজ যদিও রোজার অংশ নয়, কিন্তু মাহে রমজানের পূর্ণ বরকত অর্জনে তারাবির নামাজের বিকল্প নেই। তারাবির নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদা। রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজে তারাবির নামাজ পড়তেন এবং সাহাবায়ে কেরামদের পড়তে উৎসাহিত করতেন। 

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) তারাবির নামাজের ব্যাপারে সাহাবিদের উৎসাহিত করতেন। কিন্তু জোরালো আদেশ দিতেন না। তিনি বলতেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াব অর্জনের আশায় কিয়াম করবে (অর্থাৎ তারাবির নামাজ আদায় করবে) তার অতীতের সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে। (বুখারী, মুসলিম)

হযরত রাসুলে কারীম কারীম (সা.) আরো ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াব অর্জনের আশায় রোজা রাখেন, তারাবির নামাজ পড়েন এবং কদরের রাতে জাগ্রত থেকে আল্লাহর ইবাদত করেন, তাঁর পূর্বের সব গুনাহ মাফ করা হবে। (বুখারী, মুসলিম)

রাসূলুল্লাহ (সা.) নিয়মিত মসজিদে তারাবির নামাজ আদায় করতেন না এই আশঙ্কায় যে, উম্মতের উপর তা ওয়াজিব হয়ে যাবে এবং উম্মতের জন্য কষ্টকর হবে। তবে একাধিক বিখ্যাত হাদিস গ্রন্থ দ্বারা একথা প্রমাণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) রমজানের রাতে বিশ রাকাত তারাবির নামাজ আদায় করতেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ (সা.) বিশ রাকাত তারাবি পড়তেন অতঃপর বিতর পড়তেন। (বায়হাকী, মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা)

আর সাহাবাগণ এশার নামাজের পর অধিকাংশ সময় একাকী পূর্ণ বিশ রাকাত তারাবির নামাজ আদায় করতেন। আবার কখনো জামাতবদ্ধ হয়েও পড়তেন।

রাসুলে কারীম (সা.) এর ওফাতের পর হযরত আবু বকর (রা.) এর খেলাফতকাল এবং হযরত ওমর (রা.) খেলাফতের প্রথমদিকে এই নিয়মই বহাল ছিল। অতঃপর রমজানের কোনো এক রাতে খলিফা হযরত ওমর (রা.) মসজিদে নববীতে গমন করে দেখলেন, সাহাবায়ে কেরাম ছোট ছোট জামাতবদ্ধ হয়ে বিক্ষিপ্তভাবে তারাবির নামাজ আদায় করছেন। অতঃপর হযরত ওমর (রা.) তৎকালীন সকল সাহাবায়ে কেরামের পরামর্শ ও সম্মতিক্রমে বিখ্যাত সাহাবী হযরত উবাই ইবনে কা’ব (রা.) কে ইমাম নিযুক্ত করে সকলকে তাঁর পেছনে তারাবির নামাজ পড়তে আদেশ দেন। (বুখারী) 

সেদিন থেকে হযরত উসমান (রা.) হযরত আলী (রা.) ও হযরত ইবনে মাসউদ (রা.) সহ সকল সাহাবাগণের ইজমার ভিত্তিতে বাইতুল্লাহ, মসজিদে নববীসহ বিশ্বের প্রায় সব মসজিদে পূর্ণ ২০ রাকাত তারাবির নামাজ ‘জামাতের সাথে’ আদায় করার রীতি প্রচলিত হয়ে আসছে; যা আজ অবধি বিদ্যমান। লক্ষণীয় বিষয় যে, সেদিন একজন সাহাবীও উল্লেখিত ইজমার ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করেননি। সুতরাং সাহাবায়ে কেরাম শরয়ী কোনো বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করলে পরবর্তি উম্মতের উক্ত বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করার অধিকার থাকে না। 

তারাবির জামাত ও রাকাতের ব্যাপারে আরো কয়েকটি বর্ণনা: হযরত হাসান (রাহ.) থেকে বর্ণিত, নিশ্চয় ওমর (রা.) লোকদেরকে উবাই ইবনে কা’ব (রা.) এর ইমামতিতে একাত্রিত করলেন। আর তিনি বিশ রাকাত তারাবি পড়াতেন। (আবু দাউদ)

হযরত সায়েব ইবনে ইয়াজিদ (রা.) বর্ণনা করেন, সাহাবা এবং তাবেয়ীগণ হযরত ওমর (রা.) এর যুগে রমজান মাসে বিশ রাকাত তারাবির নামাজ আদায় করতেন। (আস-সুনানুল কুবরা, বায়হাকী, উমদাতুল কারি)

হযরত আবু আবদির রহমান সুলামী (রাহ.) বর্ণনা করেন, হযরত আলী (রা.) রমজান মাসে ক্বারীগণকে ডাকলেন এবং তাদের একজনকে আদেশ করলেন, লোকদেরকে নিয়ে বিশ রাকাত তারাবি পড়াতে। আর হযরত আলী (রা.) নিজে বিতির পড়াতেন। (বায়হাকী, আস-সুনানুল কুবরা)

সম্মানিত পাঠক! সারাদিন রোজা রেখে ইফতার করার পর ক্লান্ত শরীর নিয়ে খোদাপ্রেমিক বান্দা যখন তারাবির নামাজে দাঁড়ায়, তখন মহান আল্লাহ ঐ বান্দাকে দয়ার চাঁদরে আবৃত করে নেন- এটাই মুমিনের বিশ্বাস। তাই পবিত্র মাহে রমজানের পূর্ণ বরকত অর্জনে তারাবির গুরুত্ব অপরিসীম। তারাবির নামাজে পূর্ণ এক খতম কোরআন শরীফ তিলাওয়াত করা স্বতন্ত্র সুন্নত। কোরআন নাযিলের মাসে বিনা ওজরে এ কোরআন খতম ছেড়ে দেওয়া আদৌ উচিত নয়। 


লেখক: মুফাসসিরে কুরআন ও ইসলামী গবেষক
 

তারা//

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ