চারণকবি মুকুন্দ’র ৯০তম প্রয়াণ দিবস
‘হাসি হাসি পরবো ফাঁসি/দেখবে জগৎ বাসী/একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি।’ অমর গানটির রচয়িতা চারণকবি মুকুন্দ দাসের ৯০তম প্রয়াণ দিবস আজ।
তিনি ১৯৩৪ সালের ১৮ মে কলকাতায় মারা যান। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে গান ও যাত্রাপালার মাধ্যমে ঝড় তুলেছিলেন এই চারণকবি।
জন্ম ১৮৭৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিক্রমপুরের বানরী গ্রামে। বাবার দেওয়া নাম যজ্ঞেশ্বর দে এবং ডাক নাম ছিল যজ্ঞা। জন্মের পরে ওই গ্রাম পদ্মায় তলিয়ে গেলে তারা সপরিবারে বরিশাল শহরে চলে আসেন। বরিশালের ব্রজমোহন স্কুলে তার শিক্ষা শুরু হয়। বরিশালে বৈষ্ণব সন্ন্যাসী রামানন্দ অবধূত যজ্ঞেশ্বরের গলায় হরিসংকীর্তন ও শ্যামাসঙ্গীত শুনে মুগ্ধ হয়ে তাকে দীক্ষা দিয়ে তার নাম রাখেন মুকুন্দ দাস।
মাত্র উনিশ বছর বয়সে মুকুন্দদাস সাধন-সঙ্গীত নামে একশ গানের একটি বই রচনা করেন। যাত্রাগানে সারা বরিশাল মাতিয়ে রাখতেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের একজন অন্যতম বিপ্লবী আধুনিক বরিশালের রূপকার অশ্বিনীকুমার দত্তের সংস্পর্শে মুকুন্দ দাস রাজনীতিতে আকৃষ্ট হন।
১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় মুকুন্দদাস একের পর এক গান, কবিতা ও নাটক রচনা করে বাঙালির জাতীয় জীবনে নতুন উদ্দীপনার সঞ্চার করেন। এরপর ব্রিটিশ সরকার রাজদ্রোহের অপরাধে তাকে গ্রেপ্তার করে ও বিচারে তাকে দিল্লি জেলে আড়াই বছর সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। ‘মাতৃপুজা’ নাটকটি সরকার বাজেয়াপ্ত করে। কাজী নজরুল ইসলাম ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যথাক্রমে বাংলা মায়ের দামাল ছেলে চারণ-সম্রাট মুকুন্দ উপাধিতে ও সন্তান আখ্যায় ভূষিত করেন। জেল খেটে ১৯১১ সালের প্রথমভাগে দিল্লি কারাগার থেকে ছাড়া পান। এর মাঝেই স্ত্রীর মৃত্যু ঘটে। জেলফেরত মুকুন্দ অল্প ব্যবধানে আবার তিনি বেরিয়ে পড়েন গান-যাত্রাপালা নিয়ে মুক্তিকামী মানুষের সঙ্গে বিপ্লবীর বেশে।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে তার জাগরণের গান তখন ছিলো বিপ্লবীদের মুখে মুখে। মুকুন্দ দাস গান বানিয়ে, গান শুনিয়ে যেমন আন্দোলিত করেছিলেন, বিপ্লবের ঝান্ডায় রসদ জুগিয়েছিলেন কবিতা নাটক যাত্রাপালায়, তেমনি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। ভারতবর্ষের আনাচকানাচে ছড়িয়ে পড়ে তার নাম।
মুকুন্দদাসের রচনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মাতৃপূজা, সমাজ, আদর্শ, পল্লীসেবা, সাথী, কর্মক্ষেত্র, ব্রহ্মচারিণী, পথ ইত্যাদি।
বিভিন্নভাবে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে তিনি বরিশালের কাশীপুর কালীমন্দিরের জায়গা কেনেন। যা এখন বরিশালে চারণকবি মুকুন্দ দাসের কালীবাড়ি নামে পরিচিত। এখানে রয়েছে ছাত্রাবাস, লাইব্রেরি, দাতব্য চিকিৎসালয় এবং পূজামন্দির।
/টিপু/