ঢাকা     সোমবার   ২০ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৬ ১৪৩১

শবে বরাতে যেসব আমল করবেন

প্রকাশিত: ২০:৩০, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ২১:১৭, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
শবে বরাতে যেসব আমল করবেন

শবে বরাত শব্দটি ফার্সি ও আরবির মিশ্রণ। ‘শব’ অর্থ রাত। ‘বরাত’ শব্দের অর্থ মুক্তি। উভয়টি মিলে ‘মুক্তির রজনী’। 

এ রজনী সম্পর্কে হাদিসে অনেক বর্ণনা পাওয়া যায়। এর মধ্যে কিছু বর্ণনা সর্বজন গ্রহণযোগ্য। এ ধরনের একটি বর্ণনা রয়েছে সুনানে ইবনে মাজাহ এর ১৩৯০ নং হাদিসে। হযরত মুআয ইববে জাবাল (রা) নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ তা‘আলা অর্ধ শাবানের রাতে তাঁর সৃষ্টির প্রতি বিশেষ মনযোগী হন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যক্তি ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (সহীহ ইবনে হিব্বান, হা. নং ৫৬৬৫, শুআবুল ঈমান হা. নং ৬২০৪। হাদিসটির সনদ সহীহ।

অন্যত্র উম্মাহাতুল মুমীনিন হযরত আয়েশা ছিদ্দিকা (রা) বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ রাতে নামাজ পড়ছিলেন এবং সিজদায় দীর্ঘ অবস্থানের কারণে আমি মনে করলাম যে, তিনি ইন্তিকাল করেছেন। তাঁর অবস্থা জানার জন্য আমি তাঁকে নাড়া দিলে তিনি নড়ে উঠেন। এরপর সিজদাহ থেকে মাথা উত্তোলন করেন। অতঃপর নামায শেষ করে আমাকে বললেন, হে আয়েশা, তুমি কি ধারণা করেছ যে, আল্লাহর রাসুল তোমার সাথে খিয়ানত করেছেন? আমি বললাম, আল্লাহর শপথ করে বলছি, এ ধরণের কোন কিছু নয়; বরং সিজদায় আপনাকে দীর্ঘকাল অবস্থানের কারণে আমি মনে করেছি যে, আপনি ইন্তিকাল করেছেন। এ কথা শুনে তিনি বললেন, তুমি কি জান এটি কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুল ভাল জানেন। এরপর তিনি বললেন, আজ শাবান মাসের ১৫ তারিখ। এ রাতে মহান রাব্বুল আলামিন ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করে দেন। রহমত প্রার্থনাকারীদের রহমত প্রদান করেন এবং বিদ্বেষীদের অবকাশ দেন।’ (শুয়াবুল ঈমান লিল ইমাম বায়হাকী রহ., আব্দুর রহমান মুবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াযী, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, বৈরুত, খ: ৩, পৃ: ৩৬৬)

এ রাতের আমল : 

১. বেশি বেশি তওবা করা। এ রাতে অসংখ্য মানুষকে ক্ষমা করার ঘোষণা হাদিসের মাধ্যমে বিশ্বনবী জানিয়ে দিয়েছেন। তিরমিজি শরীফের ৭৩৯ নং হাদিসে আয়েশা (রা) বর্ণনা করেন, ‘নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, শাবান মাসের পনেরতম রজনীতে আল্লাহ তাআলা প্রথম আসমানে কুদরতীভবে আগমন করেন এবং আরবের বিখ্যাত কালব গোত্রের বকরিগুলোর পশম পরিমাণ মানুষকে ক্ষমা করে দেন।’ কাজেই এ রাতে বেশি বেশি পরিমান নিজ পাপের কথা স্মরণ করে আল্লাহর কাছে মাফ চাইতে হবে।

২. দুআ করা।

৩. দীর্ঘ নফল নামাজ আদায় করা 

৪. পরের দিন রোজা রাখা 

৫. করব জিয়ারত করা। তবে কবর জিয়ারতের নামে কবর পূজা হয়ে যেন না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। 

৬. অন্তরের সমস্ত হিংসা-বিদ্বেষ দূর করা।

এ রজনীতে যে সব কাজ নিষিদ্ধ :

ইসলামে নিষিদ্ধ সব কাজই এ রাতে নিষিদ্ধ। তবে এ রাতে আমাদের দেশে ইবাদতের নামে যে সব রীতি-রেওয়াজ আছে ইসলামে সেগুলোর কোনও ভিত্তি নেই। যেমন: ১. কবরে সেজদা করা ২. হালুয়া রুটির আয়োজন করা ৩. সন্ধ্যার পরে গোসল করা ৪. আলোকসজ্জা করা ৫. সিরনি তবারকের আয়োজন করা ৬. গোরস্তানে মেলার আয়োজন করা ৭. মাসজিদে হৈ চৈ করা ৮. মাইকে খতমে কুরআন করা ৯. আতশবাজি ইত্যাদি। 

এখানে উল্লেখিত কাজগুলোর মধ্যে কিছু কাজ এমন আছে যেগুলো অন্য সময়ে করলে সমস্যা নেই বরং উত্তম। যেমন: খাবারের আয়োজন করা। এটা শবে বরাতে রেওয়ায়াজ হওয়ার কারণে এটা এ সময় নিষেধ করা হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এ রজনীতে নেক আমল করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার তৌফিক দান করুন, আমিন। 

ঢাকা/শাহেদ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়