ঢাকা     মঙ্গলবার   ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৭ ১৪৩১

আশি দুয়ারী বাড়িতে একজন মানুষও নেই

এস এম জাহিদ হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:০৬, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ০৯:৩৪, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
আশি দুয়ারী বাড়িতে একজন মানুষও নেই

দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনেক পুরোনো বাড়িতে গিয়েছি। তাড়াশ ভবনটি আমাকে অন্যরকম অভিজ্ঞতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। এই ভবনটি রহস্যময়তায় ঘেরা। ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে মনে হয়েছিল, এইতো-এখনই বাড়ির ভেতর থেকে কেউ বের হয়ে আসবে!

দ্বিতল বাড়িটির নিচতলায় ৮টি কক্ষ, উপরতলায় ৮টি কক্ষ। নিচতলার মূল কক্ষটির ছাদ পিতলের জ্যামিতিক বরগো দিয়ে নকশা করা হয়েছে। দ্বিতল বিশিষ্ট এই ভবনের মোট দরজা ৮০টি। দরজাগুলো নকশা নৈপুন্যে দুই স্তর বিশিষ্ট। একটি স্তর কাঠের আরেকটি স্তর কাচের। জানালাগুলোও অসাধারণ। এই ভবনে জানালা সংখ্যা ৫৩টি। এগুলো খড়খড়ি দিয়ে তৈরি। নিচতলা থেকে উপরে উঠে যাওয়ার উত্তর দিকের সিঁড়িটি কাঠের।  ভবনটি প্রায় দেড় একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। পূর্বমুখী এই ভবনে রয়েছে রোমান করিনথিয় স্তম্ভের উপরে দ্বিতল গাড়ি বারান্দা। যা প্রাচীন স্থাপত্য কীর্তির সাক্ষ্য বহন করছে। 

এত দরজা, জানালা ছুঁয়ে যে বাড়িয়ে প্রতিদিনকার আলো বাতাস পৌঁছে যায়, সেই বাড়িতে কোনো মানুষ নেই। এই দরজা, জানালাগুলো লাগিয়ে রাখা বা খোলা রাখার বিশেষ প্রয়োজন- যেন অনেক আগেই হারিয়ে গেছে। শুধু বোঝা যায়, এই বাড়িতেও একদিন কোলাহল ছিল, জীবনের গল্প, গন্ধ সবই ছিল। এখন সেসব সুদূরের গল্প।

পাবনা শহরের প্রাণকেন্দ্রে বাড়িটি অবস্থিত। যদিও তাড়াশ হচ্ছে সিরাজগঞ্জের একটি উপজেলা। জানা যায়, ভবনটি তৈরি করা হয়েছিল ১৮শ শতকের কোন এক সময়। ব্রিটিশ শাসনামলে এটি নির্মাণ করেন তাড়াশের তৎকালীন জমিদার রায়বাহাদুর বনমালী রায়। এর স্থাপত্যরীতির সঙ্গে ইউরোপীয় রেনেসাঁ রীতির মিল পাওয়া যায়। জনশ্রুতি অনুসারে, রায়বাহাদুর জমিদারের বংশধরগণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪২ সালে এই ভবনটি তাদের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহার করেছিলেন।  ৮ই জানুয়ারি ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এটিকে সংরক্ষিত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। এরপর থেকেএই সুদৃশ্য বিশাল বাড়িটি বিভিন্ন সরকারি দপ্তর হিসেবে ও পাবনা মেডিকেল কলেজের ভবন হিসেবেও ব্যবহৃত হয়েছে।

এই ভবনের সামনে রয়েছে একটি বড় প্রবেশপথ। প্রবেশপথের দুইপাশে রয়েছে ২টি করে বড় স্তম্ভ এবং এর মাঝখানেই রয়েছে প্রবেশপথ। বর্তমানে যদিও এর নকশা অনেকটাই বিলীন হয়ে গেছে। বাড়িটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর অধিগ্রহণ করার পরেও এখানো অবকাঠামোগত কোনো পরিবর্তন হয়নি। শুধুমাত্র দুই একজন নিরাপত্তা কর্মী আছেন, তারা দিনের বেলায় বাড়িটি দেখাশোনা করেন। 

সৌন্দরযমণ্ডিত বিশাল এই বাড়িতে এখন সুনশান নিরবতা বিরাজ করে। অথচ এটি একটি পর্যটন কেন্দ্র হতে পারে। হতে পারে গ্রন্থাগার বা জাদুঘরও। যেহেতু শহরের প্রায় কেন্দ্রে এই গুরুত্বপূর্ স্থাপনাটি, সেহেতু এটিকে কাজে লাগানো উচিত।

তাড়াশ ভবনের আশেপাশেও অনেক খোলা জায়গা রয়েছে। সেনিমার, সিম্পোজিয়াম, আলোচনা সভা, শিশুদের জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন- বা এই ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য খুবই উপযুক্ত একটা জায়গা। বাড়িটি যদি কাজে না লাগিয়ে এভাবে ফেলে রাখা হয় তাহলে দ্রুতই এখানে বখাটেদের উৎপাত বেড়ে যাবে। হয়তো এক সময় বেদখলও হয়ে যেতে পারে। ধীরে ধীরে নষ্ট হতে পারে এর সৌন্দর্য, গাম্ভীর্য এবং ঐতিহ্য।

/লিপি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়