বেনারস শহরের কথা
সাতসতেরো ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম
ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের একটি শহর বেনারস। বাঙালিদের কাছে এই শহর কাশী নামেও পরিচিত। গঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত এই শহর মসলিন ও রেশমের বস্ত্র, সুগন্ধি দ্রব্য, হাতির দাঁতের কাজ ও ভাস্কর্য শিল্পের জন্য বিখ্যাত ছিল। মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের সঙ্গে সঙ্গে এই শহরের অনেক মানুষ বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে বাধ্য হয়েছিল।
ভারতে ব্রিটিশ রাজ সময়ের দেশীয় রাজ্য ছিল বেনারস। এই রাজ্যটি স্থানীয় জমিদার, রাজা বলবন্ত সিং প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বলবন্ত সিং ১৮ম শতাব্দীর মাঝামাঝি ‘বেনারসের রাজা’ উপাধি গ্রহণ করেছিলেন। বলবন্ত সিং এবং তার বংশধরেরা বেনারসের আশেপাশের অঞ্চলটিকে আওধের নবাব এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাম্রাজ্য হিসেবে শাসন করতেন। ১৯১০ সালে, বেনারস ব্রিটিশ ভারতের একটি পূর্ণাঙ্গ রাজ্যে পরিণত হয়। ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার পরে রাজ্যটি ভারতে একীভূত হয়েছিল। ১৯৪৮ সালে কাশীর ৮৮ তম শাসক স্যার বিভূতি নারায়ণ সিংহ প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী জওহর লাল নেহরুর অনুরোধ গ্রহণ করেছিলেন এবং ভারতীয় ইউনিয়নে যোগদানের স্বাক্ষর করেছিলেন।
বেনারস দেশীয় রাজ্য প্রথম দিকের শাসকেরা মুঘল সাম্রাজ্যের অবধ ( ওউধ ) প্রদেশের জমিদার ছিলেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মুঘল আধিপাত্য দুর্বল হয়ে পড়ে, ফলে বেনারস জমিদারের সম্পত্তি বেনারস রাজ্যে পরিণত হয়। এভাবে নারায়ণ রাজবংশের বলওয়ন্ত সিং এই অঞ্চলগুলোর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পান। তিনি ১৭৪০ সালে নিজেকে বেনারসের মহারাজা ঘোষণা করেন। এই অঞ্চলটি ১৭৭৫ সালের শেষ দিকে আওধের নবাবের মাধ্যমে কোম্পানির শাসনের হাতে সমর্পিত হয়। যিনি বেনারসকে পারিবারিক আধিপত্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। বেনারস ১৯১১ সালে দেশীয় রাজ্যে পরিণত হয়।
বারাণসী নামে পরিচিত বেশিরভাগ অঞ্চলটি উতারিয়ার জমিদার মনসা রাম দ্বারা অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। ১৭৮৭ সালে উটারিয়ার শাসনকর্তা বলবন্ত সিংহ দিল্লির মুঘল সম্রাট মুহম্মদ শাহের কাছ থেকে জৌনপুর, বারাণসী দিলদারনগর এবং চুনার অঞ্চল দখল করে এবং দীনদার খান (যিনি দিলদারনগর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন) এর উত্তরাধিকারী হয়ে বেনারসে শাসন শুরু করে। কাশী নরেশের অধীনে অন্যান্য স্থান যেমন চান্দাউলি, জ্ঞানপুর, চাকিয়া, মির্জাপুর, পুদিনা হাউস যুক্ত হয়।
মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের সঙ্গে সঙ্গে কাশী নরেশের নেতৃত্বে ভূমিহারা ব্রাহ্মণদের একাংশ বেনারসে থেকে যায়, অন্যরা উর্বর মাটি এবং উচ্চফলনশীল ধানের অঞ্চল যেমন- জৌনপুর, গোরক্ষপুর, বাস্তি, দেওরিয়া, আজমগড়, গাজীপুর, বালিয়া, বিহার এবং বাংলার প্রান্তিক অঞ্চলে চলে আসে।
তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া
/লিপি