ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

কেমন হবে শিশু-কিশোরদের মাহে রমাজান 

প্রকাশিত: ১২:০০, ২৯ মার্চ ২০২৪   আপডেট: ১৩:৩১, ২৯ মার্চ ২০২৪
কেমন হবে শিশু-কিশোরদের মাহে রমাজান 

মাহে রমজান সিয়াম -সাধনার মাস। রমজানের আনন্দ পরিবারের সকলের মাঝে ভাগাভাগি করে নিতে শিশুদেরকে সাহরি-ইফতারিতে অংশগ্রহণ করানোর বিকল্প নেই। মুসলিম ঘরগুলোতে শিশুদেরকে শেষ রাতের সাহরিতে না উঠালে, কেমন যেন সাহারিটা আনন্দমুখর হয় না। শিশুরা অনুকরণ প্রিয়।  অন্যকে দেখে শিখতে পছন্দ করে। তাই ঘরের বড়দেরকে দেখে শিশুরা  সালাত আদায় করে, সিয়াম পালন করে ইত্যাদি। 

যদিও শিশুদের ওপরে রমজানের সিয়াম ফরজ নয়। কারণ ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ এই ইবাদতটি  সুস্থ, প্রাপ্তবয়স্ক, মুকিম, মুসলিম নারী-পুরুষের উপরে ফরজ । রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তিন ধরণের ব্যক্তি থেকে( হিসাব-নিকাশের) কলম উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে, পাগল, ঘুমন্ত ব্যক্তি ও নাবালক শিশু ( আবু দাউদ শরীফ  হাদিস নং ৪৪০১)। তথাপি শিশু প্রাপ্ত বয়ষ্ক হওয়ার আগেই সিয়ামের গুরুত্ব, ভালোবাসা তার অন্তরে বসিয়ে দেওয়া। 
         
সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম তাদের সন্তানদেরকে রোজা রাখার ব্যাপারে উৎসাহিত করতেন। সাহাবিয়া রুবায়্যি বিনতে মুআওয়াজ রাদিআল্লাহু আনহা বলেন,  আমরা নিজেরা আশুরার রোজা রাখতাম এবং আমাদের বাচ্চাদেরকে ও রোজা রাখাতাম । তাদের জন্য পশমের তৈরি খেলনা রাখতাম। যখন বাচ্চাদের কেউ খাবারের জন্য কাঁদত তখন তাকে খেলনা দিতাম এভাবে ইফতারের সময় হয়ে যেত। -সহিহ বুখারী  ১/২৬৩

সন্তানের বয়স ১০ বছর হলে হাদীস শরীফে নামাজের জন্য শাস্তি দেওয়ার কথা ও এসেছে ।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের সন্তানদের বয়স সাত হলে তাদেরকে নামাজ আদায়ের জন্য নির্দেশ দিবে। এবং ১০ বছর বয়সে তাদেরকে নামাজের জন্য শাস্তি দিবে এবং তাদের বিছানা পৃথক করে দিবে । (আবু দাউদ শরীফ ১/১৩৩)

সাত বছর থেকে এমন ভাবে নামাজের জন্য ট্রেনিং দেওয়া যাতে দশ বছরে সে পূর্ণ নামাজে অভ্যস্ত হয়ে যায় ।  ফিকাহবিদগণ বলেন, 'রোজার হুকুমও একই '।অর্থাৎ সাত- আট বছর বয়সী সন্তানের স্বাস্থ্য ভালো থাকলে তাদেরকে ধীরে ধীরে রোজার প্রতি অভ্যস্ত করে গড়ে তোলা । ১০ বছর বয়সে উপনীত হলে যদি স্বাস্থ্যগত কোন সমস্যা না থাকে তাহলে রোজার জন্য শাসন ও করা যাবে । -ফতোয়া শামী ২/৪০৯

শিশুদেরকে রোজায় অভ্যস্ত করতে আমাদের করণীয় 
১.প্রথম দিকে দিনের কিছু অংশে রোজা পালন করানো, আস্তে আস্তে সময়কে বাড়ানো। যে পন্থাটি  অবলম্বন করতেন আমার মমতাময়ী মা আমাদের ভাই-বোনদের ব্যাপারে। 
২. শিশুদের কাছে রোজার ফজিলত সম্পর্কিত হাদিস গুলি গল্প আকারে শোনানো। রোজাদারের জান্নাতে প্রবেশের দরজা রাইয়ান সম্পর্কে আলোচনা করা   । 
৩.শিশুরা রোজা রাখলে  প্রতিদিন তাদেরকে কিছু কিছু পুরস্কার দেওয়া  । এতে রোজা রাখার প্রতি তাদের উৎসাহ পাবে। 
৪. আত্মীয়স্বজনের মধ্যে যে সকল শিশুরা রোজা রাখে তাদের গল্প নিজের শিশুকে শোনানো। সুযোগ হলে ওই সকল শিশুদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করানো।এতে করে তাদের সিয়াম পালনটা অব্যাহত থাকবে।
অনেক অভিভাবক রয়েছে বাচ্চার শরীর নষ্ট হয়ে যাবে ভেবে তাদেরকে সাওম থেকে দূরে রাখে । যা নিতান্ত  বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয় । মাঝে মাঝে উপবাস এটা মানুষের শরীরের জন্য অনেক উপকারী যা আজকের চিকিৎসা বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে। 

আবার কিছু বাবা -মা  এমনও আছে যারা  পড়াশোনা আর পরীক্ষার দোহাই দিয়ে প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে-মেয়েদেরকে রোজা থেকে দূরে রাখে  । এটা নিজের ও বাচ্চার উপরে অবিচার ছাড়া আর কিছুই নয় । 
আলহামদুলিল্লাহ! আমাদের দেশে  দেওবন্দী,  কওমিধারার  মাদ্রাসা গুলোর অধিকাংশ  ছাত্র নফল রোজা রেখে তাদের গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাগুলোতে অংশগ্রহণ   করে । রোজা রাখার মাধ্যমে  মানুষের স্মৃতিশক্তি বেড়ে যায়, মনোযোগ বৃদ্ধি পায়, কাজের মধ্যে গতিসঞ্চার হয়। একজন শিক্ষার্থীর পরীক্ষার সময় যা তার জন্য অতিব জরুরি বিষয়।  

লেখক: খতিব ও ইসলামী  আলোচক

/লিপি

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়