ঢাকা     শুক্রবার   ০৩ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২০ ১৪৩১

ভালো নেই? ভালো থাকুন

ড: ফারজানা আলম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩৩, ২০ এপ্রিল ২০২৪   আপডেট: ১১:১৪, ২০ এপ্রিল ২০২৪
ভালো নেই? ভালো থাকুন

ড: ফারজানা আলম

ঠিক এই মুহূর্তে আমরা যারা লেখাটি পড়তে শুরু করেছি, তাদের মধ্যে কতজন আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলতে পারবো – `আমি ভালো আছি’! আবার যদি ভালো না থাকার কারণগুলো দেখতে যাই, তাহলে তার কত শতাংশ কারণ যৌক্তিক? আমরা সবাই আসলে জালে আটকানো মাকড়শা! নিজেদের তৈরি করা কৃত্রিম সমস্যার জালে নিজেরাই জড়িয়ে পড়ে আছি। যতই চেষ্টা করছি আরও পেঁচিয়ে যাচ্ছি! কতজন আমরা সত্যিকারের খাবারের অভাব কিংবা বস্ত্র ,শিক্ষা, চিকিৎসা, থাকার ঘরের অভাবে কষ্ট পাচ্ছি? অভাবের তালিকা করতে বললে আমরা যা যা লিখব, তার প্রত্যেকটি ছাড়া দিব্যি বেঁচে থাকা যায়!

আমাদের পূর্বপুরুষের এই অভাবগুলো ছিল না, তবু তারা বরং আমাদের চেয়েও ভালভাবে বেঁচে ছিলেন। তাদের জীবনের মান এই সময়ের তুলনায় কম দেখালেও তাদের জীবন আরও সরল ও সুখী ছিল। দিন শেষে আমরা আসলে কী চাই? সুখের জন্যই তো আমাদের এত আয়োজন? কিন্তু দিন শেষে আমরা কতজন সুখী? কেন অসুখী? এই নিয়ে আমাদের আসলে ভাবার সময় নেই। আজকাল মনোযোগ বাজারজাতকরণ করা হয়। আমাদের মনোযোগ নিয়ে যাচ্ছে যতসব অপ্রয়োজনীয় বিষয়বস্তু। প্রিয়জনের ভালোমন্দ তো দূরের কথা, নিজেদের ভালমন্দ নিয়েও আমরা গভীরভাবে চিন্তা করি না। 

ভালো থাকা একটা আর্টবিজ্ঞান আমাদের জীবনকে অনেক সহজ করছে কিন্তু সরল করছে না। ভালো থাকা একটি আর্ট। সঠিকভাবে ব্যাবহার করতে না জানলে যেমন আইফোন থেকেও সব সুবিধা পাওয়া যায় না, তেমনি আমাদের অতি মূল্যবান এই মস্তিষ্কটার ঠিকঠাক ব্যাবহার না জানলে আমরা জীবনটার রূপ-রস-গন্ধ কিছুই গভীরভাবে জানতে পারবো না। আমাদের এই জেনারেশন যত সুযোগ-সুবিধা নিয়ে জীবনযাপন করছে, আর কোন জেনারেশন এত আরামের জীবন পায়নি, তবু হতাশা আমাদের গ্রাস করছে।

গত এক বছরে যত মানুষ আত্মহত্যা করেছে , কিসের অভাবে আত্মহত্যা করেছে? খাদ্য বস্ত্র নিরাপত্তার অভাব? তাহলে তো মাতৃভূমিচ্যুত রোহিঙ্গাদের আত্মহত্যার হার বেশি থাকতো! 

নিজেকে ভালবাসার অভাব, নিজের প্রতি বিশ্বাসের অভাব, নিজের আবেগ অনুভুতি চিন্তার উপর নিয়ন্ত্রণের অভাব আমাদের একাকীত্ব হতাশা বিষণ্ণতার দিকে ঠেলে দেয়। নিজের অজান্তেই আমরা নিজেদের তৈরি করা হীনমন্যতা, রাগ, ঘৃণা, অতিরিক্ত চাহিদা– এগুলোর দাস হয়ে ভেতরটা বিষাক্ত করে ফেলি। 

লক্ষ্য করে দেখুন, এই অনুভুতিগুলো আমাদের ভেতরে তৈরি হয়, ইচ্ছা করলেই নিজেদের ভেতরটা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আমরা এই বিষ থেকে মুক্ত থাকতে পারি। আমরা আসলে প্রত্যেকে অন্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে এত ব্যস্ত যে নিজেকেই ভুলে যাই। অথচ নিজের নিয়ন্ত্রণ যার নিজের হাতে নাই, বাইরের পরিস্থিতি সে কী করে সামলাবে? 

তাহলে ভালো থাকার জন্য যা যা করা দরকার- সে আলোচনা অনেক বিস্তারিত এবং গভীর আলোচনা। আজকের লেখা তত গভীরে যাবে না। আজ শুধু আমরা মৌলিক চাহিদাগুলো চিনবো, যেগুলো ছাড়া সত্যিই বেঁচে থাকা যায় না। অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, বাসস্থান, চিকিৎসা। ভাতের অভাব সত্যি  দুঃখজনক কিন্তু পছন্দের বার্গার খেতে না পারলে হীনমন্যতায় ভোগা আসলে আত্মনিয়ন্ত্রণের অভাব। মানুষ আপনজনের সাথে কথা বলতে চাইবে খুবই স্বাভাবিক কিন্তু কথা বলার মাধ্যম মোবাইলের ফোনের পছন্দের মডেল কিনতে না পেরে হতাশায় ভোগা ভালো লক্ষণ নয়। যত মনোযোগ মোবাইলে দেই, তার কত অংশ কাছের মানুষে দেই? পাশের মানুষ বিষণ্নয় ভুগতে ভুগতে আত্মহননের পথ বেছে নেয়, আমরা কিছুই টের পাই না। মৌলিক চাহিদা, মৌলিক আবেগে গুরুত্ব কমিয়ে আমরা বাড়তি বিলাসিতায় মনোযোগ বাড়িয়ে ভেতরে ভেতরে একলা অসহায় হয়ে পড়ছি, ভুগছি কিন্তু বের হতে পারছি না। আসুন না একটু ভেবে দেখি, কোন চাহিদাগুলো বাড়তি, কোন সম্পর্কগুলো অপ্রয়োজনীয়, শুধুই সময় কাটানো সম্পর্ক?

চলুন মন দেই মৌলিকে, নিজের ভেতরটা একটু গুছিয়ে নেই। অহেতুক রাগ, ঘৃণা, হিংসা দূরে ফেলে দিয়ে ভালবাসা দিয়ে মানুষেকে আপন করে নেই। ঘরের মানুষ, স্কুলের বন্ধু, পথের কুকুর, রাস্তার গাছ- তাকিয়ে দেখুন সবার ভালবাসার কত দরকার! ভালবেসে দেখুন, শতগুণে ফেরত পাবেন। ছোট্ট জীবন ,অল্প সময় আমরা একসাথে চলব। কৃত্রিমতা বিদায় দিয়ে নিজেকে মাটির মানুষ ভাবার অভ্যাস করি, কিছু বুঝে উঠার আগেই আয়ু ফুরিয়ে মাটির সাথে মিশে যাবো। বরং একটু আগে থেকেই সব বাড়তি বিদায় করে মাটি হবার অভ্যাস করি। বাড়তি মেদের মতো বাড়তি চাহিদাও ভালো কিছু নয়। 

/লিপি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ