ঢাকা     শনিবার   ০৮ নভেম্বর ২০২৫ ||  কার্তিক ২৪ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

গিটারের ‘ডাক্তার’ আব্দুর রফিক

রায়হান হোসেন  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১৭, ৮ জুন ২০২৪   আপডেট: ১৮:৫৫, ৯ জুন ২০২৪

আইয়ুব বাচ্চু, জেমস, লাকি আখান্দ, শাফিন আহমেদ, ইব্রাহীম আহমেদ কমল কিংবা হাবিব ওয়াহিদসহ দেশের প্রায় সকল গুণী ব্যান্ড তারকাদের গিটারের যেকোনো সমস্যায় সমাধান যিনি করেছেন বা করছেন তার নাম মোহাম্মদ আব্দুর রফিক। তবে সঙ্গীতাঙ্গনের গুনি শিল্পরা তাকে ভালোবেসে নাম দিয়েছেন “গিটারের ডাক্তার”। 

৮০ দশক থেকে রাজধানীর মিরপুর রোডের সাইন্সল্যাব মোড়ে কলেজস্ট্রিট ওয়েলফেয়ার সোসাইটির গলিতে শুরু করেন বাদ্যযন্ত্র মেরামতের কাজ। মোহাম্মদ আব্দুর রফিকের ষাটোর্ধ জীবনের অধিকাংশ সময় কেটেছে নানা ধরনের বাদ্যযন্ত্র মেরামতের কাজে। দীর্ঘ ৪৬ বছর ধরে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন সমান তালে। 

বাদ্যযন্ত্র মেরামতের সঙ্গে মোহাম্মদ আব্দুর রফিকের এই দীর্ঘ পথচলা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৯৭২ সালের দিকে আমি তখন মাধ্যমিকের ছাত্র। সেই সময়ে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতির প্রতি আমার আগ্রহ ছিল। তাই শখ করেই ভর্তি হই এলিফ্যান্ট রোডের ‘রেডিও ইলেক্ট্রনিক ইন্ডাস্ট্রি’ নামক একটি ওয়ার্কশপে। সেখান থেকেই আমার হাতেখড়ি। 

সঙ্গীত শিল্পীদের সঙ্গে তার সম্পর্ক জানতে চাইলে আব্দুর রফিক বলেন, বাচ্চু (আইয়ুব বাচ্চু) ভাইয়ের সাথে ছিলো আমার হাসি-ঠাট্টার সম্পর্ক। তিনি প্রায় আমাকে ডেকে নিয়ে যেতেন তার স্টুডিওতে। আমি স্টুডিওর একপাশে কাজ করতাম, অন্যপাশে বসে গিটার বাজাতেন বাচ্চু ভাই। আমি যেবার হজে গিয়েছি সেইবার বাচ্চু ভাইকে বললাম দোয়া কইরেন। তিনি তখন অসুস্থ। বাচ্চু ভাই বললো, আমি তো জান রেখে এসেছি সিঙ্গাপুরে, বডি নিয়ে আপনার সঙ্গে কথা বলছি বাংলাদেশে।

তিনি আরো বলেন, ৭০ দশক থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমার কাছ থেকে গিটার রিপেয়ার করেছেন সেই সময়কার প্রায় সব তারকা শিল্পীরা। যারা নিজেরা আসতে পারতো না, তারা অন্য কাউকে পাঠিয়ে দিতো কাজ করার জন্য। ‌এছাড়া জেমস, লাবু ভাই, নিলয়দাসহ আরও অনেকের গিটার রিপেয়ার করেছি আমি। 

বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক ও গায়ক লাকী আখান্দের সঙ্গেও মোহাম্মদ রফিক আহমেদ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তিনি বলেন, লাকী ভাই আরমানিটোলায় থাকতেন। সেখানে আবার আমার আত্মীয়ের বাসা। মৃত্যুর দুইদিন আগে বললেন, রফিক ভাই, আত্মীয়ের বাসায় বেড়িয়ে যান আর আমাকে দেখে যান। দুঃখজনক ব্যাপার, আমার খুব আফসোস হয় যে আর যাওয়া হলো না, লাকি ভাই চলে গেলেন।

বাংলাদেশর বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ এবং গীতিকার ইব্রাহীম আহমেদ কমলের সঙ্গেও মোহাম্মদ রফিকের ভালো সম্পর্ক ছিল। তিনি বলেন, কমল ভাই একবার দোকানে এসে বসে আছেন। আমি তাকে চিনতে পারিনি। সে নব্বইয়ের দিকে। আমি বোকার মত তাকে জিজ্ঞেস করছি আপনি কি কিছু বলবেন ভাই? তিনি বললেন, আমি কমল। সেই থেকে তার সঙ্গে পরিচয়। তারপরও প্রায়ই আসতেন আমার এখানে। নীলয়দা মারা যাওয়ার কয়েকদিন আগে আমাকে দেখতে এলেন। ঈদের দুইদিন পরে নীলয়দা মারা গেলেন। সবাই মাঝেমধ্যে আমাকে দেখতে আসতো। বালাম তো বিকেলে এসে এখানেই আড্ডা দিতো। 

বাংলাদেশের আরেকজন সঙ্গীতশিল্পী, গীতিকার, সুরকার এবং গিটার শিক্ষক লুৎফুল আহমেদ লাবু`র সঙ্গেও ছিলো মোহাম্মদ রফিকের সম্পর্ক। তিনি বলেন, লাবু ভাইকে তো আমি দোকানে বসিয়ে রেখে নামাজ পড়তে যেতাম। আমার দোকানদার লাবু ভাই থাকলে, অন্য ছেলেরা ভয়ে দোকানে ঢুকত না। লাবু ভাই যখন আসত তখন তার সাথে তো হাসিঠাট্টা লেগেই থাকতো। একবার লাবু ভাই আমাকে বলেন, আমি গিটার বাজিয়ে লাবু হয়েছি। আমি তখন বললাম, আপনি গিটারে স্ট্রোক দিয়ে লাবু হয়েছেন, আমি গিটার খুলে রফিক হয়েছি। 

দীর্ঘ এই কর্মজীবন নিয়ে কোন আক্ষেপ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি একটু হাসি দিয়ে বলেন, আমার কোন আক্ষেপ নেই। মেয়েটাকে ইডেন কলেজ ও ছেলেটাকে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া করিয়েছি। আমি ও আমার স্ত্রী দুজনই হজ পালন করেছি। এখন ধারাবাহিক ভাবে কাজ করে যাচ্ছি। যতদিন সুস্থ থাকি, ততদিন কাজ করে যাবো।

/ইমন/

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়