ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

নন্দিতার মতো মরণোত্তর অঙ্গদানে আগ্রহী তার দুই মেয়ে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:০১, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  
নন্দিতার মতো মরণোত্তর অঙ্গদানে আগ্রহী তার দুই মেয়ে

রাজধানীর বাসাবোর বাসিন্দা সদ্য প্রয়াত নন্দিতা বড়ুয়ার দান করা কর্নিয়ায় চোখে আলো ফিরে পেয়েছেন দুই ব্যক্তি। মায়ের দেখানো পথ ধরে তার দুই মেয়ে শাপলা বড়ুয়া এবং সেজুঁতি বড়ুয়াও মরণোত্তর অঙ্গদানের ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন।

বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) অ্যানাটমি বিভাগের পক্ষে উপাচার্য অধ্যাপক মো. শারফুদ্দিন আহমেদ নন্দিয়া বড়ুয়ার মরণোত্তর অঙ্গ গ্রহণ অনুষ্ঠানে তার দুই মেয়েও মরণোত্তর অঙ্গদানের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন।

নন্দিতা বড়ুয়ার দান করা কর্নিয়ায় চোখে আলো ফিরে পাওয়া দুজন হলেন—কাউখালী কলেজের ব্যবস্থাপনার বিভাগের স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস (২৩) ও পটুয়াখালীর দলিল লেখক আব্দুল আজিজ (৫০)।

অনুষ্ঠানে ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, এ ত্যাগের জন্য নন্দিতা বড়ুয়ার দুই মেয়ে শাপলা বড়ুয়া ও সেজুঁতি বড়ুয়াসহ পরিবারের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। নন্দিতা বড়ুয়ার অবদান মানবজাতি মনে রাখবে। নন্দিতা বড়ুয়ার কর্নিয়ায় নতুন করে চোখের আলো ফিরে পেয়েছেন দুজন। গত এক মাসে মরণোত্তর চক্ষুদান প্রক্রিয়ায় ১২ জনের চোখে সফলভাবে কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করেছি। কর্নিয়াগ্রহীতারা বেশ ভালো আছেন। দেশের সব মানুষের প্রতি এরকম ভালো কাজে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানাই।

অনুষ্ঠানে নন্দিতা বড়ুয়ার মরদেহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানাটমি বিভাগে সংরক্ষণ, শিক্ষণ-প্রশিক্ষণ ও গবেষণার কাজে ব্যবহারের আবেদনপত্রটি বিভাগীয় চেয়ারম্যানের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

মরদেহের এমবামিং প্রক্রিয়ার প্রারম্ভে অ্যানাটমি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক লায়লা আনজুমান বানুর পরিচালনায় এবং অ্যানাটমি বিভাগের সকল শিক্ষক, কর্মচারী ও রেসিডেন্টদের অংশগ্রহণে মরদেহের যথোচিত সম্মান ও পবিত্রতা রক্ষার জন্য শপথ গ্রহণ করা হয়।

উল্লেখ্য, গত ৩০ জানুয়ারি রাত আড়াইটায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ৬৯ বছর বয়সী নন্দিতা বড়ুয়া। দীর্ঘদিন ধরে তিনি কিডনিজনিত রোগে ভুগছিলেন। কিডনি রোগের পাশাপাশি এসএলই ও ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। জীবদ্দশায় নন্দিতা বড়ুয়া মরণোত্তর অঙ্গদানের ব্যাপারে সন্তানদের কাছে নিজের ইচ্ছের কথা জানিয়েছিলেন। মৃত্যুর পর তার পরিবারের সম্মতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্নিয়া বিশেষজ্ঞরা প্রয়াতের কর্নিয়া সংগ্রহ করেন।

গত ৩১ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ শীষ রহমান পটুয়াখালীর দশমিনা সাব-রেজ্রিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক আব্দুল আজিজের চোখে ও অপথালমোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাজশ্রী দাস ঝালকাটি জেলার কাউখালী কলেজের ব্যবস্থাপনার বিভাগের স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌসির চোখে একটি করে কর্নিয়া সফলভাবে প্রতিস্থাপন করেন।

নন্দিতা বড়ুয়ার অঙ্গগ্রহণকালে আরও উপস্থিত ছিলন— বিএসএমএমইউর উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ হোসেন, অ্যানাটমি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক লায়লা আনজুমান বানু, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শাহ আলম, ভিসির একান্ত সচিব-১ সহযোগী অধ্যাপক (সার্জিক্যাল অনকোলজি) ডা. মো. রাসেল, হৃদরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আরিফুল ইসলাম জোয়ারদার (টিটো), কর্নিয়া বিশেষজ্ঞ সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ শীষ রহমান, কর্নিয়া বিশেষজ্ঞ সহকারী অধ্যাপক রাজশ্রী দাস, অ্যানাটমি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শারমিন আক্তার সুমি, নন্দিতা বড়ুয়ার দুই মেয়ে শাপলা বড়ুয়া ও সেঁজুতি বড়ুয়া, নন্দিতা বড়ুয়ার কর্নিয়া গ্রহীতা জান্নাতুল ফেরদৌস ও আব্দুল আজিজ প্রমুখসহ অ্যানাটমি বিভাগের শিক্ষক ও রেসিডেন্টরা।

মেয়া/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়