ঢাকা     সোমবার   ০৬ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডি: চার বছরেও শেষ হয়নি বিচার

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৪৭, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩   আপডেট: ১১:২২, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডি: চার বছরেও শেষ হয়নি বিচার

ফাইল ছবি

পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডির চার বছর পেরিয়ে গেলেও বিচারকাজ শেষ হয়নি। কবে নাগাদ শেষ হবে এ-ও বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। তবে মামলাটির বিচারকাজ দ্রুত শেষ করার আশা করছেন তারা। এদিকে, এতদিনেও দোষীদের বিচার হওয়ায় হতাশ নিহতদের পরিবার। 

২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৭১ জন নিহত হন। আহত হন আরও অনেক। এ ঘটনায় পরদিন নিহত জুম্মনের ছেলে আসিফ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে প্রায় তিন বছর পর ওয়াহেদ ম্যানশন ভবনের মালিক দুই সহোদরসহ ৮ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা চকবাজার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আবদুল কাইউম। গত ৩১ জানুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার ৮ম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ সৈয়দা হাফসা ঝুমা। আগামী ১৪ মার্চ সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য করেন আদালত। এজন্য বাদী আসিফকে সাক্ষ্য দিতে সমন পাঠানো হয়েছে।

আসামিরা হলেন- ভবনের মালিক দুই সহোদর হাসান ওরফে হাসান সুলতান, সোহেল ওরফে শহীদ ওরফে হোসেন, রাসায়নিকের গুদামের মালিক ইমতিয়াজ আহমেদ, পরিচালক মোজাম্মেল হক, ম্যানেজার মোজাফফর উদ্দিন, মোহাম্মদ জাওয়াদ আতির, মো. নাবিল ও মোহাম্মদ কাশিফ। এরা সবাই বর্তমানে জামিনে আছেন।

এ বিষয়ে মামলার বাদী আসিফ জানান, আমাদের আর কেউ খোঁজ-খবর নেয় না। এইদিন এলে পাবলিসিটি করার জন্য সবাই যোগাযোগ করেন। অন্য সময় কারও খোঁজ থাকে না। আমরা কেমন আছি, কীভাবে আমার পরিবার চলছে- কারও মাথাব্যথা নেই। বাবা হারিয়ে এখন পর্যন্ত কোনও প্রকার অনুদান পাইনি। সিটি করপোরেশন থেকে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি থাকলেও সেটা দেওয়া হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত ৬৬ পরিবারের মধ্যে কিছু সংখ্যক চাকরি পেলেও বাকিদের খোঁজ-খবর নেয়নি। আর সিটি করপোরেশন থেকে যে চাকরি দিয়েছে সেটা হচ্ছে মাস্টার রোলে। সিটি করপোরেশন বা সরকারের কোনও সংস্থার কাছ থেকে এখন পর্যন্ত এক টাকাও পাইনি।  

তিনি বলেন, চার বছর আগে ঘটে যাওয়া জায়গাটি আগের মত হয়ে গেছে। সেই বিল্ডিং দেখে চেনার উপায় নেই। নতুন করে অফিস/দোকান হয়েছে। মাঝখান থেকে আমার বাবাকে হারালাম। ৬৬ পরিবার তাদের একমাত্র উপার্জন করার হাতিয়ার হারালো। আমরা এখন কী অবস্থায় দিন পার করছি, বলে বুঝানো যাবে না। অনেক চেষ্টা করেও সরকার ও সিটি করপোরেশনের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি। ক্ষতি তো আমাদের হয়েছে, যা অপূরণযোগ্য। তবে সরকার/ সিটি করপোরেশন চাইলে আমাদের ৬৬টি পারিবারকে চাকরি দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে পারতেন। সরকার যেন আমাদের এই বিষয়টি একটু সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখেন। তা হলে আমরা একটু ভালো থাকতে পারতাম। 

এদিকে, যাদের কারণে এতগুলো প্রাণ গেছে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন আসিফ।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সংশ্লিষ্ট আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মাজহারুল হক বলেন, মামলাটির চার্জগঠন হয়ে গেছে। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সাক্ষী নিয়ে এসে দ্রুত সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করার চেষ্টা করবো আশা করছি, দ্রুত এ মামলার বিচার কাজ শেষ হবে।

আসামি হাসান ও সোহেলের আইনজীবী মোস্তফা পাঠান ফারুক বলেন, আসামিরা নিজেরাই তো ভিকটিম। ওই ঘটনায় তাদের মা মারা গেছেন। বিল্ডিংয়েরও ক্ষতি হয়েছে। এখানে আসামিদের কোনও দোষ নেই। বিল্ডিংটি ছিলো কমার্শিয়াল। যে দাহ্য পদার্থের কথা বলা হয়েছে, তাতে তো সিটি করপোরেশনের অনুমোদন ছিল। দাহ্য পদার্থের বিষয়টি তদারকি করার দায়িত্ব সিটি করপোরেশন। 

তিনি বলেন, বর্তমানে মামলাটি চার্জগঠন হয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। চার্জগঠনের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে যাবো। 

ইমতিয়াজ আহম্মেদ ও জাওয়াব আতিরের আইনজীবী শেখ আবু সাঈদ জানান, আসামিদের সন্দিহানভাবে জড়ানো হয়েছে। মামলাটি কেবল সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে এসেছে। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত নির্ধারণ করবেন আসামিরা দোষী না নির্দোষ। আশা করি, রায়ে আসামিরা খালাস পাবেন।

ঢাকা/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়