ঢাকা     সোমবার   ০৬ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

রমনায় বোমা হামলা: বিস্ফোরক মামলার বিচার শেষ হয়নি ২২ বছরেও

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:০৪, ১৪ এপ্রিল ২০২৩   আপডেট: ১৪:৫৫, ১৪ এপ্রিল ২০২৩
রমনায় বোমা হামলা: বিস্ফোরক মামলার বিচার শেষ হয়নি ২২ বছরেও

২২ বছর আগে পয়লা বৈশাখে রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনায় ১০ জন নিহত হন। ওই ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার বিচারকাজ শেষ হলেও ২২ বছরেও শেষ হয়নি বিস্ফোরক আইনের মামলাটি। রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, আসামিপক্ষ সময়ক্ষেপণে মামলার বিচার শেষ হচ্ছে না। আসামিপক্ষের আশা, দ্রুত মামলাটির বিচার শেষ হবে। 

ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এ মামলাটি বিচারাধীন ছিল। মামলাটি যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পর্যায়ে ছিল। গত বছরের ২৮ জুলাই মামলাটি বদলি করে মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এ পাঠানো হয়। সেখান থেকে গত ৩ জানুয়ারি মামলাটি মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১৫ এর বিচারক তেহসিন ইফতেখারের আদালতে পাঠানো হয়। এদিকে কয়েকজন আসামির পক্ষে মামলাটি যুক্তিতর্ক উপস্থাপন থেকে উত্তোলন করে কয়েকজন সাক্ষীকে জেরা করার আবেদন করেন। মুফতি আ. হাই গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার আইনজীবী ইদি আমিন ৫ সাক্ষীকে পুনরায় জেরার আবেদন করেন। যদিও আদালত তা নামঞ্জুর করেন। এরপর আসামিপক্ষ বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে উচ্চ আদালতে যান। পরে মামলাটি যুক্তিতর্ক থেকে আসামিদের আত্মপক্ষ শুনানির পর্যায়ে আসে। এরপর গত ২৪ জানুয়ারি, ২৭ ফেব্রুয়ারি ও ৩০ মার্চ নিরাপত্তাজনিত কারণে আসামিদের কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়নি। বিচারক তেহসিন ইফতেখার আগামী ১৫ মে মামলাটির পরবর্তী তারিখ ধার্য রয়েছে।

বিস্ফোরক আইনের মামলা সম্পর্কে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু জানান, মামলাটি প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। আসামিপক্ষের কালক্ষেপণে মামলাটির বিচার শেষ হচ্ছে না। তারা কালক্ষেপণ না করলে মামলাটির বিচার শেষ হয়ে যেত। আমরা রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মামলাটি শেষ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মাহবুবুর রহমান বলেন, মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। নিরাপত্তাজনিত কারণে আসামিদের আদালতে হাজির করা হয় না। তাদেরকে ভার্চুয়ালি কারাগার থেকে আদালতে উপস্থাপনের জন্য চেষ্টা করছি। আশা করছি, আগামী মে মাসের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তি হবে।

২০০১ সালের পয়লা বৈশাখের ভোরে রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের স্থলে দুটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। সকাল ৮টা ৫ মিনিটে একটি এবং এর পরপরই আরেকটি বোমা বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলেই সাত ব্যক্তি প্রাণ হারান এবং ২০-২৫ জন আহত হন। পরে আহত ব্যক্তিদের মধ্যে আরও তিন জন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ওই ঘটনায় নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট অমল চন্দ্র চন্দ ওই দিনই রমনা থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করেন। এতে ১৪ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক আবু হেনা মো. ইউসুফ।

দুটি মামলার মধ্যে প্রায় ১৩ বছর পর হত্যা মামলার রায় হয় ২০১৪ সালের ২৩ জুন। রায়ে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ আটজনকে মৃত্যুদণ্ড ও ছয় জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, মুফতি আব্দুল হান্নান মুন্সী ওরফে আবুল কালাম ওরফে আব্দুল মান্নান, আরিফ হাসান সুমন, মাওলানা আকবর হোসাইন ওরফে হেলালউদ্দিন, মো. তাজউদ্দিন, আলহাজ মাওলানা হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মুফতি শফিকুর রহমান ও মুফতি আব্দুল হাই।

যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন শাহাদত উল্লাহ ওরফে জুয়েল, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা আ. রউফ, মাওলানা সাব্বির ওরফে আব্দুল হান্নান সাব্বির, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ ও হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া।

এদের মধ্যে সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনসহ তিন আসামি এখনও পলাতক। আর শীর্ষ জঙ্গি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান মুন্সী ওরফে আবুল কালাম ওরফে আব্দুল মান্নানের অপর এক মামলায় ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। এজন্য বিস্ফোরক মামলা হতে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

২০০১ সালের পয়লা বৈশাখ বোমা হামলায় যারা নিহতরা হলেন, চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ থানার দুবলা গ্রামের মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে আবুল কালাম আজাদ (৩৫), বরগুনা জেলার বামনা থানার বাইজোরা গ্রামের আবুল হোসেন ওরফে এনায়েত হোসেনের ছেলে জসিম (২৩), কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানার বিরামকান্দি গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে এমরান (৩২), পটুয়াখালীর সদর থানার ছোট বিমাই গ্রামের মৃত অনবী ভূষণ সরকারের ছেলে শ্যামলী পরিবহনের অসীম চন্দ্র সরকার (২৫), পটুয়াখালী জেলার বাউফল থানার কাজীপাড়া গ্রামের আবুল কাশেম গাজীর ছেলে মামুন (২৫), একই গ্রামের সামছুল হক কাজীর ছেলে রিয়াজ (২৫), একই এলাকার আবুল হাশেম গাজীর মেয়ে শিল্পী (২০), নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার রথি রুহিত রামপুর গ্রামের আবুল কালামের ছেলে ইসমাইল হোসেন স্বপন (২৭), ঢাকার দোহার থানার চরনটসোলা গ্রামের মৃত আয়নাল খাঁর ছেলে আফসার (৩৫) ও অপর একজন অজ্ঞাত পুরুষ।

ঢাকা/মামুন/ইভা   

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়