ঢাকা     সোমবার   ০৬ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

চার বছরেও শেষ হয়নি রেনু হত‌্যা মামলার বিচার

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪৮, ২০ জুলাই ২০২৩   আপডেট: ০৮:৪৮, ২০ জুলাই ২০২৩
চার বছরেও শেষ হয়নি রেনু হত‌্যা মামলার বিচার

চার বছর আগে রাজধানীর বাড্ডায় সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করার খোঁজখবর নিতে গিয়ে ছেলেধরা গুজবে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত হন তাসলিমা বেগম রেনু নামে এক নারী। তাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সর্বত্র নিন্দার ঝড় ওঠে। দাবি ওঠে দৃষ্টান্তমূলক সাজার। এ ঘটনায় অজ্ঞাত পাঁচশ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন রেনুর ভাগ্নে সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু। ডিবি পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে ১৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক দুই জনের বিরুদ্ধে দোষীপত্র দাখিল করেন। কিন্তু মামলার বিচার চার বছরেও শেষ হয়নি। তবে রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, সাক্ষীরা নিয়মিত আসলে এ বছর মামলার বিচার শেষ হবে।

ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ মোরশেদ আলমের আদালতে ১৩ জনের মামলাটি বিচারাধীন। সর্বশেষ গত ১৫ জুন এ মামলায় এক ম্যাজিস্ট্রেট ও দুই তদন্ত কর্মকর্তা সাক্ষ্য দেন। আগামী ২৪ জুলাই সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন আদালত। এদিকে দুই শিশুর মামলাটি ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক সাবেরা সুলতানা খানমের আদালত বিচারাধীন। বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ধার্য রয়েছে।

মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বলেন, আসামিরা তাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে। এরা সমাজের শত্রু। এদের কঠিন সাজা হওয়া উচিত। আমরা সেই লক্ষ‌্যে কাজ করে যাচ্ছি। নিয়মিত সাক্ষী আসলে এই বছরই মামলার বিচার কাজ শেষ হবে। এ মামলার বিচার শেষে দোষীদের সর্বোচ্চ সাজা হবে বলে প্রত্যাশা করছি।

মামলার বাদী সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু বলেন, মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ দ্রুত চলছে। আশা করছি, দ্রুত বিচার শেষ হবে। আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা হবে। যা বিশ্ব দেখবে। এমন একটা বিচার হবে যার বার্তা হবে যেন এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে। সমাজ, দেশ, বিশ্বের পরিবর্তন হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২০ জুলাই রাজধানীর বাড্ডার একটি স্কুলে সন্তানদের ভর্তির বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত হন তাসলিমা বেগম রেনু। এ ঘটনায় অজ্ঞাত ৫০০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন রেনুর ভাগ্নে সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু।

২০২০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর আব্দুল হক ১৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক দুই জনের বিরুদ্ধে দোষীপত্র দাখিল করেন।

২০২১ সালের ১ এপ্রিল ১৩ আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন আদালত।

আসামিরা হলেন- ইব্রাহিম ওরফে হৃদয় মোল্লা, রিয়া বেগম ময়না, আবুল কালাম আজাদ, কামাল হোসেন, মো. শাহিন, বাচ্চু মিয়া, মো. বাপ্পি ওরফে শহিদুল ইসলাম, মুরাদ মিয়া, সোহেল রানা, আসাদুল ইসলাম, বেল্লাল মোল্লা, মো. রাজু ওরফে রুম্মান হোসেন ও মহিউদ্দিন। 

এদের মামলাটি আগামী ২৪ জুলাই সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ধার্য রয়েছে।  এখন পর্যন্ত মামলাটিতে চার্জশিটভূক্ত ২৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৫ জনের সাক্ষ্য শেষ হয়ছে।

জাফর হোসেন পাটোয়ারী ও ওয়াসিম আহমেদ অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাদের বিচার শিশু আদালতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই মামলাটিও সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এ মামলাটি বৃহস্পতিবার (২০ ২৭ জুলাই) সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ধার্য রয়েছে। 

মামলা সম্পর্কে আসামি রিয়ার আইনজীবী হাবিবুর রহমান বলেন, রিয়া বাচ্চাকে নিয়ে স্কুলে যান। সেখানে গিয়ে ছেলে ধরা এক নারীর কথা জানতে পারেন। ওই নারীর কথাবার্তাও অসংলগ্ন ছিলো। তিনি সেখানে যান। ভিডিও ফুটেজে তাকে দেখা যায়। যাই হোক মামলার বিচার চলছে। আসামিকে নির্দোষ প্রমাণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি, ন্যায়বিচার পাবেন।

হৃদয়ের আইনজীবী বলেন, হৃদয় ওই স্কুলের সামনে সবজি বিক্রি করতো। সে দেখে কিছু লোকজন এক মহিলাকে ছেলেধরা সন্দেহে মারধর করছে। অতিউৎসাহিত হয়ে পরে সেও সেখানে যায়। মারা যাওয়ার পর সেও লাশের ওপর ২/৩ টা বাড়ি মারে। এই হলো তার অপরাধ।  

ঢাকা/মামুন/ইভা 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়