ঢাকা     সোমবার   ০৬ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

যুবলীগ নেতা মিল্কি হত্যা: ৫ বছরে সাক্ষ্য দিয়েছেন ৪ জন

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৫৫, ২৯ জুলাই ২০২৩  
যুবলীগ নেতা মিল্কি হত্যা: ৫ বছরে সাক্ষ্য দিয়েছেন ৪ জন

যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিল্কি হত্যা মামলার বিচার ১০ বছরেও শেষ হয়নি। অনেকটা ধীর গতিতে চলছে বিচার। পাঁচ বছর আগে এ মামলায় চার্জ গঠন করে বিচার শুরু হয়। এই পাঁচ বছরে মাত্র চার জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। 

২০১৩ সালের ২৯ জুলাই রাতে গুলশান শপার্স ওয়ার্ল্ড বিপণি বিতানের সামনে মিল্কিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় মিল্কির ছোট ভাই রাশেদুল হক খান বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত করে প্রথমে ১১ জনকে এবং পরে আবার ৭ জনকে অভিযুক্ত করে ১৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়। 

ঢাকার ৫ম অতিরিক্ত দায়রা জজ ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর ১৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এরপর মামলাটিতে ৭৫ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র চার জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। এমন অবস্থায় মামলাটির বিচার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ঢাকার দুই নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়েছে। মামলাটি গত বছর ২১ মার্চ ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এ বদলির আদেশ দেয় আইন মন্ত্রণালয়।

ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক এম আলী আহমেদের আদালতে গত ১২ জুলাই মামলাটির তারিখ ধার্য ছিল। কিন্তু ওই দিন পলাতক আসামিদের পক্ষে অ্যাডভোকেট আহমেদ ইমতিয়াজ তাওহিদ কোনো পদক্ষেপ নেননি। এজন্য আদালত আগামী ১০ অক্টোবর মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য করেছেন।

মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর প্রসিকিউটর সাদিয়া আফরিন শিল্পী বলেন, মামলাটির বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি করতে আমাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালত থেকে সাক্ষীদের সাক্ষ্য দিতে সমন পাঠানো হয়। সাক্ষী আসে না। তারপরও চেষ্টা করবো সাক্ষী হাজির করতে। সাক্ষী হাজির করে মামলাটির বিচার শেষ করবো। আর আসামিদের যেন দৃষ্টান্তমূলক সাজা হয়।

২০১৩ সালের ২৯ জুলাই রাতে রাজধানীর গুলশানের শপার্স ওয়াল্ডের সামনে গুলিতে নিহত হন মিল্কি। ওই শপার্স ওয়াল্ডের সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা চিত্রে দেখা যায়, ওই রাতে শপার্স ওয়াল্ডের সামনে প্রাইভেটকার থেকে মিল্কি নামার পর সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি ও টুপি পরা এক যুবক বাম কানে মোবাইলে কথা বলতে বলতে মিল্কির সামনে এসে ডান হাতে ছোট আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে প্রথমে একটি গুলি ছোড়ে।

গুলিবিদ্ধ মিল্কি বাম দিকে হেলে মাটিতে পড়ে হামাগুঁড়ি দিতে থাকেন। এসময় ওই যুবক মিল্কিকে লক্ষ্য করে সাত/আটটি গুলি ছোড়ে। এরপর পেছন থেকে এক যুবক মোটরসাইকেল চালিয়ে এলে গুলিবর্ষণকারী যুবক ওই মোটরসাইকেলের পেছনে বসে চলে যায়।

পুলিশ জানায়, সাদা পাঞ্জাবি পরা যে যুবকটিকে গুলি ছুড়তে দেখা যায় তিনি ছিলেন তারেক ওরফে কিলার তারেক এবং তারেককে মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যাওয়া যুবকের নাম সোহেল মাহমুদ।

এ ঘটনায় নিহত মিল্কির ভাই মেজর রাশেদুল হক খান বাদী হয়ে জাহিদ সিদ্দিকীসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করে গুলশান থানায় মামলা করেন।


২০১৪ সালের ১৫ এপ্রিল মামলাটিতে ১১ জনকে অভিযুক্ত করে র‌্যাবের সহকারী পুলিশ সুপার কাজেমুর রশিদ আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। ওই চার্জশিটের বিরুদ্ধে নারাজী দাখিল করেন বাদী। আদালত নারাজী আমলে নিয়ে মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন।

২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার উত্তম কুমার বিশ্বাস আরও ৭ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
আধিপত্য বিস্তার, সাংগঠনিক পদ দখল, নির্বাচনী মনোনয়ন, বিভিন্ন উৎস হতে প্রাপ্ত অর্থ বন্টন নিয়ে মিল্কির সঙ্গে তারেকের পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ওই হত্যাকাণ্ড হয় বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।

মামলার ১৮ আসামি মধ্যে ১৪ জন জামিনে আছেন। চার জন পলাতক রয়েছেন। এরা হলেন- সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল, ফাহিমা ইসলাম লোপা, শরিফ উদ্দিন চৌধুরী ও সৈয়দ মুজতবা আলী। জামিনে আছেন আমিনুল ইসলাম ওরফে হাবিব, সোহেল মাহমুদ ওরফে সোহেল, চুন্নু মিয়া, আরিফ ওরফে আরিফ হোসেন, সহিদুল ইসলাম, ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ, জাহাঙ্গীর মণ্ডল, রফিকুল ইসলাম চৌধুরী, তুহিনুর রহমান ফাহিম, মোহাম্মদ রাশেদ মাহমুদ ওরফে আলী হোসেন রাশেদ, সাইদুল ইসলাম, সুজন হাওলাদার, ডা. দেওয়ান মো. ফরিদউদ্দৌলা ও মামুন-উর- রশীদ।

আসামিপক্ষের আইনজীবী সিরাজুল হক ফয়সাল বলেন, মামলাটি সাক্ষ্য পর্যায়ে রয়েছে। এক বছরের অধিক সময় আগে সাক্ষ‌্য হয়েছে। আর সাক্ষী আসছে না। ১৮ জন তো আর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত না। ৩/৪ জন ঘটনাটি ঘটিয়েছে। রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করতে অনেককে জড়ানো হয়েছে। আমরাও চাচ্ছি, মামলাটির বিচার যেন শেষ হয়। এতে যারা দোষী তারা সাজা পাবে। আর নির্দোষীরা তো খালাস পাবে।  

আসামি ডা. ফরিদউদ্দৌলার আইনজীবী হেমায়েত উদ্দীন মোল্যা বলেন, তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। না জেনেশুনে ভিকটিমের চিকিৎসা করতে গেছেন। ভিকটিমের শরীর থেকে একটা গুলি বের করে এক জনের হাতে দিয়েছে। এটাই তার অপরাধ। সাক্ষীরা আদালতে আসে না। আসামিদের নিয়মিত আদালতে আসতে হচ্ছে। তারা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

ঢাকা/মামুন /ইভা 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়