ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

তাবুর নিচেও জায়গা হয় না

আবু বকর ইয়ামিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৩৭, ১২ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
তাবুর নিচেও জায়গা হয় না

আবু বকর ইয়ামিন : প্রেসক্লাবের পশ্চিম দিকে সরু ফুটপাত। সেখানে বসে আছেন শিক্ষক আব্দুর সাত্তার। আপনারা এখানে কী আন্দোলন করছেন, আপনাদের মূল দাবি কী? কাছে গিয়ে প্রশ্ন করতেই কেদেঁ দেন তিনি।

আব্দুর সাত্তার বলেন, ‘২৫ দিন ধরে এখানে বৃষ্টিতে ভিজে, ফুটপাতে আছি। রাস্তায় নামলে পুলিশ দৌড়ানি দেয়। ফুটপাতে মলমূত্র ত্যাগের টাট্টিখানার পাশে তাবু বিছিয়ে ঘুমাই। রাতে হঠাৎ যখন বৃষ্টি শুরু হয়, তখন তাবুর নিচেও জায়গা হয় না। এর মধ্যেই বসে রাত কাটিয়ে দেই। কোনো কোনো মহিলার আবার ছোট ছোট বাচ্চা আছে। তাদের জন্য জায়গা করে দিতে হয়। ঠান্ডা। মশার কামড়। এভাবে আজ ২৫ দিন (১১ জুলাই ২০১৯) পার করছি। কেউ এসে একবার অবস্থাটাও জানতে চায়নি।’

 

এসব বলতে বলতেই হাউমাউ কেঁদে ফেলেন আব্দুর সাত্তার।  নেত্রকোণা মঙ্গলসিদ্ধ পূর্বপারা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তিনি। দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে বিনা বেতনে জ্ঞানের আলো বিতরণ করছেন। বেতন হবে হবে, আশা নিয়ে শিক্ষকতা করে যাচ্ছেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, জীবনের শেষ সময়ে এসেও পাচ্ছেন না বেতন।

ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়ে মা আর চার বোনের দায়িত্ব নেন আব্দুর সাত্তার। বাড়ির কিছু কৃষিজমি ছিল। সেগুলো দেখাশুনা করছিলেন। এরই মধ্যে ধার দেনা করে একে একে চার বোনকে বিয়ে দেন। সংসারে অভাব। অভাবে বড় সন্তানকে পড়াতে পারেননি। একটা ছোট চায়ের দোকান দেন। ছোট ছেলেও একটা চায়ের দোকানে কাজ করে পরিবারে কিছু সাহায্য করেন। এভাবে সংসার চলে। মেঝ সন্তান নিজে নিজে উপার্জন করে অনার্স পড়ছেন।

 

বড় মেয়ে বিয়ে দেন এক গার্মেন্টসকর্মীর সঙ্গে। ওই ঘরে এক কন্যা সন্তান আছে। বয়স ৮ বছর। কিন্তু স্বামীর নির্যাতনে ভেঙে যায় সংসার। মেয়ে, নাতির ভরন-পোষণের দায়িত্ব এসে পড়ে আব্দুর সাত্তারের কাঁধে। দ্বিতীয় মেয়েকে বিয়ে দেন আরেক গার্মেন্টস শ্রমিকের সঙ্গে। মেয়েও কাজ করেন গার্মেন্টসে। এসব বলতে বলতে কান্নায় বুক ভেঙে পড়েন তিনি।

তবে হাল ছাড়তে চান না তিনি। আব্দুর সাত্তার বলেন, ‘আশাবাদী, হয়তো কোনো একসময় প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ হবে। আমি কিছু বেতন পাব। পরিবারের আশাপূরণ করতে পারব।

 

আব্দুর সাত্তার বলেন, ‘আমার জীবনে যে এরকম হবে  ভাবিনি। ছাত্র অবস্থায় ছাত্রলীগ করেছি। অথচ এসব নিয়ে এখন কথা বলতে গেলে কোনো কেউ কথা বলতে চান না। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরেও অনেকবার যেতে চেয়েছি। কিন্তু পারিনি।’

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ জুলাই ২০১৯/ইয়ামিন/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়