ভ্রাম্যমাণ শৌচাগার ব্যবহারে সাড়া মিলছে না
আসাদ আল মাহমুদ : পথচারী ও ছিন্নমূল মানুষদের মল-মূত্র ত্যাগের জন্য রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ শৌচাগারের (মোবাইল টয়লেট) ব্যবস্থা করা হলেও এগুলো ব্যবহারের ব্যাপারে তেমন সাড়া মিলছে না। ঠিকমতো পরিস্কার না করায় বেশির ভাগ মোবাইল টয়লেট ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে গেছে।
অনেকে বলেছেন, উদ্যোগটি চমৎকার। কিন্তু তদারকি প্রতিষ্ঠান ঠিকমতো পরিস্কার না করায় এগুলো উপকারের পরিবর্তে বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
রাজধানীতে প্রতিদিন বিভিন্ন কাজে বের হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেও গুরুত্বপূর্ণ কাজে ঢাকায় আসেন অসংখ্য মানুষ। এছাড়া রাজধানীতে রয়েছে কয়েক লাখ ছিন্নমূল মানুষ। তাদের মলমূত্র ত্যাগের জন্য পাবলিক টয়লেটের পাশাপাশি ৩৬টি মোবাইল টয়লেট স্থাপন করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)।
প্রথমদিকে পথচারীরা মোবাইল টয়লেট ব্যবহার করলেও এখন ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত হওয়ায় ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমছে। ছিন্নমূল মানুষদের জন্য মোবাইল টয়লেট বসানো হলেও তারা বিভিন্ন পার্ক, সড়ক, পার্কের পুকুরের পাশেই মল-মূত্র ত্যাগ করছেন।
রাজধানীর বংশালের বাসিন্দা রেজওয়ানুল করিম নিরব রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ব্যবসায়িক কাজে পল্টন, ফার্মগেট, মিরপুর, ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন এলাকায় যেতে হয়। প্রাকৃতিক কাজ সারার জন্য মোবাইল টয়টেল ব্যবহার করতাম। পাবলিক টয়লেটের চেয়ে মোবাইল টয়লেটের অবস্থা ছিল ভালো। কিন্তু পরিস্কার না করায় এখন মোবাইল টয়লেট দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে গেছে। একারণে অনেকেই ব্যবহার করতে চায় না।’
তিনি বলেন, ‘শনিবার পল্টনে মোবাইল টয়লেট ব্যবহার করতে গিয়ে খুব বিপাকে পড়েছি। এক দিকে বিশ্রি গন্ধ এবং তামাক জাতীয় গন্ধ। সিদ্ধান্ত নিয়েছি আর কোনো দিন মোবাইল টয়লেট ব্যবহার করবো না। হয়তো আমার মতো অনেকেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দিন দিন মোবাইল টয়লেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমছে। এছাড়া নারীরা মোবাইল টয়টেল ব্যবহার করেন না। কারণ, এ টয়লেট নারী বান্ধব নয়।
এ বিষয়ে গুলিস্তানে কথা হয় পথচারী এস এন নীরবের সঙ্গে। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, রাজধানীর পাবলিক ও মোবাইল টয়লেটের অবস্থা খুব খারাপ। একবার ব্যবহার করলে দ্বিতীয়বার কেউ ব্যবহার করতে চায় না। যারা ব্যবহার করেন তারা ঠেকায় পড়ে করেন। তবে শুরুতে মোবাইল টয়লেট পরিচ্ছন্ন ছিল। এখন মান অনেক খারাপ। খু্বই দুর্গন্ধযুক্ত। মানুষ বিপদে পড়ে ব্যবহার করে। ডিসিসির এ বিষয়ে কার্যকারী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
তিনি বলেন, ‘রাজধানীর বিভিন্ন পার্কে ছিন্নমূলরা মল-মূত্র ত্যাগ করে পরিবেশ নষ্ট করছে। ডিএসসিসির এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়ে পাবলিক ও মোবাইল টয়লেট ব্যবহারে উদ্ভুদ্ধ করা উচিত। যেসব ছিন্নমূল খোলা জায়গায় মল-মূত্র ত্যাগ করবেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। পাশাপাশি মোবাইল টয়লেট আরো আধুনিক করা উচিত।’
ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ‘রাজধানী ঢাকা হবে উন্নয়নের রোল মডেল। নাগরিকদের ভোগান্তি কমাতে দক্ষিণ সিটিতে আরো শতাধিক পাবলিক টয়লেট করা হবে। ২০১৭ সালের মধ্যে এসব টয়লেট নির্মাণ কাজ শেষ হবে। এছাড়া পর্যাপ্ত মানসম্মত মোবাইল টয়লেটের ব্যবস্থা করা হবে।
ওয়াটার এইডের আর্থিক সহায়তায় ২০১১ সালের নভেম্বরে এ্সোসিয়েশন ফর রিয়েলাইজেশন অব বেসিক নিডস (আরবান) নামে সাড়ে চার বছর মেয়াদী এ প্রকল্পটি চালু হয়। প্রকল্পের আওতায় ৪৬টি মোবাইল টয়লেট তৈরি করা হয়, যার ৩৬টি নগরীর বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা হয়েছে। বাকি দশটি ব্যবহূত হয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে চলতি বছরের মার্চ মাসে। এখন দেখা যাচ্ছে, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত এসব শৌচাগারের বেশিরভাগের অবস্থাই খারাপ। আবার নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষ ছাড়া কেউই খুব একটা এ মোবাইল টয়লেট ব্যবহার করছে না। মোবাইল টয়লেটে প্রস্রাব ও পায়খানায় জনপ্রতি নেয়া হয় পাঁচ টাকা। অনেক সময় বেশিও নেয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
অ্যাসোসিয়েশন ফর রিয়েলাইজেশন অব বেসিক নিডস্ (আরবান) এর সমন্বয়কারী মোহাম্মাদ কামাল উদ্দিন বলেন, ‘ঢাকা নগরী বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল নগরী। গবেষণায় দেখা যায়, ঢাকায় প্রতিদিন ৫৫ লাখ মানুষের পাবলিক টয়লেট ব্যবহারের যে ব্যবস্থা রয়েছে তা চাহিদার তুলনায় খু্বই কম। পাবলিক টয়লেট সুবিধার অপ্রতুলতার কারণে মোবাইল টয়লেট অপরিহার্য।’
ডিএসসিসির এক কর্মকর্তা রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ঢাকা নগরীর পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য পরিবেশবান্ধব টয়লেট ব্যবস্থার বিকল্প নেই। এজন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে টয়লেট সেবা এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করতে হবে। টয়লেট সেবাকে জাতীয় কর্মসূচি হিসেবে নিতে হবে। এতে পরিবেশ দূষণ রোধ করা যাবে। নগরবাসীর জন্য মানসম্মত মোবাইল টয়লেট ও পাবলিক টয়লেট করার উদ্যোগ নিয়েছে ডিএসসিসি।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/আসাদ/হাসান/শাহনেওয়াজ
রাইজিংবিডি.কম