ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৮ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

জানুয়ারিতে ইপিএ চুক্তির আশা

৯৭ উপখাত উন্মুক্ত করছে বাংলাদেশ, জাপান ১২০টি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০০:৩৮, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫   আপডেট: ০০:৪০, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫
৯৭ উপখাত উন্মুক্ত করছে বাংলাদেশ, জাপান ১২০টি

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তির (ইপিএ) খসড়া চুড়ান্ত হয়েছে। আগামী মাসে (জানুয়ারি) চুক্তি সই হবে। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রথম অন্য কোনো দেশের সঙ্গে এই ধরনের অর্থনৈতিক চুক্তি করতে যাচ্ছে। এ চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ জাপানের জন্য ৯৭টি উপখাত উন্মুক্ত করতে সম্মত হয়েছে। 

আরো পড়ুন:

অন্যদিকে জাপান বাংলাদেশের জন্য ১২০টি উপখাতে চারটি মোডে সার্ভিস উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, জানান উপদেষ্টা।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ-জাপান অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি নেগোসিয়েশন বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তিনি। 

প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ এবং বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান এই সময় উপস্থিত ছিলেন।

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‍“একটি ইন্টেন্সিভ নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে আমরা জাপানের সঙ্গে ইপিএর চুক্তির খসড়া চুড়ান্ত করেছি। জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আজ (২২ ডিসেম্বর) আমার ফোনে কথা হয়েছে। আগামী মাসে ইপিএ সই হবে।” 

তিনি বলেন, “বিশ্বের অন্য কোনো দেশের সাথে বাংলাদেশের এটি প্রথম কোনো অর্থনৈতিক চুক্তি। এ চুক্তির ফলে উভয় দেশের বিনিয়োগ আকর্ষিত হবে। দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়বে।” 

বাণিজ্য সচিব বলেন, “আমরা ২০২৪ সালের শেষে এ চুক্তির প্রক্রিয়া শুরু করেছিলাম। আট দফা বৈঠক শেষে এখন চুক্তিটি চুড়ান্ত হয়েছে।” 

লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, “এই ধরনের অর্থনৈতিক চুক্তি আমরা আগে কখনো করিনি, যে কারণে এ ক্ষেত্রে কী করতে হয়, সেটাও আমাদের সেভাবে জানা ছিল না। এই সরকারের সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টায় আমরা সেটা পেরেছি। নিঃসন্দেহে এটি বাংলাদেশের জন্য ভালো চুক্তি।”  

চৌধুরী আশিক মাহমুদ বলেন, “জাপানের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘ সুসম্পর্ক রয়েছে। তবে এ দেশে জাপানের বিনিয়োগ মাত্র ৫০০ মিলিয়ন ডলার। এটা বিশ্বের অন্য দেশে জাপানের বিনিয়োগের তুলনায় খুব অল্প। আগে যখন আমরা জাপানের কাছে অধিক বিনিয়োগ চেয়েছি, তখন এ ধরনের (অর্থনৈতিক চুক্তি) কোন স্ট্রাকচার ছিল না বলে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হতো।”  

তিনি বলেন, “আমাদের সব সময় ভিয়েতনামের সঙ্গে তুলনা করা হয়। কিন্তু ভিয়েতনামের ৩০ দেশের সঙ্গে এগ্রিমেন্ট আছে। আমরা মাত্র শুরু করছি। তবে যে যাত্রা শুরু হলো, আগামী সময়ে আরও অনেক অর্থনৈতিক চুক্তি করতে পারব। এলডিসি উত্তরণের চ্যালেঞ্জগুলো আমাদের জন্য সহজ হবে।” 

চৌধুরী আশিক মাহমুদ বলেন, “আগে এই দেশে জাপানের বিনিয়োগ দু-একটা ক্ষেত্রে ছিল, এখন অনেক খাতে সেটা বিস্তৃত হবে। বিশেষ করে লজিস্টিক, ইলেকট্রনিক্স, আইটি ও  অটোমোবাইল খাতে বড় বিনিয়োগ আসবে। এর ফলে বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং প্রযুক্তি স্থানান্তর আরো ত্বরান্বিত হবে।” 

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এই চুক্তি বাংলাদেশের জন্য ব্যাপক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সুফল বয়ে আনবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশে বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বিনিযোগ বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে। যার মাধ্যমে বাংলাদেশ-জাপান অর্থনৈতিক সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে।

চুক্তি সম্পাদিত হলে চুক্তি স্বাক্ষরের প্রথম দিন থেকেই ৭৩৭৯টি পণ্যে জাপানের বাজারে তাৎক্ষণিক শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা পাবে। অন্যদিকে জাপান ১০৩৯টি পণ্যে বাংলাদেশের বাজারে তাৎক্ষণিক শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে।

উভয় দেশের উপদেষ্টা পরিষদ বা ক্যাবিনেটের অনুমোদন ও পরবর্তী আইনগত ধাপসমূহ সম্পন্নের পর এটি আগামী মাসেই সই হবে।

অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি বা ইপিএ হলো দুই দেশের মধ্যে একটি মুক্ত বাণিজ্য এলাকা বা এফটিএ তৈরির পরিকল্পনা। মুক্ত বাণিজ্য এলাকায় বিভিন্ন বাণিজ্যে বাধা, আমদানি কোটা, শুল্ক কমাতে এবং একে অন্যের সঙ্গে পণ্য ও পরিষেবার বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য এ ধরনের চুক্তি দুটি দেশের পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখে।

ঢাকা/এএএম/রাসেল

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়