ঢাকা     বুধবার   ০৮ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

ঝালকাঠিতে ওএমএস-টিসিবির বিক্রয়কেন্দ্রে উপচে পড়া ভিড়

ঝালকাঠি প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:২২, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২  
ঝালকাঠিতে ওএমএস-টিসিবির বিক্রয়কেন্দ্রে উপচে পড়া ভিড়

ঝালকাঠিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। ন্যায্য দামে পণ্য কিনতে ওএমএস ও টিসিবি’র বিক্রয়কেন্দ্রে উপচে পড়া ভিড় লেগেই থাকে। কিন্তু, চাহিদার চেয়ে ডিলারের কাছে পণ্য কম থাকায় অনেকেইে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন।

ঝালকাঠিতে দিনে দিনে ওএমএস ও টিসিবি‘র বিক্রয়কেন্দ্রের সামনে মানুষের লাইন দীর্ঘ হচ্ছে। ভিড়ের কারণে পর পর কয়েক দিন লাইনে দাঁড়িয়েও পণ্য পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। তাদের দাবি, বরাদ্দ ও ডিলারের পরিমাণ বাড়ালে দুর্দশা কমবে দরিদ্র মানুষের।

মাসখানেক ধরে ঝালকাঠি শহরে সব নিত্যপণ্যের দাম দফায় দফায় বেড়েছে। চাল, ডাল, তেল, আলু, পেঁয়াজ, সবজি, মাছ, মাংস, মুরগিসহ সব জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া। ফলে, নাভিশ্বাস উঠেছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের। তাই, এখন হতদরিদ্রদের পাশাপাশি মধ্যবিত্তরা ন্যায্য মূল্যে টিসিবি‘র পণ্য কিনতে ভিড় করছেন। এমনকি পণ্য কিনতে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন গ্রাম থেকে জেলা শহরে আসছে মানুষ। প্রতিদিন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ বিভিন্ন ডিলার পয়েন্টে সকাল থেকেই মানুষজন ভিড় করছেন।

ঝালকাঠি শহরে বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়, ১০ দিন আগে তা ছিল ১৫০ টাকা। এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়, ১০দিন আগে তা ছিল ১৬০ টাকা। মোটা দানার মসুর ডাল ৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, গত সপ্তাহে তা বিক্রি হয়েছে ৮৫ টাকায়। চিনি ৮০ টাকা। দেশি-বিদেশি পেঁয়াজের কেজি ৩০ থেকে বেড়ে ৪৫-৫০ টাকা হয়েছে। টিসিবির বিক্রয়কেন্দ্রে প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১১০ টাকা, প্রতি কেজি মসুর ডাল ৬৫ টাকা, চিনি ৫৫ টাকা এবং পেঁয়াজ ৩০ টাকা।

চালের আড়তে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি কেজি গুটি স্বর্ণা চালের দাম ৪০ থেকে ৪১ টাকা। পাইজাম চাল ৪৫-৪৬ টাকা। বিআর-২৯ চালের কেজি ৪৮-৪৯ টাকা। বিআর-২৮ এর দাম ৫৩-৫৪ টাকা। মিনিকেট ৫৭-৫৮ টাকা। উন্নত মিনিকেট ৬০-৬১ টাকা। নাজিরশাইল ৬৬-৬৭ টাকা। সিদ্ধ কাটারিভোগ ৯৩-৯৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মুদির দোকানে আটা বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা কেজি দরে। ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকায়। অপরদিকে, খোলাবাজারে (ওএমএস) প্রতি কেজি চাল ৩০ টাকা ও খোলা আটা ১৮ টাকা দরে বিক্রি করা হয়।

ঝালকাঠি জেলা খাদ্য অফিস ও বরিশাল টিসিবি‘র কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সরকারিভাবে প্রতিদিন খোলাবাজারে (ওএমএস) জনপ্রতি ডিলারের জন্য ৫০০ কেজি চাল ও ৫০০ কেজি আটা বরাদ্দ থাকে। সপ্তাহের ৬ দিন ১০ জন ডিলারের মাধ্যমে ওএমএসের চাল-আটা বিক্রি করা হয়। এসব কেন্দ্র থেকে একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি চাল ও পাঁচ কেজি আটা নিতে পারেন। ৫ কেজি হারে ১ হাজার কেজি চাল-আটা ২০০ মানুষ পেতে পারেন। কিন্তু, প্রতিটি ডিলারের পয়েন্ট লাইনে থাকে ৩০০ থেকে ৪০০ মানুষের ভিড়। কয়েক দিন ধরে ভিড় বেড়েছে। আগে বিক্রি বিকেল পর্যন্ত চলত। এখন দুপুরের মধ্যেই পণ্য শেষ হয়ে যায়।

এদিকে, ঝালকাঠিতে টিসিবির ৩৫ জন ডিলার আছেন। পণ্যস্বল্পতার কারণে প্রতিদিন একজন ডিলার খাদ্যপণ্য বিক্রি করছেন। টিসিবির ডিলার পয়েন্টেও বেলা বাড়তেই ভিড় বেড়ে যায়। প্রতিদিন দুই শতাধিক মানুষ খাদ্যপণ্য না পেয়ে ফিরে যান বলে ভোক্তাদের অভিযোগ।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে ঝালকাঠি শহরের ফড়িয়া পট্টি ন্যাশনাল ব্যাংকের সামনে দেখা যায়, টিসিবির পণ্য কিনতে লম্বা লাইন। পণ্য শেষ হয়ে যাওয়ায় ডিলার দোকানের শাটার বন্ধ করে দিয়েছেন। ক্রেতারা পণ্য না পেয়ে বাইরে হাহাকার করছেন।

ফড়িয়া পট্টিতে টিসিবির ডিলারের দোকানের সামনে লাইনে দাঁড়িয়েছেন গৃহপরিচারিকা শিরিন বেগম। তিনি বলেন, ‘সংসারে লোক চারজন। টিসিবি থেকে কম দামে তেল-ডাইল পাইলে কিছু পয়সা বাঁচে। কিন্তু দুই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও কিছু কিনতে পারিনি।’

বেলা ১২টার দিকে শহরের কাঠপট্টি এলাকায় ওএমএসের চাল কিনতে লাইনে দাঁড়ানো এক নারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘স্বামীর একার আয়ে সংসার চলে না। তাই, কম দামে চাল কিনতে লাইনে দাঁড়িয়েছি।’

টিসিবি ডিলার জাহাঙ্গীর হোসেন বাবুল বলেন, ‘টিসিবির বরাদ্দ কম থাকায় ক্রেতাদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয়। চাহিদা অনুযায়ী পণ্যের বরাদ্দ বাড়িয়ে ক্রেতাদের ভোগান্তি কমানো উচিত।’

ওএমএস ডিলার নান্না মিয়া বলেন, ‘বরাদ্দস্বল্পতার কারণে প্রতিদিন মানুষের চাহিদা অনুযায়ী চাল-আটা সরবরাহ করতে ডিলারদের হিমশিম খেতে হয়। লাইনে দাঁড়ানো সব মানুষকে চাল দিতে না পেরে আমাদেরও খারাপ লাগে।’

জেলা খাদ্য কর্মকর্তা তানভীর হোসেন বলেন, ‘বরাদ্দ কম থাকায় চাল কেনার জন্য ওএমএসের ডিলারদের ওপর চাপ বেড়েছে। তবে, আপতত বরাদ্দ বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।’

জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী বলেছেন, ‘টিসিবির নতুন ডিলার নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ওএমএসের ডিলারদের বরাদ্দ বাড়াতে কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’

অলোক/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ