ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

অসহায় মানুষগুলো এখনো খোঁজেন মীমকে

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪৭, ২৭ জানুয়ারি ২০২৩  
অসহায় মানুষগুলো এখনো খোঁজেন মীমকে

মাইশা মমতাজ মীম। ছবি: সংগৃহীত

অসহায় মানুষের বন্ধু মাইশা মমতাজ মীমকে ছাড়াই কেটে যাচ্ছে প্রায় বছরখানেক। প্রতিদিনই ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। সেই হতভাগ্যদের একজন মিম। যার ইচ্ছে ছিলো দেশের বাইরে গিয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ ও আত্মমানবতার সেবায় নিজেকে ব্রত করা। কিন্তু স্বপ্নটা মিশে গেছে সড়ক দুর্ঘটনায়। সেই সঙ্গে মিমের পরিবার যেমন তাকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে তেমনি তার সহযোগিতা পাওয়া অসহায় মানুষগুলো তাকে খুঁজে ফিরে প্রতিনিয়ত।

গত বছর ১ এপ্রিল কুড়িল ফ্লাইওভার থেকে নামার পথে একটি কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাইশা মমতাজ মীমের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় মীমের বাবা নুর মোহাম্মদ মামুন খিলক্ষেত থানায় সড়ক পরিবহন আইনে মামলা করেন। মামলার পর কাভার্ডভ্যান চালক চালক সাইফুল ইসলাম ও তার সহকারী মশিউর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ৩ এপ্রিল তাদের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ড শেষে ৮ এপ্রিল তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এরপর তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। আসামি মশিউর উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। তবে চালক সাইফুল ইসলাম কারাগারেই রয়েছেন।

এদিকে মামলাটি তদন্ত করে গত ২২ ডিসেম্বর সাইফুল ও মশিউরকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা খিলক্ষেত থানার এসআই রিপন কুমার। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি মামলার তারিখ ধার্য রয়েছে।

জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা রিপন কুমার বলেন, দুই জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছি। ড্রাইভারের অসাবধানতাবশত দুর্ঘটনাটি ঘটে। ড্রাইভার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছেন, তিনি স্কুটি দেখতে পাননি। না দেখার কারণে স্কুটিতে ধাক্কা লাগে আর মিম মারা যায়।

এদিকে চার্জশিটে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, ২০২২ সালের ১ এপ্রিল সকাল আনুমানিক সোয়া ৭টার দিকে খিলক্ষেত থেকে ৩০০ ফিট রাস্তাগামী ফ্লাইওভারের ওপর ওয়াই জংশনের ৫০ গজ উত্তর দিকে ভিকটিম মায়শা মমতাজ মীম স্কুটি চালিয়ে পৌঁছায়। পিছন দিক থেকে ঢাকা মেট্রো ট-১৩-১৬৪৫ কাভার্ডভ্যানের চালক দ্রুত ও বেপরোয়া গতিতে গাড়িটি চালিয়ে এসে ধাক্কা দেওয়ায় ভিকটিম স্কুটি থেকে ছিটকে ব্রিজের ওপর পরে যায়। পরে কাভার্ডভ্যানের চাকায় পিষ্ট হয়ে ভিকটিম মারা যায় এবং স্কুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

মীমের বাবা নুর মোহাম্মদ মামুন বলেন, প্রায় এক বছর হতে চললো মেয়েটা মারা গছে। সব সময় ওর কথা মনে পড়ে। ওর মা এখনো কান্নাকাটি করে। মেয়েকে হারিয়ে বেশি ভেঙে পড়েছে ও।

তিনি বলেন, ওর আশা ছিলো দেশের বাইরে পড়াশোনা করার। পড়াশোনা শেষে দেশে ফিরে মানুষের সেবা করার। ছোট থেকেই মীম জনসেবা করতো। শীতের সময় বন্ধুদের নিয়ে অসহায় মানুষের মাঝে শীতের কাপড় বিতরণ করতো। আবার ডেঙ্গুর সময় মানুষকে সচেতন করতে কাজ করেছে। পরের জন্য কাজ করতে ও খুব পছন্দ করতো। অনেকটা স্বাধীনচেতা ছিলো। আমরাও ওর স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতাম না। ওর ওপর আমাদের আস্থা ছিলো। আমাদের প্রত্যাশা ছিলো ও একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে উঠুক। নিজেকে গড়ে তুলবে। মাস্টার্স করতে দেশের বাইরে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু তা তো আর হলো না।

নুর মোহাম্মদ মামুন বলেন, যে দুর্ঘটনায় ও মারা গেছে এতে ওর কোনো দোষ ছিল না। কি ঘটেছে দেশের মানুষ তো দেখেছে। ও তো সচেতন, সাবধানই ছিলো। ওর যদি দোষ বা ভুল থাকতো তাহলে আমরা বিচারই চাইতাম না। ওদের অসচেতনতা আমার মেয়ের প্রাণটাই কেড়ে নিলো। মীমকে হারিয়ে আমাদের যে অবস্থা হয়েছে আমরা চাই না আর কোনো মা-বাবার জীবনে এমন ঘটনা ঘটুক। আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা না হলে তো এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে।  দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা হোক।

আসামিপক্ষের আইনজীবী ইকবাল আহমেদ খান বলেন, দুই আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল হয়েছে। চার্জশুনানির সময় তাদের অব্যাহতির আবেদন করবো। অব্যাহতি পেয়ে গেলে তো আর কিছু নাই। আর যদি আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন হয়ে যাই তাহলে সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে তাদের নির্দোষ প্রমাণ করতে চেষ্টা চালিয়ে যাবো।

জানা যায়, গত বছর ১ এপ্রিল সকালে উত্তরার বাসা থেকে বের হয়ে স্কুটি নিয়ে গুলশানের দিকে যাচ্ছিলেন মীম। কুড়িল ফ্লাইওভার থেকে নামার পথে একটি কাভার্ডভ্যানের সঙ্গে তার স্কুটির ধাক্কা লাগে। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন মীম। পরে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে একজন পথচারী মীমকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে ৯৯৯-এ ফোন করেন। পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠায়। এই ঘটনার পরের দিন সন্ধ্যায় রাজধানীর খিলক্ষেত থানায় ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনে মামলা করেন মীমের বাবা নুর মোহাম্মদ মামুন।

/মামুন/সাইফ/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়