ঢাকা     সোমবার   ০৬ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

তারা বাড়ি ফিরেছেন, তবে লাশ হয়ে

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:০৯, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  
তারা বাড়ি ফিরেছেন, তবে লাশ হয়ে

ছবি: সংগৃহীত

সুজন হক। কেয়ারটেকার হিসেবে কাজ করতেন চকবাজারের ওয়াহেদ ম্যানশনে। কয়েক দফা ছুটি চেয়েছিলেন বাড়ি যেতে। মালিক দেননি। বলেছিলেন, মার্চে যেতে। সুজন হকের মেয়ে জামাই মো. ইব্রাহিমের পান সিগারেটের দোকান ছিলো ওই ভবনে। বাড়িতে নতুন ঘর তুলবেন। এজন্য বাড়ি যাবেন। দোকান যেন বন্ধ না থাকে এজন্য চাচাতো ভাই আনোয়ার হোসেনকে ঢাকায় এনেছিলেন। সপ্তাহখানেক পর তারও ফিরে যাওয়ার কথা ছিলো। তারা সবাই বাড়ি ফিরেছেন, তবে লাশ হয়ে।

২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৭১ জন নিহত হন। আহত হন আরও অনেক। এদের মধ্যে সুজন হক, ইব্রাহিম ও আনোয়ারও নিহত হন।

সুজন হকের ছেলে নুরনবী বলেন, বাবা কেয়ারটেকার হিসেবে ওয়াহেদ ম্যানশনে কাজ করতেন। সাত মাস বাড়ি (ফেনীর সোনাগাজী) যেতে পারেননি। বাড়ি যেতে উদগ্রীব ছিলেন। মালিকের কাছে কয়েক দফা ছুটি চেয়েছিলেন। কিন্তু ছুটি পাননি। পরে চাকরি ছেড়েই দিয়েছিলেন। মালিককে নতুন লোক দেখতে বলেছিলেন। মার্চ মাস তার বাড়ি যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু এর আগে আগুনে পুড়ে মারা গেলেন বাবা।

তিনি বলেন, বড় দুলাভাই ইব্রাহিমের পান সিগারেটের দোকান ছিলো ওই ভবনে। উনি বাড়িতে নতুন ঘর তুলবেন। দোকান যেন বন্ধ রাখতে না হয় এজন্য চাচাতো ভাই আনোয়ারকে ঢাকায় নিয়ে এসেছিলেন। বুধবার (২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি) রাতে দোকানে বসে আনোয়ারকে সবকিছু বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন। ওই সময় আগুনে পুড়ে মারা গেলেন।

নুরনবী বলেন, বাবা মার্কেটের তালা দিতে ভেতরে ঢুকেছিলেন। ওই গলিতে ২৬ জন ছিলেন। সবাই মারা যান। আর দোতলা থেকে বিল্ডিং ভেঙে পড়ে। সেই চাপায় দুলাভাই ও আনোয়ার হোসেন মারা যান। 

আবেগতাড়িত হয়ে বলেন, বাবা ফেব্রুয়ারিতে ছুটি পেলেন, তবে চিরতরে। আর দুলাভাই বৃহস্পতিবার বাড়ি গেলেন, তবে লাশ হয়ে।

নুরনবী বলেন, বাবা ছিলেন একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি। তারা হারিয়ে আমরা অনেক কষ্টে আছি। ওই ঘটনার পর মা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। প্রতি মাসে তার অনেক টাকার ওষুধ লাগে। আমাদের সাইনবোর্ড হিসেবে সিটি কর্পোরেশনে মাস্টার রোলে একটি চাকরি দিয়েছে। যে কয় টাকা বেতন পায় তাতে সংসার চলে না। চাকরির নিশ্চয়তা নাই। চাকরিটা স্থায়ী হলেও একটু ভালো থাকতে পারতাম।

এদিকে ইব্রাহিম মারা যাওয়ায় মাস্টার রোলে চাকরি পেয়েছেন বোন বিবি হাজেরাও। বোনের বিষয়ে নুরনবী বলেন, দুইটা বাচ্চা আছে। যে বেতন পান অনেক কষ্টে চলতে হয়। আমরা আমাদের চাকরিটা স্থায়ী করার আবেদন করছি সরকারের কাছে।

তিনি বলেন, যাদের কারণে আমরা এতগুলো মানুষদের হারালাম, তাদের তো বিচার দেখলাম না। বিচার পাইনি। আমরা বিচার চাই। কিন্তু বিচার তো হচ্ছে না। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা চাই।

/মামুন/সাইফ/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ