ঢাকা     সোমবার   ০৬ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

বাবা হত্যার বিচার চান মেয়ে

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩১, ১৮ জুন ২০২৩  
বাবা হত্যার বিচার চান মেয়ে

শেখ সেলিম (বামে) ও শেখ নাসির

আজ বাবা দিবস। বাবা সন্তানের কাছে এক শাশ্বত, মহান, শ্রদ্ধেয় গভীয় অনুভূতির শব্দ। বাবা শব্দটি একটি আশ্রয়ের নাম, নির্ভরতার প্রতীক। কিন্তু নুরজাহান বেগমের সেই কপাল নেই। কারণ বাবা আজ পৃথিবীতে নেই।

সম্পত্তি নিয়ে দ্বন্দ্বে বাবা খুন হন। এই খুনের ঘটনায় ভাইয়ের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন নুরজাহান। ভাইয়ের দৃষ্টান্তমূলক সাজা চান তিনি। তবে তার মা ও দুই বোন চান ভাইয়ের মুক্তি। কিন্তু তিনি তার সিদ্ধান্তে অটল। কারণ তিনি চান তার বাবার নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার হোক। এই বিচার চাইতে গিয়ে তার সঙ্গে মা ও বোনের দূরত্ব তৈরি হয়েছে অনেকটা।

পড়ুন: বিশ্ব বাবা দিবস আজ

নুরজাহান বলেন, একজন সুস্থ মানুষকে নির্মমভাবে খুন করা হয়েছে। বাবার খুনির দৃষ্টান্তমূলক সাজা চাই।

গত বছরের ১৬ মার্চ রাজধানীর ভাটারা থানার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় শেখ সেলিম (৭০) খুন হন। এ ঘটনায় ওই দিনই ভাটারা থানায় ভাই শেখ নাসির ওরফে এস এন শেখ আলীর বিরুদ্ধে মামলা করেন সেলিমের মেয়ে নুরজাহান বেগম। থানা পুলিশের হাত ঘুরে মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সর্বশেষ গত ৬ জুন মামলাটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ধার্য ছিল। কিন্তু ওই তদন্ত সংস্থা পিবিআই প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি। এজন্য ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলামের আদালত আগামী ১৯ জুলাই প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন। এদিকে বাবা খুন হওয়ার পর নাসির থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। পরে পুলিশ তাকে আদালতে প্রেরণ করে। নাসির স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন। কয়েক দফা জামিন আবেদন করলেও আদালত তা নাকচ করে দেন।

নুরজাহান বেগম বলেন, আব্বুর তার একটা ফ্রেন্ডের সঙ্গে বিজনেস করার কথা ছিলো। বাবা বিজনেসে তিন কোটি টাকা ইনভেস্ট করতে চেয়েছিলেন। টাকা নিয়ে ভাইয়ের সাথে কথা কাটাকাটি হয়।

তিনি বলেন, ১৬ মার্চ আব্বু ফজর নামাজ পড়তে ওঠেন। তখন তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। আমার ভাই প্রথমে আব্বুকে বালিশচাপা দিয়ে মারতে চেয়েছিল। কিন্তু আব্বু বাথরুমে থাকায় সম্ভব হয়নি। পরে আবার আব্বুকে খুন করতে যায়। তখন তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। দৌড়াদৌড়িও করে। বিছানার ওপর দুই জনের পায়ের ছাপ ছিল। পরে রান্না ঘর থেকে হ্যামার এনে আব্বুর মাথায় আঘাত করে। আব্বু চিৎকার করে। তখন নাসির বলে, চিৎকার করলে খুন করে ফেলবো। আব্বু ব্যথায় ও জীবন বাঁচাতে চিৎকার করে। আব্বুর মাথায় ৫টি আঘাত করে। পরে আব্বু মারা যায়।

নূরজাহান বলেন, বাবা দিবসে সবাই সবার আব্বুর সাথে কথা বলবে। অথচ যে মানুষটা আমাকে সবচেয়ে বেশি আদর করতো সেই মানুষটা আমার কাছে নেই। আব্বু বলে ডাকতে পারি না। বাবা না থাকলে কেমন লাগে যার নাই সে বোঝে। যার বাবা নেই তার পৃথিবীতে কিছু নেই। পৃথিবীটা অন্ধকার মনে হয়। আব্বু অসুস্থ ছিলেন না। সুস্থ একটা মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আমি এর বিচার চাই। সর্বোচ্চ সাজা চাই।

এদিকে বাবার খুনির বিচার চাইতে গিয়ে মায়ের সাথে সম্পর্ক খারাপ হয়েছে নূরজাহানের। তার মা চাচ্ছেন ছেলের মুক্তি। কিন্তু নূরজাহান চাচ্ছেন সাজা। এজন্য তাদের মাঝে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। নূরজাহান বলেন, বাবার সাথে আমি বেঈমানি করতে পারবো না। বাবার খুনির ফাঁসি চাই।

এ মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক মোস্তফা খায়রুল বাশার বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। এখনো ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। রিপোর্ট পেলে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করবো।

খুনের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, পারিবারিক ঝামেলা এবং অর্থ-সম্পদের দ্বন্দ্ব নিয়ে মূলত এ খুনের ঘটনা ঘটেছে।

জানা যায়, শেখ সেলিম সপরিবারে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বি-ব্লকের একটি ভবনের দোতলায় থাকতেন। ২০২২ সালের ১৬ মার্চ সকালে ওই বাসায় কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে হাতুড়ি দিয়ে শেখ সেলিমের মাথায় আঘাত করে ছেলে নাসির। এতে শেখ সেলিম ঘটনাস্থলেই মারা যান। দুপুর ২টার দিকে নাসির ভাটারা থানায় এসে আত্মসমর্পণ করে নিজের বাবাকে খুন করার কথা জানায়। পরে ভাটারা থানা পুলিশ ওই বাসা থেকে শেখ সেলিমের লাশ উদ্ধার করে।

/এসবি/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়