ঢাকা     রোববার   ০৫ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২২ ১৪৩১

খাদ্য ঘাটতি পূরণে চাল রফতানি বন্ধ হতে পারে

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১৩, ৮ অক্টোবর ২০২৩  
খাদ্য ঘাটতি পূরণে চাল রফতানি বন্ধ হতে পারে

ফাইল ছবি

দেশে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চাল উৎপাদন করা যাচ্ছে না। ফলে চাহিদার তুলনায় চালের উৎপাদনের ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। এই ঘাটতি পূরণে আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হলেও নানা কারণে সেটাও করা যাচ্ছে না। চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে চালের ঘাটতি মেটাতে ৫ লাখ মেট্রিক চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো চাল আমদানি করা যায়নি। এ অবস্থায় সব ধরনের চাল রপ্তানি বন্ধ হতে পারে।

সূত্র জানায়, আজ রোববার (৮ অক্টোবর) অনুষ্ঠেয় খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভায় চাল রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্তটি নেওয়া হতে পারে। এছাড়াও সভায় দেশের খাদ্য মজুত পরিস্থিতি আলোচনা করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সূত্র জানায়, সভায় প্রতি কেজি ধান-চালের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করা হবে। গত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত তিন ক্যাটাগরির (আউশ, আমন, বোরো) চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। চাল উৎপাদনের মোট লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ কোটি ১৫ লাখ ৬৯ হাজার মেট্রিক টন। এর বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ৩ কোটি ৯০ লাখ ৯৫ হাজার মেট্রিক টন। এর আগের অর্থবছরে (২০২১-২০২২) উৎপাদন হয়েছিল ৩ কোটি ৮১ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন। তবে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও চলতি অর্থবছরে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ৪ কোটি ৩৩ লাখ ১৩ হাজার মেট্রিক টন।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে (গত ৪ অক্টোবর পর্যন্ত) সরকারি পর্যায়ে চালের মজুতের পরিমাণ হচ্ছে ১৬ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন। চালের চাহিদা মেটাতে চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৫ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে এখন পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে কোনো চাল আমদানি করা হয়নি এবং চলতি অর্থবছরসহ গত তিন অর্থবছরে চালের কোনো আন্তর্জাতিক সাহায্য পাওয়া যায়নি।

জানা গেছে, চালের চাহিদা পূরণে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আসন্ন আমন মৌসুমে ৩ লাখ মেট্রিক টন ধান, ৫ লাখ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল ও ১ লাখ মেট্রিক টন আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী ১৯ নভেম্বর থেকে আগামী বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এগুলো সংগ্রহ করা হবে। এর আগে গত বোরো মৌসুমে ধান-চাল মিলিয়ে মোট ১৫ লাখ ৭৪ হাজার মেট্রিক টন বোরো চাল সংগ্রহ করা হয়েছে।

অন্যদিকে চলতি অর্থবছরে দেশে গম উৎপাদনের সরকারি লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ১২ লাখ ১৪ হাজার মেট্রিক টন। গত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে গম উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১১ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন এবং ২০২১-২০২২ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ৮৬ হাজার মেট্রিক টন।

জানা গেছে, বর্তমানে (গত ৪ অক্টোবর পর্যন্ত) সরকারি পর্যায়ে গমের মজুতের পরিমাণ হচ্ছে ১ লাখ ৫৩ হাজার মেট্রিক টন। দেশে গমের চাহিদা পূরণে ইতোমধ্যেই সরকারি উদ্যোগে ৪৬ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানি করা হয়েছে এবং আরও ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া ৪ লাখ মেট্রিক টন গম আমদানির চুক্তি করা হয়েছে। অন্যদিকে বেসরকারি খাতে ইতোমধ্যে ১২ লাখ ৩৯ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানি করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, সরকারি হিসাবে চার বছরের ব্যবধানে দেশে খুচরা পর্যায়ে মোটা চালের দাম প্রতি কেজিতে ১৮ টাকা ২৪ পয়সা বেড়েছে, গম প্রতি কেজিতে ১৭ টাকা ৫৮ পয়সা এবং প্রতি কেজি খোলা আটার দাম ২০ টাকা ৭৪ পয়সা বেড়েছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে চাল ও গমের দামও সভায় তুলে ধরা হবে। গত চার বছরের ব্যবধানে চালের দাম অনেক বেড়েছে। তুলনামূলকভাবে গমের দাম কিছুটা কম বেড়েছে।

এদিকে গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে চালের দাম আরও বেড়েছে, অন্যদিকে গমের দাম কমেছে।

সূত্র জানায়, অভ্যন্তরীণ চালের বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে দেশ থেকে সুগন্ধী চালসহ সকল প্রকার চাল রফতানি বন্ধের সুপারিশ করা করা হবে সভায়। এ বিষয়ে সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। গত বছর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডকে ৩ হাজার মেট্রিক টন সুগন্ধি চাল রফতানির অনুমতি দেওয়া হলে অভ্যন্তরীণ চালের বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে দেশ থেকে সুগন্ধী চালসহ সকল প্রকার চাল রপ্তানি বন্ধ রাখার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়-কে চিঠি দিয়েছিল খাদ্য মন্ত্রণালয়।

সূত্র জানায়, দেশে উৎপাদিত সুগন্ধী চালের প্রায় ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশই রফতানি করা হয়ে থাকে। গত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে দেশে সুগন্ধী চাল উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ৭৯ হাজার মোট্রিক টন। তবে আলোচ্য অর্থবছরে কোন সুগন্ধী চাল রফতানি করা হয়নি। এর আগের অর্থবছরে সুগন্ধী চাল উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ২৬ হাজার মেট্রিক টন। এর বিপরীতে রফতানি করা হয়েছে ৬ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন।

/হাসনাত/এসবি/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়