ঢাকা     শুক্রবার   ০৩ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২০ ১৪৩১

সাকিবকে ধন্যবাদ জানিয়ে সামনে চলার সময় এখন

এম এম কায়সার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৫৮, ৮ মার্চ ২০২২   আপডেট: ১৬:৩০, ৮ মার্চ ২০২২
সাকিবকে ধন্যবাদ জানিয়ে সামনে চলার সময় এখন

সাকিব আল হাসান। ছবি: ইন্টারনেট

সাকিব আল হাসান বলেছেন, ‘আমি এখন শারীরিক ও মানসিক যে অবস্থায় আছি তাতে মনে হয় না এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা সম্ভব। এমন মানসিকতায় দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ খেলা ঠিক হবে না।’

নাজমুল হাসান পাপনের জবাব- ‘সাকিব যদি শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকে তাহলে তো আইপিএলের জন্য খেলতে যাওয়ার কথা না। কিন্তু সে তো আবেদন করেছে। তাহলে কি আইপিএলে সুযোগ পেলেও এরকম বলতো, খেলবো না?’

সাকিবের বলা এবং নাজমুলের জবাব এই দুইয়ের মধ্যে সম্প্রীতির লক্ষণের কোনো ছিটেফোঁটাও নেই। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে খেলছেন নাকি ব্রেক নিচ্ছেন; চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে সাকিব দুদিন সময় পেয়েছেন। সময়টা বিসিবি দিয়েছে।  এই দুদিন বিসিবিও নিজের চূড়ান্ত চিন্তা জানাবে।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সিরিজ থেকে কোনো ক্রিকেটারের ব্রেক নেওয়া নতুন কিছু নয়। তবে সাকিব সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় দল থেকে ছুটি বা ব্রেক নেওয়ার টাইমিংয়ের যে উদাহরণ তৈরি করেছেন সেটা অবশ্যই নতুন।

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে দল রওনা দেওয়ার দিন কয়েক আগে তিনি ব্রেক চাওয়ার যে নজির দেখিয়েছেন সেটা আরও নজিরবিহীন।

তিনি যে এই সিরিজে খেলবেন সেটা তার কাছ থেকে আগেভাগে একটা অনুমতি প্রার্থনার মতো করে সম্মতি আদায় করে বিসিবি। তার অনুমতি পাওয়ার পর বিসিবি তাকে দলে রেখেই দল ঘোষণা করে। আর সেই দল ঘোষণার দিন কয়েক পর তিনি বলছেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার মতো শারীরিক এবং মানসিক অবস্থা নেই তার। তাও সেটা কোথায় বললেন? কার কাছে বললেন? বিজ্ঞাপনের শুটিংয়ে দুবাইয়ের প্লেন ধরতে বিমান বন্দরের চৌকাঠে দাঁড়িয়ে, সাংবাদিকদের কাছে।

চুক্তিবদ্ধ একজন কর্মী তার প্রতিষ্ঠান থেকে ছুটি নিতেই পারেন। সেটা তার অধিকার। কিন্তু সেই ছুটির বিষয় তো তাকে একটু আগেভাগে জানাতে হবে। যাতে অন্তত তার কাজের জায়গায় কাউকে সেট করা যায়, শূন‌্যতা তৈরি না হয়। কিন্তু সাকিব জাতীয় দলের খেলা থেকে সাম্প্রতিক সময় ব্রেক নেওয়ার জন্য যেভাবে এবং যে কায়দায় ‘ব্রেক’ চেয়েছেন তাতেই বিসিবির সঙ্গে তার সম্প্রীতির ‘ব্রেক ফেইল’!

আইসিসির নিষেধাজ্ঞা থেকে ফিরে আসার পর সাকিব বাংলাদেশের হয়ে যত না ম্যাচ খেলেছেন তার বেশি ম্যাচ মিস করেছেন। গত বছর বাংলাদেশ সাতটি টেস্ট ম্যাচ খেলছে। সাকিব খেলছেন তিনটা। চারটি মিস করছেন। আইপিএলে থাকলে খেলেন না। আইপিএলে দল না পেলেও খেলেন না। প্রতিটি সিরিজের আগে এসে কেন বিসিবিকে সাকিব খেলছেন কি খেলছেন না সেই চর্চায় দিন কাটাতে হবে?

জাতীয় দলকে ঘিরে বিসিবি ৬/৭ জন কোচের পেছনে বিপুল অর্থ ঢালছে। এসব কোচদের মূলত কাজ কি? তাদের কাজ খেলা নিয়ে পরিকল্পনা করা। সারা বছরের খেলার পরিকল্পনা কষা। কিন্তু আপনি যদি নাই জানেন কাকে নিয়ে খেলছেন। তাহলে কি পরিকল্পনা করবেন? ব্যাপারটা দাঁড়াচ্ছে আপনার ভাণ্ডারে কি অস্ত্র আছে, সেটা না জেনে আপনি যুদ্ধের বাঁশি বাজিয়ে দিচ্ছেন। মূলত এসব কারণে মাঠে নামা বাংলাদেশকে কঠিন বা সহজ সব ধরনের প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অসহায় দেখাচ্ছে। আপনি যুদ্ধে নামার জন্য সবচেয়ে দক্ষ বৈমানিকের কাছ থেকে তার সেরা পারফরমেন্স আশা করছেন।  নির্দেশনাও দিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু সেই বৈমানিক যুদ্ধ শুরুর আগেভাগে এসে বললেন, আমার মন খারাপ, যুদ্ধে যাবো না। মন ভালো করতে সি-বিচে ঘুরবো!

ক্রিকেট দলীয় খেলা। এখানে আপনি এককভাবে কাউকে অগ্রাধিকার দিলে কখনোই দলীয় শৃঙ্খলা টিকিয়ে রাখতে পারবেন না। তা সে তিনি যত বড়ই পারফর্মার হোন না কেন, তাকে আলাদাভাবে তোয়াজ করলে সেটা পুরো দলের জন্য ভুল বার্তা যায়। দুঃখজনক বিষয় হলো বিসিবি লম্বা সময়জুড়ে এমন তেল তোয়াজ করেছে, ব্যক্তিত্ব বিসর্জন দিয়ে। ও অপরিহার্য। ওর বিকল্প নেই। অমুক না থাকলে আমরা কিভাবে জিতবো? অপরিহার্যতার এই সংজ্ঞা গায়ে জড়িয়ে কেউ কেউ বাড়তি সুযোগ নিতে শুরু করেন।  ব্যাপারটা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে স্বয়ং বোর্ড সভাপতিও অসহায়ত্ব নিয়ে অপেক্ষায় থাকেন, ‘ওই অপরিহার্য কি এই সিরিজে খেলবে?’

তবে বাস্তবতা হলো পৃথিবীর কেউ কোনকিছুতে অপরিহার্য নয়। বিশ্বাস না হলে আপনি কবরস্থানের সামনে একচক্কর ঘুরে আসতে পারেন; ওখানে যারা শুয়ে আছেন তাদের অনেকেই একসময় অপরিহার্য ছিলেন। তারা আজ নেই। কিন্তু পৃথিবী ঠিকই ঘুরছে নিজস্ব নিয়মে।

ক্রিকেট বোর্ডের উচিত একটা বিষয় সবার সামনে পরিষ্কার করা- কেউ দলের চেয়ে বড় কিছু নয়। ড্রেসিংরুমে সবার চেয়ারের মাপ সমান হবে। কারো চেয়ারে আলাদা করে সাদা তোয়ালে জুড়ে দেওয়ার কিছু নেই।

সাকিব তার খেলা এবং না খেলা নিয়ে যে উদাহরণ তৈরি করছেন সেটা কোন মতেই সুশৃঙ্খল কোনো সমাধান নয়। বরং বাজে উদাহরণ তৈরি হচ্ছে। টেস্ট ক্রিকেট থেকে সাকিব যেহেতু বারবার ব্রেক চাইছেন তাহলে বিসিবির উচিত এই বিষয়ে একটা কংক্রিট সিদ্ধান্তে আসা।

সাকিবকে নিয়ে বাংলাদেশ অনেক ম্যাচ জিতেছে।  আবার অনেক ম্যাচ হেরেছেও। আবার এমন উদাহরণও আছে, সাকিবকে ছাড়াই বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটে তাদের সবচেয়ে সেরা জয় পেয়েছে। সময় এসেছে সাকিবকে ছাড়াও যে বাংলাদেশকে সামনের সময় খেলতে হবে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার। তাতে সাকিবের ‘ব্রেক বিষয়ক’ সমস্যার সমাধান হবে। বিসিবিও বাঁচে!

লেখক: ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, রাইজিংবিডি ও ক্রিকেট বিশ্লেষক

/কেআই/এসবি/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়