ঢাকা     মঙ্গলবার   ০৭ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৪ ১৪৩১

সিটি নির্বাচনে অংশ নিতে বিএনপি নেতাদের ‘গোপন লবিং’

মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:২২, ৫ এপ্রিল ২০২৩  
সিটি নির্বাচনে অংশ নিতে বিএনপি নেতাদের ‘গোপন লবিং’

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম বাদ দিয়ে ব্যালটে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। অপরদিকে, ইভিএম-এ সিটি নির্বাচন করার কথা বলেছে তারা। যদিও জাতীয় নির্বাচনে ব্যালট কিংবা ইভিএম কোনোটিতেই আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না বিএনপি। বিএনপির পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনও নির্বাচনে অংশ নেবে না তারা। তবুও আসন্ন ৫ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র হিসেবে দলটির ১০-১২ জন প্রার্থী অংশ নিতে বিভিন্নভাবে ‘লবিং’ করে যাচ্ছেন।

এখন পর্যন্ত বিএনপির সিদ্ধান্ত, আগে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এজন্য ১০ দফা যুগপৎ আন্দোলন চলমান রয়েছে। দলের সিদ্ধান্ত ছাড়া বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তৃণমূলের কেউ অংশ নিলে তার বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও দলের তরফ থেকে জানানো হয়েছে।

এদিকে, দেশের ৫ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিন নির্ধারণ করেছে ইসি। ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশন, রাজশাহী ও সিলেট ২১ জুন, খুলনা ও বরিশালে ১২ জুন ইভিএম-এর মাধ্যমে ভোট গ্রহণ হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তাদের ঘোষণার প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। নীতিনির্ধারণী একাধিক সূত্র বলছে, বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এমন অনেকেই সিটি নির্বাচনে অংশ নিতে চাইছেন। যদিও দলের পক্ষ থেকে সবাইকে এ ব্যাপারে বার বার সতর্ক করা হয়েছে। ইতোপূর্বে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারাই নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, দল তাদের বহিষ্কার করেছে।

বিএনপির বিভিন্ন মাধ্যমে কথা বলে জানা গেছে, দলীয়ভাবে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিতে না চাইলেও দলের অনেক নেতা নির্বাচনে অংশ নিতে চাচ্ছেন। এ ব্যাপারে হাইকমান্ডের সঙ্গে ব্যক্তিগত এবং বিভিন্ন মাধ্যমে অনেকে যোগাযোগ করছেন। যদিও এর মধ্যে কাউকেই দলের বা ব্যক্তিগতভাবে কোনও আশ্বাস দেওয়া হয়নি। তারপরও সরাসরি বিএনপি রাজনীতি করেন বা বিএনপি ঘরানার অনেকে আসন্ন সিটি করপোরেশন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। 

নির্বাচনের কমিশনের প্রতি আস্থাহীনতার কারণে কমিশন দুই বার সংলাপে বসার চিঠি দিলেও তাতে সাড়া দেয়নি বিএনপি। উপরন্তু বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনসহ ১০ দফা দাবিতে অটল থেকে রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপিসহ সমমনা দল ও জোটগুলো। তারা বলছেন, দলীয় কোনও সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। বিএনপির লক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফয়সালা করা।

বিএনপি নেতারা বলছেন, নির্দলীয় সরকারের সমাধান হলে নির্বাচনের প্রতি দেশের মানুষের আস্থা সৃষ্টি হবে। জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। এর আগে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ নির্বাচনে অংশ নিলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনকি, স্থায়ীভাবে বহিষ্কার পর্যন্ত করা হতে পারে। দলের এই কঠোর অবস্থানের পরও বিএনপি তৃণমূলের একটা অংশ সিটি নির্বাচনে অংশ নিতে চাচ্ছে। যদিও সিটি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল বিএনপির হাইকমান্ড। ইতোমধ্যে দলের হাইকমান্ড থেকে দেশের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সেরকম বার্তাও দেওয়া হয়েছে।
 
সোমবার রাজধানীর এক ইফতার পার্টিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে, সেটা ইভিএম না ব্যালট; তা নিয়ে বিএনপির কোনও আগ্রহ নেই। বিএনপি আন্দোলন করছে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে। আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় আগ্রহী। সরকার দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে নষ্ট করে দিয়েছে। তাই, নির্বাচনের আগে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন দিতে হবে।
 
বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেছেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরাসরি বিএনপি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত অনেকে নির্বাচন করতে চাচ্ছেন। জানি, নির্বাচন করলে তারা জিতবেনও। কিন্তু যেহেতু দলের নির্দেশ হচ্ছে নির্বাচনে না যাওয়া- তাই আগ্রহীদের অনুরোধ করবো, দলের নির্দেশ অমান্য করে কেউ নির্বাচনে যাবেন না। এছাড়াও যারা বর্তমানে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত কিন্তু কোনও পদে নেই, তাদেরও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ না নিতে মেসেজ দেওয়া হয়েছে। এরপরেও কেউ নির্বাচনে অংশ নিলে সেটার দায়দায়িত্ব তাকেই নিতে হবে।

বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আসন্ন ৫ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র হিসেবে ১০ থেকে ১২ জন প্রার্থী অংশ নেওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে লবিং করে যাচ্ছেন। এছাড়াও দেশজুড়ে অন্তত দুই শতাধিক বিএনপি নেতা কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করার জন্য লবিং করছেন। এখন পর্যন্ত দলের কঠোর অবস্থানের কারণে এদের কেউই প্রকাশ্যে নির্বাচনের মাঠে নামতে সাহস পাচ্ছেন না বলে জানা গেছে।

সিটি নির্বাচন এবং এতে বিএনপির অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, সিটি নির্বাচন এই মুহূর্তে জনগণের কাছে গুরুত্বহীন। সবাই জানে নির্বাচন কীভাবে হয়। শুধু জাতীয় নির্বাচন নয়, স্থানীয় সরকার নির্বাচনও সুষ্ঠু, অবাধ বা নিরপেক্ষ হচ্ছে না। দলীয় সরকারের অধীনে কোনও ভোট সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য হয়নি তা দেশবাসীর সামনে বার বার প্রমাণিত হয়েছে। জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপি আন্দোলন করছে। রাজপথে লড়াই, সংগ্রাম করছে, মামলা খাচ্ছে, জেল খাটছে। আসন্ন সিটি নির্বাচন নিয়ে বিএনপির কোনও আগ্রহ নেই। নির্বাচনে দলীয় বা স্বতন্ত্র যেকোনও ফর্মেটে বিএনপির কেউ যাতে অংশ না নেন- সেটা দলীয়ভাবে বলে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন বিষয়ে বিএনপির স্পষ্ট বক্তব্য- আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে, সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।

ঢাকা/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ