ঢাকা     রোববার   ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৫ ১৪৩১

কথা বলছেন মোশাররফ রুবেল, দেখবেন বাংলাদেশের খেলা

ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৩০, ২৩ মার্চ ২০২২   আপডেট: ১৮:১০, ২৪ মার্চ ২০২২

হাসপাতালের কেবিনে ঢুকতেই নড়েচড়ে উঠলেন ক্রিকেটার মোশাররফ হোসেন রুবেল। অপলক চোখে তাকিয়ে পাশে দাঁড়ানো স্ত্রী ফারহানা চৈতি রুপাকে কী যেন বলছেন। পরিচয় করিয়ে দিলে মাথা ঝাঁকিয়ে অস্ফুট স্বরে তিনি বলতে চাইলেন, চিনতে পেরেছেন। স্ত্রীর প্রশ্নে রুবেল উত্তরও দিয়েছেন ‘ভালো আছি’।

বুধবার (২৩ মার্চ) দুপুরের দিকের ঘটনা এটি। আইসিইউ থেকে রুবেল কেবিনে ফিরেছেন মঙ্গলবার। স্ত্রী যখন তার পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন, তিনি তাকিয়ে আছেন কেবিনে অন করা টিভির দিকে। বিকেলে শুরু হতে যাওয়া বাংলাদেশের খেলা দেখবেন কি না জিজ্ঞেস করলে রুবেল বললেন, ‘দেখব’।

স্বস্তির বিষয় হলো, রুবেলের জ্ঞান ফিরেছে। কথা বলছেন, সবাইকে চিনতে পারছেন, মাঝে হাসছেনও। কিন্তু খাবার খেতে না পারায় শরীরের দুর্বলতা কমেনি। রুবেলের জীবন যুদ্ধে সার্বক্ষণিক সঙ্গী তার স্ত্রী চৈতি। স্বামীর সেবা করার পাশাপাশি কেবিনে বসেই অফিসের কাজ করছেন ল্যাপটপে। রুবেলের অবস্থা কিছুটা উন্নতিতে স্বস্তির পরশ দেখা যায় তার চেহারায়। তিনি জানিয়েছেন, কেবিনে রেখে দিন কয়েক পর্যবেক্ষণ করবে চিকিৎসক। এরপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

চৈতি বলেন, ‘এখন সে সবকিছু বুঝতে পারে। কিছু জিজ্ঞেস করলে উত্তর দেয়। সবাইকে চিনতে পারে। তবে এখনো হাসপাতালে আছি, যাতে অবস্থা আরো একটু উন্নতি হয়। কয়েকদিন পর আশা করি চলে যেতে পারব।’

কদিন আগেই হুইলচেয়ারে বসা রুবেলের ছবিটা দেখে হতভম্ভ সবাই। অপলক দৃষ্টিতে রুবেলের নিষ্পাপ চাহনি, মায়াবি হাসি, সারল্য অবয়ব যেন চোখ ভিজিয়ে দেয়। দুই দিন ধরে ফেসবুকের দেয়ালে ছবিটা ঘুরছে। যাদেরই নজরে আসছে তারাই আফসোসের সাগরে ডুবে যাচ্ছেন।

২০১৯ সালের মার্চে ব্রেন টিউমার ধরা পড়ে রুবেলের। সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ২০১৯ সালের ১৯ মার্চ নিউরো সার্জন এলভিন হংয়ের তত্ত্বাবধানে সফল অস্ত্রোপচার হয় তার। এরপর দেশে ফিরে আসেন। কিন্তু কেমো এবং রেডিও থেরাপির জন্য তাকে নিয়মিত সিঙ্গাপুর যাওয়া-আসার মধ্যে থাকতে হতো। ওই বছরের ডিসেম্বরে সবশেষ কেমো দেওয়া হয়। এক বছর ফলোআপে ছিলেন তিনি।

২০২০ সালে সুস্থ, স্বাভাবিক হয়ে মাঠে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু নভেম্বরে আবার অসুস্থ হন। ২০২১ সালের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে এমআরআই করার পর দেখা গেছে, পুরোনো টিউমারটি আবার নতুন করে বাড়ছে। তারপর থেকে আবার শুরু হয়েছে কেমোথেরাপি। সব মিলিয়ে ২৪টি কেমোথেরাপি নিয়েছেন।

ঘড়ির কাঁটা চলছে। প্রতিটি মুহূর্তেই জীবন থেকে একটি একটি করে সেকেন্ড হারিয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি মুহূর্তকে রাঙিয়ে জীবনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই সংগ্রাম। সেই সংগ্রামের গল্প মানুষ আর মনভেদে নানারকম। রুবেলের সংগ্রাম অন্য সবার চেয়ে আলাদা। তবুও তিনি হাল ছাড়েন না। হুইলচেয়ারে বসে একটি রাঙা ভোরের স্বপ্ন দেখেন। যেই ভোরে আলোকিত হবে তার পৃথিবী, তার ছোট্ট সুখের সংসার, তার সেই সবুজ মাঠ, এক জোড়া কেডস আর পছন্দের জার্সি গায়ে ২২ গজের পারফরম্যান্স।

হাসপাতালের কেবিনে জীবন যুদ্ধে লড়াই করা রুবেল দেখবেন বাংলাদেশের খেলা। নিশ্চয়ই তিনি জয়ই চাইবেন লাল সবুজের। তামিম ইকবালের দল কী পারবে জয় এনে দিয়ে রুবেলে মুখে এক চিলতে হাসি ফোটাতে? 

ঢাকা/রিয়াদ/ফাহিম

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়