ঢাকা     রোববার   ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৫ ১৪৩১

ধনঞ্জয়া-কামিন্দুর বীরত্বগাথায় উঁকি দিচ্ছে পরাজয়

ইয়াসিন হাসান, সিলেট থেকে: || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:১০, ২৪ মার্চ ২০২৪   আপডেট: ১৯:১২, ২৪ মার্চ ২০২৪
ধনঞ্জয়া-কামিন্দুর বীরত্বগাথায় উঁকি দিচ্ছে পরাজয়

সমুদ্র ঘেরা শহর গলের রিচমন্ড কলেজে নিশ্চয়ই আজ আনন্দের জোয়ার। লাল, আকাশী, নীল সংমিশ্রনে স্কুলের যে পতাকা তা নিশ্চয়ই উড়ছে অনেক গর্ব নিয়ে। হয়তো গাওয়া হয়েছে স্কুলের থিম সং। কোরাসে যেখানে রয়েছে এই লাইন, ‘রিচমন্ডের জন্য সব, নিজের জন্য কিছু নয়।’ স্কুলে নিত্যদিন গাওয়া এই কোরাস কতটা হৃদ্যতা তৈরি করেছে ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ও কামিন্দু মেন্ডিসের হৃদয়ে তা হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া গেল সিলেটের ২২ গজে। নিজেদের জন্য কিছু নয়, শ্রীলঙ্কার হয়ে করলেন সব।

শ্রীলঙ্কার স্কুল ক্রিকেটের সুখ্যাতির খবর অজানা তো নয় কারোর। তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ এই প্রতিযোগিতা থেকেই উঠে আসে কুমার সাঙ্গাকারা, মাহেলা জয়াবর্ধনের মতো ক্রিকেটার। রিচমন্ড কলেজ শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটকে উপহার দিয়েছে তেমন কিছুই। ধনাঞ্জয়া ও কামিন্দু একই স্কুলের ছাত্র। ধনঞ্জয়া সিনিয়র। কামিন্দু জুনিয়র। স্কুল জীবনে একসঙ্গে খেলা না হলেও দুজনের পথ মিলিয়ে দিয়েছে দেশের জার্সি।

সিলেটে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট দুজনের জন্যই ছিল বিরাট মঞ্চ। ধনঞ্জয়া অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর প্রথম দেশের বাইরে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কামিন্দু লম্বা সময় পর সুযোগ পেয়েছেন জাতীয় দলে। তারও দেশের বাইরে প্রথম টেস্ট। প্রথম ইনিংসে রিচমন্ড স্কুলের দুই উজ্জ্বল নক্ষত্র মেলে ধরেন নিজেদের সামর্থ্য। ৫৭ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর ২০২ রানের জুটি গড়ে কঠিন জবাব দেয় বাংলাদেশের বোলারদের। দুজনের ব্যাটেই সমান রান ১০২।

দ্বিতীয় ইনিংসে একই পারফরম্যান্সের পুনরাবৃত্তি। ১২৬ রানে ৬ উইকেট হারানো শ্রীলঙ্কা সপ্তম উইকেটে পেল ১৭৩ রানের জুটি। দুজনের ব্যাটে আবার সেঞ্চুরি। এবার ধনঞ্জয়া করলেন ১০৮, কামিন্দু ১৬৪। তাতে যা হবার তা-ই হয়েছে। রান চূঁড়ায় শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ, ৪১৮। প্রথম ইনিংসের ৯২ রানের লিডসহ তারা বাংলাদেশকে টার্গেট ছুঁড়ে দেয় ৫১১ রানের। টেস্ট ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড, ৪১৮ রানের। অর্থাৎ ম্যাচ জিততে নতুন ইতিহাস লিখতে হতো।

তৃতীয় দিনের খেলা শেষে বাংলাদেশ যে অবস্থানে দাঁড়িয়ে তাতে স্পষ্ট ম্যাচটার এপিটাফ লিখে দিয়েছেন ধনঞ্জয়া ও কামিন্দু। পড়ন্ত বিকেলে মাত্র ১৩ ওভারের খেলায় ৪৭ রান তুলতে ৫ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। ৪৬৪ রানে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশের পক্ষে এই ম্যাচ বাঁচানো প্রায় অসম্ভব। আরেকটি টেস্ট পরাজয় উঁকি দিচ্ছে। আরেকটি হতশ্রী পারফরম্যান্সে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। তবে এসব আড়াল হয়ে যাচ্ছে ধনঞ্জয়া ও কামিন্দুর বীরত্বগাঁথায়। যেখানে জড়িয়ে আছে অনেক গর্ব, ঘাম ঝরানো পরিশ্রম। তাতে লিখা হয়েছে ইতিহাসের পাতায় নতুন অধ্যায়।

সিলেট টেস্ট দুজন রাঙালেন জোড়া সেঞ্চুরিতে। টেস্ট ক্রিকেটে এ নিয়ে তৃতীয়বার দুই ব্যাটসম্যান দুই ইনিংসে জোড়া সেঞ্চুরি করলেন। ১৯৭৪ সালে চ্যাপেল ব্রাদার্স দুই ইনিংসে জোড়া সেঞ্চুরি করেছিলেন নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে। ঠিক ৪০ বছর পর ২০১৪ সালে পাকিস্তানের মিজবাহ উল হক ও আজহার আলী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই ইনিংসে জোড়া সেঞ্চুরি করেন। ধনঞ্জয়া ও কামিন্দু ইতিহাসের অক্ষয় কালিতে লিখে রাখলেন নিজেদের নাম। সঙ্গে বাংলাদেশকে হতাশায় ডুবিয়ে লিড নিয়ে গেছে পর্বতের চূঁড়ায়।

এই পর্বতের চূড়া পাড়ি দিতে বাংলাদেশের এগার ব্যাটসম্যানকে সাধ্যের বাইরে গিয়ে লড়াই করতে হতো, ধীর মনোভাবে ব্যাটিং করে ম্যাচ বাঁচাতে লড়তে হতো, অযুত নিযুত ঘামবিন্দু ঝরিয়ে টিকে থাকতে হতো। কিন্তু শুরুর ৫ ব্যাটসম্যান যে তাড়না দেখালেন তাতে স্পষ্ট বোঝা গেছে দলের মনোভাব। ম্যাচটা এখন শেষ হলেই হলো! লোকমুখে কথা চলে, বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নামলেই উইকেট বোলিং বান্ধব হয়ে যায়। আর বাংলাদেশের বোলিংয়ে উইকেট হয়ে যায় ব্যাটিং বান্ধব। সিলেটের ২২ গজে আজ এমন কিছুই মনে হলো।

মাহমুদুল হাসান জয়, নাজমুল হোসেন শান্ত, জাকির হাসান, শাহাদাত হোসেন ও লিটন দাশ যেভাবে উইকেট বিলিয়ে এলেন। এমন আহামরি বোলিং হয়নি যে টিকে থাকা কঠিন ছিল। এমন ভয়ংকর স্পেলও হয়নি যেখানে গা বাঁচানোর জন্য লড়তে হয়েছে। বরং নিজেদের ইচ্ছাতেই তারা আউট হয়েছে। ইচ্ছে শব্দটা কঠিন হয়ে গেলেও মানানসই। নয়তো অধিনায়ক শান্ত কেন অফস্টাম্পের এক হাত বাইরের বল জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলতে যাবেন। লিটন কেন প্রথম বলে ডাউন দ্য উইকেটে এসে ক্যাচ তুলবেন। জয় ও শাহাদাত বেরিয়ে যায় বলে খোঁচা দেবেন। জাকির হাসানও তাদের পথ একইভাবে অনুসরণ করবেন!

একই উইকেটে সারাদিন ধনঞ্জয়া ও কামিন্দুর ব্যাটিং দেখে শুধু হাতে তালি পড়েছে, সুন্দর শটের প্রশংসা বেরিয়েছে। নিজেদের চেনা উইকেটে কেন লিটন, শান্তদের এতো তাড়াহুড়ো, কেন তাড়নার অভাব সেই প্রশ্নের উত্তর দেবে কে? বোলিংয়ের সঙ্গে ব্যাটিং ব্যর্থতায় আরেকটি টেস্ট পরাজয় উঁকি দিচ্ছে। পরাজয়ের স্তুপ জমেছে অনেক আগে। এখন সেটা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে।

সিলেট/ইয়াসিন/বিজয়

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়