আড়িয়ল বিলে ধান কাটার উৎসব
শেখ মোহাম্মদ রতন, মুন্সীগঞ্জ || রাইজিংবিডি.কম
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার আড়িয়ল বিলে ধান কাটার শুরুর মধ্য দিয়ে কৃষক পরিবারে নবান্নের উৎসব শুরু হয়েছে। জমির ধান কাটতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে কৃষাণ-কিষাণীরা। তীব্র দাবদাহে শরীরের ঘাম ঝরলেও তাদের মুখে হাসি লেগে আছে। এবার দেশের বৃহত্তম আড়িয়ল বিলের ধান কাটতে অত্যাধুনিক কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও রিপার মেশিন যুক্ত হয়েছে। ফরিদপুর ও শরীয়তপুর থেকে শত শত শ্রমিকও যোগ দিয়েছে।
এ বছর আড়িয়ল বিলে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত জমিতে ধানের ফলন কম হয়েছে। প্রতি কানি জমিতে (১৪০ শতাংশ) গড়ে ৮০ মণ করে ধান পাওয়ার কথা বলছেন কৃষকরা। এ অঞ্চলের সিংহভাগ জমিতে ২৮ ও ২৯ জাতের ধান চাষ হয়েছে। উপজেলায় ১০ হাজার হেক্টরের অধিক জমিতে বিভিন্ন জাতের ধান চাষ করা হয়। এর মধ্যে বিলের শ্রীনগর অংশেই ৫ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম ধান চাষ করা হয়েছে।
শনিবার (২৭ এপ্রিল) সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শ্যামসিদ্ধি, গাদিঘাট, আরধীপাড়া, ষোলঘর, আলমপুর, লস্করপুর, বাড়ৈখালী, শ্রীধরপুর, মদনখালীসহ আড়িয়াল বিলের বিভিন্ন পয়েন্টে পাকা ধান কাটা হচ্ছে। প্রচণ্ড রোদ ও দাবদাহ উপেক্ষা করে হাজার হাজার কৃষি শ্রমিক জমিতে ধান কাটছে। এসব কাটা ধান খাল দিয়ে নৌকায় করে ও শ্রমিকরা মাথায় বহন করে ডাঙ্গায় নিয়ে আসছে। আড়িয়ল বিলে ভাড়ায় বেশ কয়েকটি হারভেস্টার মেশিন ধান কাটছে। আধুনিক যন্ত্রে ধান কাটা ও মাড়াই করা হচ্ছে।
আড়িয়ল বিলের ধান চাষি বারেক মিয়া জানান, এবার তিনি ৫ হেক্টর জমিতে ধান রোপন করেছেন। এখন পাকা ধান কেটে ঘরে বা আঙিনায় তোলার কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তিনি।
গাদিরঘাট গ্রামের ধান চাষি আব্দুল কাদের মিয়া জানান, কৃষক এখন পাকা ধান কেটে বাড়ির আঙিনায় নিতে ব্যস্ত। এক সপ্তাহ আগেও এ সকল কৃষক ঝড়-বৃষ্টি নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন। একই কথা জানালেন আড়িয়ল বিলের আলমপুরের কৃষক আলম চাঁন মুন্সী ও লস্কপুরের মহসিন ঢালী। তবে আড়িয়ল বিলে সাপের উপদ্রুব থাকায় চাষিরা ধান কাটতে গিয়ে ভয়ে আছে বলেও জানান আলম চাঁন মুন্সী।
স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয়ভাবে ভেজা ধান প্রতিমণ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা করে। শুকনা ধানের মণ প্রকারভেদে ১১০০-১২০০ টাকা। উপজেলার অন্য এলাকার বেশির ভাগ জমিতে ধান এখনও পরিপক্ক হয়নি। স্থানীয়রা জানান, জলাবদ্ধতা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় ধান আবাদে বিড়ম্বনার শিকার হয়েছে তারা।
আড়িয়ল বিলের শ্যামসিদ্ধি গ্রামের মো. আমান বেপারী বলেন, তিনি ৫ কানি জমিতে ২৮ ও ২৯ জাতের আবাদ করেছেন। তবে তার কয়েকটি জমিতে কিছু অংশে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ হয়। এতে ধানে চিটার পরিমাণ বেড়েছে। ভেজা ধান পাইকারের কাছে ৯০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করছেন। একজন কৃষি শ্রমিককে ৩ বেলা খাবারসহ দৈনিক মজুরি দিতে হচ্ছে ৮০০ টাকা। প্রতি গণ্ডা (৭ শতাংশ) জমিতে ধান পাওয়া যাচ্ছে ৪ মণের মতো।
শ্রীনগর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানা গেছে, উপজেলায় ১০ হাজার হেক্টরের কিছু বেশি জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে। এখন ধান কাটার মৌসুম। বর্তমানে কৃষকরা পাকা বোরো ধান কেটে ঘরে তুলতে কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। আড়িয়ল বিলের কিছু এলাকায় পানি আটকে থাকা এবং নিরিবিলি হওয়ায় সেখানে সাপের বিচরণ রয়েছে বলে কৃষকরা জানিয়েছে।
শ্রীনগর উপজেলা কৃষি অফিসার মোহসিনা জাহান তোরণ বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ কম ছিল। ২৮ জাতের ধানের জমিতে রোগের আক্রমণ বেশি হয়। ব্লাস্ট রোগ দমনে কৃষকদের জমিতে একযোগে ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হয়। উপজেলায় এবার ১০ হাজার ৪ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধান চাষ করা হয়েছে। এতে প্রদর্শনীর ক্ষেত রয়েছে ৩০টি। উৎপাদিত ধান থেকে ৪০ হাজার মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত জানান, ধান কাটা শুরু হওয়ায় আড়িয়ল বিলে এখন কৃষকদের মনে আনন্দ বিরাজ করছে। ধান কাটার অত্যাধুনিক কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও রিপার যন্ত্রের পাশাপাশি ফরিদপুর ও শরীয়তপুর থেকে হাজারেরও বেশি শ্রমিক এসেছে। বিভিন্ন জেলা থেকে আরও শ্রমিক ধান কাটার জন্য আসছে।
/বকুল/