ঢাকা     সোমবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৮ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

পাহাড়ে মেঘের সঙ্গে রোদের লুকোচুরি 

ফয়সাল আহমেদ  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩৪, ১১ আগস্ট ২০২৩  
পাহাড়ে মেঘের সঙ্গে রোদের লুকোচুরি 

নীলাচলের পথে মিলনছড়ি থেকে একটু দূরে পড়ে শৈলপ্রপাত। পাহাড়ি ঝরনা ঘিরে একটি পর্যটন কেন্দ্র। এখন ঝরনায় পানি কম, তারপরও লোকে লোকারণ্য, আজ পহেলা বৈশাখ বলে। ছড়িয়ে ছটিয়ে পাহাড়িরা আড্ডা দিচ্ছে। সঙ্গে চলছে দুচুয়ানি। আমরা এক চক্কর ঘুরে, ছবি টবি তুলে ফিরে আসি। এখানকার পাথর বেশ পিচ্ছিল। আমার ছোটখাটো একটা পতনও হয়ে গেলো। যাক, বড় ধরনের অধঃপতন হয়নি। না হলে পুরো ভ্রমণটাই মাটি হয়ে যেতো। 

নীলাচল একেবারে বান্দরবান শহরসংলগ্ন। এখানকার পাহাড়ি পথ এখনো পিচ ঢালা হয়নি। এই পথটা এতোটাই খাড়া যে ফোর হুইল জিপ উঠতেও আপত্তি জানায়। বেশ কয়েকবার গোঙাতে গোঙাতে পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছায়। এখানে একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার করা হয়েছে। একটি রেস্তোরাঁও নাকি চালু হবে। এখান থেকে বান্দরবান শহরের প্রায় সব স্থাপনা জাদি স্বর্ণমন্দির, শহরের কয়েকটি মন্দির, স্টেডিয়াম, পাহাড়ি গ্রাম সব ছবির মতো দেখা যায়। পাহাড়িরা অনেকেই এখনো এর আদিনাম ‘টাইগার হিল’ বলতেই পছন্দ করেন। পাহাড়ঘেরা পুরো বান্দরবান শহর এক নজরে দেখতে সবাই ব্যস্ত। সবাই দেখছিলাম আমরা যে হোটেলে ছিলাম সেই রয়েল হোটেলের ভবনটিকে। ওই তো আমাদের হোটেল! রেড অক্সাইড অর্থাৎ লাল রঙের ভবন। সবাই দেখছিল কিন্তু আমাদের এক বন্ধু কোনোভাবেই লাল রঙের দালানটি খুঁজে পাচ্ছিল না।  সে আমাদের বর্ণনায় দালানটি দেখছিল ঠিকই, কিন্তু সেটা লাল রঙের নয়। সবুজ রঙ। সে বারবার বলছিল, কোথায় আমি তো লাল রঙের কোনো ভবন দেখতে পাচ্ছি না। 

পরে আমরা বুঝতে পারি আমাদের বন্ধু কালার ব্লাইন্ড। তখন অবশ্য তাকে বলিনি। এখন বলছি, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও আংশিক বর্ণান্ধ ছিলেন। কালার ব্লাইন্ড। রবীন্দ্রনাথেরও মূল অসুবিধা ছিল লাল রঙ নিয়ে। লাল রঙ খুব ভালো করে দেখতে পেতেন না আমাদের বিশ্বকবি। রবীন্দ্রনাথ লাল এবং সবুজকে অনেক সময়ই আলাদা করতে পারতেন না। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বিশেষ এই অবস্থাকে বলে ‘প্রোটানোপ’। রবীন্দ্রনাথ প্রোটানোপিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন। এটি বংশগত রোগ। তবে দুঃশ্চিন্তা করে লাভ নেই, এই রোগ কোনো শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করে না। রোগটির কোনো চিকিৎসাও নেই। সমস্যা একটাই লাল রঙ দেখতে না পাওয়া। লাল সবুজ হয়ে যায়। 
খুব বেশি সময় নষ্ট না করে আমরা রওয়ানা হয়ে যাই প্রান্তিক লেকের উদ্দেশ্যে। এটি তার নামের সার্থকতা প্রমাণ করে, একেবারে এক প্রান্তে নীরবে অবস্থান করছে। আমরা নীলাচল থেকে বিকল্প সড়ক ধরে একটি তঙ্গচঙ্গা গ্রামের ভেতর দিয়ে মেঘলা অতিক্রম বেশ খানিকটা ভেতরে প্রান্তিক লেকে পৌঁছাই। এটি আবার সেনাবাহিনীর ফায়ারিং রেঞ্জ অতিক্রম করে যেতে হয়। কে যেনো রসিকতা করে বলে, সবাই সাবধানে আসুন, ভ্রমণ করতে এসে না আবার সত্যিকারের ‘ক্রস ফায়ারে’ পড়ে যান!  

অবশেষে প্রান্তিক লেকের দেখা মেলে। অনন্য সুন্দর একটি লেক। স্বচ্ছ পানির বেশ বড় একটি আধার। চারিদিকে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়। সুনসান নীরবতায় যার অবস্থান, এমন স্থানে এক রাত থাকলে বহুদিন মনে থাকার মতো অভিজ্ঞতা হতো। অবশ্য সেরকম কোনো আয়োজন নেই এখানে। একটি ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে এখানে। আমরা এর ওপরে উঠে কিছুক্ষণ অবস্থান করে নেমে আসি। মধ্যাহ্ন পেরিয়ে গেছে সেই কখন। সকলে ভীষণ ক্ষুধার্ত। আর কিছুক্ষণ পর প্রকৃতি যতোই মনোমুগ্ধকর হোক আর ভালো নাও লাগতে পারে। প্রকৃতি সব কিছু একটা সিস্টেম বা শৃঙ্খলার মধ্যে ফেলে রেখেছে। খুব বেশি এদিক সেদিক করা যায় না। যদিও মানবজাতি প্রতিনিয়তই এই শৃঙ্খলা ভেঙে চলেছে। আপাতত আমরা দ্রুত শহরের দিকে যেতে চাই। অবশ্য পথিমধ্যে মেঘলা না দেখে গেলে ভ্রমণটা যে অসম্পূর্ণ থেকে যায়। আমরা রওয়ানা হয়ে গেলাম মেঘলার উদ্দেশ্যে। 

মেঘলার পথে বেশ খানিকটা এগিয়েছি। হঠাৎ আমিনুল ব্রেক কষে গাড়ি থামায়। এরপর ব্যাক গিয়ারে বেশ খানিকটা দূরে নিয়ে যায় গাড়ি, একটি জটলার কাছে। কী ব্যাপার? আমরা নেমে এসে দূরে একটি খালি স্কুটার দেখতে পাই। রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে বেশ কয়েকটি কমবয়সী ছেলে। একটি মেয়েকে ঘিরে এই জটলা। মেয়েটি কাঁদছিল। ছেলেগুলোর কাছ থেকে ঘটনার সারবস্তু শুনলাম। মেয়েটি নাকি ঐ স্কুটারে করে তার পরিচিত কারো কাছে যাচ্ছিল। হঠাৎ স্কুটার চালক এই জনমানবহীন স্থানে স্কুটার বন্ধ করে মেয়েটিকে জঙ্গলের ভেতর টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যেতে শুরু করে। তখন এই ছেলেগুলো অন্য একটি স্কুটারে করে যাচ্ছিল এই দিকে। মেয়েটির চিৎকারে তারা জঙ্গলের ভেতর গিয়ে ড্রাইভারকে ধরে ফেলে এবং তাকে ব্যাপক উত্তম মধ্যম দিয়ে ছেড়ে দেয়। এখন মেয়েটিকে শহরে অথবা সে যেখানে যেতে চায় সেখানে পৌঁছে দিবে এ নিয়ে তারা কথা বলছিল। 

আমরা বলি, আমাদের সঙ্গে যেতে চাইলে আমরা মেয়েটিকে শহরে পৌঁছে দিতে পারি। মেয়েটি প্রথমে রাজী হয়। গাড়িতে উঠতে যাবে এমন সময় কী মনে করে সে আবার সেই ছেলেগুলোর কাছে চলে যায়। আমরা আর সময় ক্ষেপণ না করে যাত্রা করি মেঘলার দিকে। পথিমধ্যে একটি চেকপোস্টে সমস্ত ব্যাপার জানাই নিরাপত্তা রক্ষীদের। এই সময় ঐ ছেলেগুলোর স্কুটারও চলে আসে। কিন্তু মেয়েটি নেই ওদের সঙ্গে।  কী ব্যাপার? ওরা জানায়, মেয়েটির পরিচিত আরো একটি দল চলে আসায় তারা ফিরে এসেছে। তাহলে রহস্যের কোনো কিনারা হলো? আমরা বিভিন্ন জন বিভিন্ন মন্তব্য করতে থাকি। ঘটনা কী হতে পারে? যে যার মতো বলছিল। যদিও সবই অনুমান নির্ভর। কেউ শার্লক হোমস, কেউ মাসুদ রানা, কেউ ফেলুদা, কেউ ব্যোমকেশ বক্সী, কেউ কিরিটি রায় হয়ে বিভিন্ন কোণ থেকে একেকজন যখন রহস্যের সমাধান দিচ্ছিল, তখন আমিনুল বলে, মেঘলা এসে গেছে, দ্রুত ঘুরে আসুন। তাই রহস্য রহস্যই থেকে গেলো। 

মেঘলা পর্যটন বিখ্যাত পাহাড়ের গা ঘেষে তৈরি করা হ্রদের জন্য। রয়েছে সুন্দর দুটি ঝুলন্ত সেতু। একটি সেতু দিয়ে পাহাড়ে চড়ে অপর সেতু দিয় সমাপ্তি টানা যায়। রয়েছে নৌকা ভ্রমণের ব্যবস্থা। আছে একটি মিনি চিড়িয়াখানা। কেউ আর গোটা মেঘলা ঘুরে দেখার ‘শক্তি’ দেখালো না। কীভাবেই-বা দেখাবে? পেটে যে তখনো তেমন কিছু পড়েনি। সুতরাং আমিনুলকে বলি, ভাই, আমাদের এমন একটি রেস্তোরাঁতে নিয়ে যাও যেখানে অর্ডার দেওয়ার সাথে সাথে খাবার এসে হাজির হবে। আমাদের পছন্দের হোটেল রী স্বং স্বং এ অর্ডার দেওয়ার পর বেশ খানিকক্ষণ সময় লাগে। কারণ তারা অর্ডার নিয়ে তবে খাবার তৈরি করে। আমিনুল বলে,  নিশ্চয়, ভালো একটি হোটেলে নিয়ে যাচ্ছি, গেলেই গরম গরম খাবার পাবেন। 

আমিনুল শহরের কেন্দ্রস্থলে জামান হোটেলে নিয়ে যায়। এটি দোতলায় অবস্থিত একটি রেস্তোঁরা। এখান থেকে আমিনুলের ভাড়া মিটিয়ে দিই। অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে তাকে বিদায় জানাই। খুবই ভালো ড্রাইভ করেছে সে। সেই সাথে সে ভালো গাইডেরও কাজ করেছে। ভবিষ্যতে বান্দরবান আসলে আমিনুলকে খোঁজ করতেই হবে। 
আজ রাতের বাসে রিটন চলে যাবে ঢাকায়। আমরা রেস্তোরাঁতেই খানিকক্ষণ আড্ডা দিয়ে চলে যাই সাঙ্গু নদীতে। সবার ইচ্ছে ছিল সাঙ্গুতে নৌ ভ্রমণের। তখন সন্ধ্যা। এই সময়ে কোনো মাঝি পেলাম না। সাঙ্গু এখন রবি ঠাকুরের ‘আমাদের ছোটো নদী চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটুজল থাকে’ অবস্থা। হাঁটুজলে নৌকা বাইবে কোন মাঝি? সন্ধ্যার পর হোটেলের কক্ষে চলে আসি। বন্ধু রিটন ঢাকা চলে যায়। আমরা সকলে মিলে তাকে বাসে তুলে দিয়ে আসি। 

রাতে চলে আবারো জম্পেশ আড্ডা। আগামীকালের কর্মসূচি বলতে মূলত মারমা জাতিসত্তার সবচেয়ে আকর্ষণীয় উৎসব ওয়াটার ফেস্টিভ্যাল দেখা। এ ছাড়া শহরের কয়েকটি মারমা পাড়া, বৌদ্ধ ক্যায়াং ইত্যাদি ঘুরে বেড়ানো যেতে পারে। লক্ষ্য করে দেখলাম হোটেলের রিসেপশন থেকে শুরু করে রুম সার্ভিস সব করছে কয়েকটি তরুণ মারমা ছেলে। প্রচলিত অর্থে কোনো ম্যানেজার নেই হোটেলে। কিন্তু এক ভদ্রলোক দেখি রিসেপশনের সামনে, সেখানে বোর্ডাররা বসেন, সেখানে বসে থাকেন। মাঝে মাঝে খুব আয়েশি ভঙ্গিতে ধূমপান করেন। আমরা তার সঙ্গে পরিচিত হই। তিনিই হোটেলের স্বত্ত্বাধিকারী। কথায় কথায় আড্ডা জমে উঠে তাঁর সঙ্গে। মারমা রাজপরিবারের সদস্য এই ভদ্রলোক। তিনি রয়েল হোটেলের শুরু ও বর্তমানের অনেক মজার মজার গল্প করেন। 

১৫ এপ্রিল সকাল। ওয়াটার ফেস্টিভ্যাল হবে বিকালে। সকালে বান্দরবানের সবচেয়ে বড়ো ক্যায়াং-এ গেলাম। এখানে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের খাবার ও টাকা পয়সা দান করা হয়। খাবারের বিশাল আয়োজন। সকলেই যার যার সাধ্যমতো খাবার ‘মানত’ হিসাবে উৎসর্গ করেছেন। আমরা ইচ্ছে করলে এখানে খেতে পারি। কিন্তু কারো ক্ষুধা না থাকায় প্রসাদ খাওয়া হলো না। ক্যায়াং থেকে ক্যায়াং। এরপর আমরা হাঁটতে হাঁটতে উজানী পাড়ার দিকে। পথিমধ্যে পড়ে আরেকটি চমৎকার ক্যায়াং। যেখানে ধ্যানী বুদ্ধের বিশাল পিতলের মূর্তি রয়েছে। এরপর উজানীপাড়া মারমাদের মূল বসতিতে আসি। এখানে কিছুক্ষণ থেকে চলে আসি হোটেলে। 

বিকেলে শুরু হয় বহুল আলোচিত ওয়াটার ফ্যাস্টিভ্যাল। সকাল থেকেই অবশ্য কিশোর-কিশোরীরা শহরজুড়ে বোতলে পানি ভরে একে অন্যকে, পথচারীকে, স্কুলগামী ছাত্রছাত্রী ভিজিয়ে দিচ্ছিলো। কেউ সহাস্যে মেনে নিচ্ছেন। কেউ কেউ রুষ্টও হচ্ছে। তবে সব মিলিয়ে মেনে নেওয়ার একটা প্রবণতা আছে। বাঙালি কতগুলো পিচ্চি ভীষণভাবে এই খেলায় মত্ত দেখতে পেলাম। বিকেলের উৎসব হচ্ছে পুরনো রাজবাড়ী মাঠে। রাজবাড়ী মাঠের চারিদিকে তো পানি দিয়ে একজন আরেকজনকে ভিজিয়ে দেওয়া মামুলী ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। আমরা কী করে যেনো রক্ষা পেয়ে গেলাম। মূল উৎসবে তরুণ ও তরুণীরা একটি বিশাল লম্বা সাইজের নৌকা থেকে পানি নিয়ে একে অন্যকে ভিজিয়ে দেবে। কিন্তু তরুণদের উপস্থিতি যথেষ্ট হলেও তরুণীদের অংশ নেওয়াতে বেশ বেগ পেতে হলো আয়োজকদের। এক প্রকার জোর করেই বেশ কয়েকজন মারমা তরুণীকে পানিখেলায় নিয়ে আসা হলো। বান্দরবানের জেলা প্রশাসক পানি ছিটিয়ে উদ্বোধন করেন উৎসবের। তাকে সবাই মিলে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দেয়। যেনো একটু বেশিই দেয়া হয়। প্রধান অতিথি বলে কথা! সাফারী পরা আমলা মশাই কাকভেজা হয়ে বোকার মতো হাসতে হাসতে মঞ্চে গিয়ে বসেন। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়ে গেলো। এবার একের পর এক পানি ছিটানোয় মাতোয়ারা হয়ে উঠলো তরুণ তরুণীরা। পানি উৎসব শেষ হওয়ার পর শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কয়েকটা গান উপভোগ করে আমাদের হোটেলে ফিরে আসতে হয়। ততক্ষণে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আজ জাহিদ, সুজন ও শামস চলে যাবে। সবকিছু গোছগাছ করাই আছে। আমি ও মাছুম রাত ৮টার বাসে তাদেরকে তুলে দিয়ে আসি। অবশ্য আগামীকাল সকালে ৪ জনের আরেকটি দল এসে এদের শূণ্যস্থান পূরণ করবে। দ্বিতীয় দলের গন্তব্য কেওক্রাডং অভিযাত্রা। 

রাতে আমি ও মাছুম আরেকবার পুরনো রাজবাড়ী মাঠে যাই। বেশ কয়েকটি গান শুনি মারমা শিল্পীদের কণ্ঠে। আধুনিক যন্ত্রাণুষঙ্গে গানগুলো গাওয়া হচ্ছিলো বেশ চড়া মেজাজে। দর্শক বেশ উত্তেজিত মনে হলো। রাত তখন ১১টা পেরিয়ে গেছে। মদিরার নেশা গানকে উচ্চগ্রামে নিয়ে গেছে নাকি গানের নেশাতেই শিল্পী ও দর্শকেরা এমন মাতোয়ারা বোঝা বড়ো মুশকিল। অবশ্য লক্ষ্য করলাম অন্ধকারে মাঠের বিভিন্ন স্থানে অনেক ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে দুচুয়ানি টেনে যাচ্ছে। গানের সাথে পানের মিলনটা মনে হলো ভালোই হয়েছে। রাত যতো বাড়ছে হৈ হুল্লোড়ও বেড়ে চলেছে। মাছুম বলে, ভাই চলেন হোটেলে ফিরে যাই। ঘণ্টাখানেক থেকে আমরা হোটেলের পথ ধরি। রাতে মাছুমের সাথে দীর্ঘক্ষণ নানা গল্পে সময় কাটাই। পাহাড়ের আরো গল্প হয়। সময়ের অগণন গল্পকে দূরে ঠেলে দিয়ে সামনে চলে আসে প্রেমের গল্প। গল্প নয় সত্যি। প্রেমকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় পরিবার, বন্ধু-বান্ধবসহ অনেক গল্প। প্রতিদিন যেমন প্রেমকে আরাধ্য করেই প্রেমহীন এই পৃথিবী ঘুমিয়ে যায়, আমরাও একসময় ঘুমিয়ে পড়ি। 

তারা//

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়